বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৬ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

রাজধানীর ‘মিনি’ কক্সবাজার

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

একপাশে বালি আর আরেক পাশে জল। বালিতে ছোট ছোট চৌকি। উপরে রং-বেরঙের প্লাস্টিকের ছাতা। পাশেই শরবতের দোকান। বেলপুরী, চটপটিওয়ালার হাঁকডাক। এই কুলফি, এই মালাই, এই বাদাম, এই চানাচুর, হরেক রকম ডাকাডাকি।

মোটরবাইকের ভোঁ ভোঁ আওয়াজ। জলে বাচ্চাকাচ্চা, শিশু-কিশোর থেকে সব বয়সিদের দাপাদাপি। ফুটবল, প্লাস্টিকের চাকা নিয়ে হুটোপুটি, ফটোসেশন, সেলফিবাজি। সূর্যের তাপ কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে মানুষের উত্তাপ। গায়ে হলুদের মঞ্চ থেকে সোজা চলে এসেছেন তারা।

কারো গালে কাঁচা হলুদ, কারো পোশাকে হলুদের ছোঁয়া। এ ওর গায়ে জল ছিটাচ্ছেন, হৈচৈ করছেন। সঙ্গে আনা ফুটবল নিয়ে মেতে উঠেছেন কেউ কেউ। ছেলে পক্ষের একজন সামিয়া বললেন, আমাদের বাড়ি এখানে, পাশেই, মান্ডায়। তাই গায়ে হলুদের মঞ্চ থেকেই ছুটে এলাম এই খোলা হাওয়ায় হৈচৈ করার জন্য।

এখানে একদিকে খোলা পরিবেশ, অন্যদিকে পানিতে লাফালাফি, ফুটবল খেলা- সবমিলিয়ে আনন্দ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ইট-পাথরে ঘেরা, পিচ ঢালা তপ্ত রাজপথে যেন একটু গ্রামীণ হাওয়া। রাজধানীর ভেতরেই আরেক ‘রাজ্য’। এ যেন চিরচেনা রাজধানীর এক অচেনা পরিবেশ। নেই বাসের কালো ধোঁয়া ছড়ানো বিকট হর্ণ।

ব্যস্ত নগরীর কর্মব্যস্ততা যেন থেমে আছে কোনো এক ভিন্ন রকম ছোঁয়ায়। রাজধানীর ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডভুক্ত এলাকাটির নাম মানিকদিয়া ধার্মিকপাড়া। ডেমরার কোনাপাড়া হয়ে কিংবা মুগদা-মান্ডা সড়ক এবং বাসাবো-কদমতলা সড়ক দিয়ে অনায়াসেই যাওয়া যায় সেখানে।

গত শুক্রবার সরজমিন দেখা যায়, বালির প্রান্তরে ডাব, চটপটি, ফুচকা, চা, শরবতের দোকান। অসংখ্য মানুষ এসেছেন দুদণ্ড অবসরে। কেউ ঘণ্টায় ৫০ টাকা ভাড়ায় চৌকি নিচ্ছেন, কেউ সদলবলে পানিতে লাফালাফি করছেন, কেউ ৫০ টাকায় ১৫ মিনিট নৌকা ভাড়া করে চড়ে বেড়াচ্ছেন, কেউ কেউ ফুটবল খেলছেন, আর কেউ কেউ ছবি তুলছেন। বেড়াতে আসা অনেকেই জায়গাটি ভালোবেসে নাম দিয়েছেন, ‘মিনি’ কক্সবাজার!

পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড থেকে এসেছেন শাহিনুর বেগম। বললেন, আগেও এসেছি দুইবার। অনেক ভালো লাগে। আবার আসব। ইংলিশ রোড থেকে এসেছেন তাসনুভা। বললেন, পরিবেশটা আরেকটু উন্নত করা প্রয়োজন। এখানে এলে সবাই পানিতে নামে, দাপাদাপি করে। কিন্তু পোশাক পরিবর্তন করার কোনো ব্যবস্থা নেই। যারা দূর থেকে আসে তাদের জন্য সমস্যা।

মান্ডা বড়পাড়ার বাসিন্দা মো. মুন্না চাকরি করেন প্রেসে। বললেন, অবসরে আসি। পরিবেশ ভালো। বিরক্তিকর পরিবেশ নেই। মো. মামুন চাকরি করেন। তিনিও সময় পেলেই বন্ধু-বান্ধবসহ ঘুরতে আসেন খোলা হাওয়ায়। উত্তরার বিউটিশিয়ান শান্তা। বন্ধুদের মুখে এই এলাকার গল্প শুনতে শুনতে শুক্রবার এসেছিলেন। নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ হয়েছে তার। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নবীন এসেছে স্কুল বন্ধুদের সঙ্গে। ফুটবল নিয়ে জলে নেমেছে। ঘণ্টাখানেক জলে ফুটবল খেলার ইচ্ছে তাদের। খেলা করতে পেরে খুব খুশি সে।

ঢাকাবাসীর অবসর সময় কাটাতে যাওয়ার এই স্থানকে ঘিরে কিছু মানুষের আপাতত অন্নসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সারোয়ার হোসেন থাকেন যাত্রাবাড়ী। সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এখানে বেলপুরী বিক্রি করেন। জানালেন, প্রতিদিন ১৫০০ টাকার মতো বিক্রি হয়।

শরবত বিক্রেতা মো. ইসমাইল হাওলাদার বলেন, দিনে হাজার টাকা বিক্রি হয়। আগে বিক্রি বেশি হতো। এখন প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে। লেকের পাড়েই ২০টি চৌকি ও চায়ের দোকান রয়েছে সীমান্তর। তিনি জানালেন, শুক্রবারে মানুষ বেশি হয়। পরিবেশ ভালো। মালিকানাধীন জায়গা। কিছুদিন পর বালু দিয়ে ভরাট হয়ে যাবে শুনেছি। তখন আর এই পরিবেশ থাকবে না।

দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, অনেকেই বেড়াতে আসেন। জায়গাটি আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের। পানি জমে লেকের মতো আকার ধারণ করেছে। ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ খোলা হাওয়ায় বেড়াতে আসেন। শুক্রবার শনিবারে লোক সমাগম বেশি হয়। আমিও একবার গিয়েছি। আপাতত এটি নিয়ে আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com