১। দেশটির ইতিহাস শুরু হয় ৩য় ও ৮ম খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে পূর্ব স্লাভদের মাধ্যমে যারা ইউরোপের একটি স্বীকৃত জাতি হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে ভারাঞ্জিয়ান যোদ্ধা ও তাদের বংশধরদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও শাসিত হয় এবং নবম শতকে দেশটির উত্থান শুরু হয়। ৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য থেকে গোঁড়া খ্রিস্টান রীতি গৃহীত হয়। অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত এই জাতিটি বিজয়, আত্মসাৎ এবং অন্বেষণের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ করে ইউরোপের পোল্যান্ড থেকে উত্তর আমেরিকার আলাস্কা পর্যন্ত যা ছিল ইতিহাসে তৃতীয় বৃহত্তম সাম্রাজ্য।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর সোভিয়েতের রুশীয় প্রজাতন্ত্র রুশ ফেডারেশন হিসেবে গঠিত হয় এবং একক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
২। এক কোটি ৭০ লাখ ৭৫ হাজার ২০০ বর্গ কিমি আয়তনের এই দেশটিতে প্রায় ১৪ কোটি ৪৪ লাখ ৬৩ হাজার মানুষের বসবাস। আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়া।
৩। রুশ ভাষা রাশিয়া বা রুশ প্রজাতন্ত্রের সরকারি ভাষা। এই ভাষায় রাশিয়ার প্রায় ৮০% লোক কথা বলে। এছাড়াও রাশিয়াতে আরও প্রায় ৮০টিরও বেশি ভাষা প্রচলিত আছে।
৪। খ্রিস্টধর্ম রাশিয়ার প্রধান ধর্ম। দেশটির প্রায় ৪৭% মানুষ খ্রিস্টধর্মে, ৬.৫% মানুষ ইসলাম ধর্মে এবং বাকিরা অন্যান্য বিচ্ছিন্ন কিছু ধর্মে বিশ্বাসী।
৫। মস্কো হচ্ছে রাশিয়ার রাজধানী এবং সর্বাধিক জনবহুল শহর। মস্কো রাশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের প্রধান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং বৈজ্ঞানিক কেন্দ্র এবং পাশাপাশি ইউরোপীয় মহাদেশের বৃহত্তম শহর।
মস্কো পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তরের এবং শীতলতম মেগাসিটি। এখানে ওস্তানকিনো টাওয়ার অবস্থিত, যা ইউরোপের দীর্ঘতম স্থাপত্য। এটি একইসাথে বিশ্বের ১৪তম বৃহত্তম নগর অঞ্চল এবং বিশ্বব্যাপী শহরের জনসংখ্যার তুলনায় ১১তম বৃহত্তম। ফোর্বস ২০১৮ এর মতে, মস্কো বিশ্বের নবম ব্যয়বহুল শহর হিসাবে স্থান পেয়েছে এবং এটি বিশ্বের বৃহত্তম নগর অর্থনীতির মধ্যে একটি। এটি বিশ্বের দ্রুত বর্ধমান পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যেও একটি।
৬। রাশিয়ার সীমান্ত এলাকা ২০,২৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ, যা বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সীমান্ত এলাকা।
৭। এই রাশিয়া যে কতো বিশাল তার ধারনা এখনও পাননি? তাহলে জেনে রাখুন, আয়তনের দিক দিয়ে এটি প্রায় প্লুটো গ্রহের সমান।
৮। ২০১১ সাল পর্যন্ত রাশিয়ায় বিয়ারকে অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় হিসেবে ধরা হতো না।
৯। প্রতি চারজনে একজন রাশিয়ান পুরুষ তার ৫৫তম জন্মদিনের আগে মারা যায়। আর এ মৃত্যুর অন্যতম কারণ অতিরিক্ত অ্যালকোহল।
১০। রাশিয়ায় পুরুষদের তুলনায় প্রায় ১ কোটি বেশি নারী আছে। ধারনা করা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অনেক পুরুষ মারা যাওয়ার ফলে এই ভারসাম্যতাহীনতার সৃষ্টি হয়। তবে আসল কথা হলো, দেশটিতে হতাশা, সড়ক দুর্ঘটনা এবং অতিরিক্ত পানাহার পুরুষদের মৃত্যুহার বাড়িয়েছে। বিষয়টি এখন রাশিয়ানদের কাছেও উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
১১। রাশিয়ায় পুরুষরা কখনোই মহিলাদের উপহার হিসাবে গোলাপ দেয় না। এটি এখানে দুর্ভাগ্যের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত, কারন এই ফুল অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সাথে যুক্ত।
১২। সর্বকালীন অলিম্পিক গেমসের পদক তালিকায় রাশিয়া দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। ১৯৮০ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ও ২০১৪ শীতকালীন অলিম্পিক রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ এখানে অনুষ্ঠিত হয়।
১৩। রাশিয়ার বৈকাল লেক এ বিশ্বের মোট অপরিশোধিত মিষ্টি পানির প্রায় ২০ শতাংশ রয়েছে এবং এই লেক এ প্রায় ১৭০০ প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী বসবাস করে, যার মধ্যে দু-তৃতীয়াংশ বিশ্বের অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
১৪। রাশিয়াই সাক্ষরতার হার খুবই উঁচু, এখানে প্রায় ৯৯.৭ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত।
১৫। রাশিয়ায় মোট ১২টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে।
১৬। ২০১১ সালে রাশিয়া বিশ্বের প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশ হয়ে ওঠে। এবং এটি প্রাকৃতিক গ্যাসের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদক।
১৭। রাশিয়ায় বিশ্বের দীর্ঘতম রেলপথ, ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলপথ অবস্থিত। এটি মস্কোকে রাশিয়ার পূর্বদিক পর্যন্ত সংযুক্ত করেছে। এটি ৯২২০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই রেলপথ দিয়ে পুরো যাত্রা শেষ করতে বিরতিহীন ভাবে প্রায় ১৫২ ঘন্টা ২৭ মিনিট লাগে।
১৮। রাশিয়াই বিশ্বের বৃহত্তম ম্যাকডোনাল্ড রেস্তোরাঁ অবস্থিত।
১৯। বেশিরভাগ রাশিয়ানদের জন্য ডান হাতে বিয়ের আংটি পরা একটি ঐতিহ্য।
২০। মস্কোতে বিশ্বের যেকোনো শহরের তুলনায় সবচায়তে বেশি বিলিয়নিয়ার এর বসবাস। এখানে মোট ৭৩ জন বিলিয়নিয়ার বাস করেন। এই দিক দিয়ে বিশ্বে প্রথম অবস্থানে আছে নিউইয়র্ক যেখানে ৮২ জন বিলিয়নিয়ার এর বাস।
২১। মদ পানের দিক দিয়ে রাশিয়ানদের অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ। ১ম, ২য় এবং ৩য় অবস্থানে আছে যথাক্রমে বেলারুশ, মোল্দাভিয়া এবং লিথুনিয়া।
২২। মস্কোর সেন্ট বাসিল এর গির্জা পোস্টনিক নামের এক ব্যাক্তি তৈরি করেছিলেন। এবং এই গির্জা তৈরি হয়ে যাওয়ার পর তাকে অন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে পরবর্তীতে সে এইটার সমকক্ষ কিছু তৈরি করতে না পারে।
২৩। স্টাচু অব লিবার্টির মেটাল ফ্রেমটি নির্মিত হয় রাশিয়ার ইকেটেরিনবার্গে।
২৪। ট্রাফিক জ্যাম এড়ানোর জন্য মস্কোর কিছু ধনী অ্যাম্বুল্যান্স চালান।
২৫। সোভিয়েত ইউনিয়নের নারীরা আমেরিকান নারীদের আগে ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার পান।
২৬। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের বদলে রাশিয়ানরা খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে কারণ তারা অ্যালকোহল বাদ দিতে চায়নি, যা ইসলামে নিষিদ্ধ।
২৭। একবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে কোনো জিনিস নিতে ভুলে গেলেও তা ফেরত নেওয়ার জন্য রাশিয়ানরা বাড়িতে ঢুকে না। তার বদলে অন্য কাউকে তা নিয়ে আসতে বলে। অন্যথায় এটি দুর্ভাগ্য বয়ে আনতে পারে বলে তাদের বিশ্বাস।
২৮। রাশিয়ার আয়তনের তুলনায় মাত্র ০.৮৪% আয়তনের রাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশ।
২৯। রাশিয়াতে এমন অনেক স্থান রয়েছে যা মানচিত্রে নেই। ধারণা করা হয়, গোপন ওই স্থানগুলো এতটাই বিশাল যে কানো কোনো শহরকেও সেটা হার মানাবে। মূলত সেসকল স্থানে পরমাণু, রাসায়নিক অস্ত্রের গবেষণা চলে বলে জানা যায়।
৩০। রাশিয়ার মোট ভূমির মাত্র ২২ শতাংশ জায়গায় জনসংখ্যা বাস করে।
৩১। রাশিয়ার সরকারী মুদ্রা রাশিয়ান রুবল। ১ রাশিয়ান রুবল সমান প্রায় বাংলাদেশী ১ টাকা ২৬ পয়সা।
৩২। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় ১.৬১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ১১,১৯১ মার্কিন ডলার।
৩৩। রাশিয়ার ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৭।