রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

যে ১৫টি কারণে ইন্দোনেশিয়া হতে পারে আপনার পরবর্তী ভ্রমণ ঠিকানা

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২১

অন্য দশজন সাধারণ মানুষের মত প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অবকাশ যাপন ঠিকানার তালিকায় রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের নাম। আয়ুং নদীতে ভেলায় চড়ে ভেসেছেন, ঘুরে বেড়িয়েছেন জেসিলুই রাইস ট্যারেস এরপরই গিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায়। তবে শুধু ওবামা গিয়েছেন বলেই নয়, আজ আপনাদের আরো ১৫টি কারণ জানাবো, কেন ইন্দোনেশিয়া হতে পারে আপনার পরবর্তী ভ্রমণ ঠিকানা?

১. জনপূর্ণ জাকার্তা
এক কোটি মানুষের ৬৬১ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত এক শহর এই জাকার্তা। যার অলিতে গলিতে রন্ধন শিল্প আর সংস্কৃতি বিপুল সমাহার। ২০১৫ তে টেলিগ্রাফ ট্রাভেলের পাতায় লিখতে গিয়ে এভাবেই জাকার্তার বর্ণনা দিয়েছেন সিমন পার্কার।
প্রাচীন বাতাভিয়ার পথ আপনাকে নিয়ে যাবে ইন্দোনেশিয়ার ডাচ ঔপনিবেশিক অতীতে। অন্যদিকে আধুনিক মেন্টাং জেলায় ঢুকলেই আপনার কানে ভেসে আসবে গানের আসরের মূর্ছনা। বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ আর হোটেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এখানে সেখানে। আকাশচুম্বী একেকটা দালানের চূড়ায় চোখে পড়বে বিশ্বের প্রখ্যাত নানান রেস্টুরেন্ট, বার এবং নাইটক্লাব। শপাহলিকদের চাহিদা মেটাতে রয়েছে প্রকাণ্ড সব বিপণীবিতান।

২. বৃহত্তম সরীসৃপ গিরগিটি কমোডো
বিশ্বের বৃহত্তম সরীসৃপ গিরগিটি কমোডোর দেখা মেলে শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়ার কমোডো, রিনকা, ফ্লোরস, গিলি মোটাং, এবং পাদর এই দ্বীপপুঞ্জ গুলোতে। এরা সত্যিকার অর্থেই ভয়ঙ্কর দেখতে। বিষাক্ত এই গিরগিটির ৬৮ কিলোগ্রাম পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। এদের বিষ মানুষ সহ বিশাল আকৃতির প্রাণীদের ঘায়েল করতে যথেষ্ট। কমোডোর বিষ খুব সামান্য সময়ের মধ্যেই এর শিকারের হৃদযন্ত্র অকেজো করে ফেলতে পারে। এরা সাপের মত চেয়াল প্রসারিত করে নিজের থেকে আকারে বড় শিকারকেও গিলে ফেলতে পারে। এসব দীপপুঞ্জে গেলে আপনার মনে হবে আপনি জুরাসিক পার্ক সিনেমার কোন দৃশ্য দেখছেন। কমোডোর নিজের বুকে নিজে হাত চাপড়ানো দেখলে মনে হতে পারে যেন এদের দেখেই কিংকং সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছে।

৩. দু:সাহসিক সুমাত্রা
যারা বন্য পরিবেশে উপভোগ করেন তাদের জন্য জনমানবহীন সুমাত্রা হতে পারে ইন্দোনেশিয়ার প্রধান আকর্ষণ। বেশিরভাগ পর্যটকরা চলে যান বুকিত লুয়াং এর ওরাঙ্গুটাং অথবা উত্তর টাংকাহানের রেইনফরেস্ট দেখতে। যে বনের পাহারায় রয়েছে বিশাল হাতির দল। করা স্বাদের সুমাত্রান কফিতে চুমুক দিতে দিতে ভাবতে পারেন সারাদিন কি কি করার আছে এই বনে। কেরিঞ্চি সেলবাত ন্যাশনাল পার্কে দেখা মিলবে বাঘের সাথে। আর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে চোখে পড়তে পারে সুমাত্রান গন্ডার। বেরাস্তাগি আগ্নেয়গিরির আশেপাশে হাইকিং করতে পারেন। তাবু খাটিয়ে কিছু অলস সময় কাটাতে পারেন তোবা লেকের পাশে। পুলাউ ওয়ের তলদেশে ডাইভিং করতে পারেন। যেখানে দেখতে পাবেন বিশাল আকারের তিমি প্রজাতির হাঙ্গর। মেন্টওয়াই দ্বীপপুঞ্জ কিংবা পুলাউ নিয়াস হতে পারে আপনার সার্ফিং ঠিকানা।

এক নজরে ইন্দোনেশিয়া
জনসংখ্যা: ২৫৫,৪৬১,৭০০ (বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম)
আয়তন: ৭৩৫,৩৫৮ বর্গমাইল (১৫ তম)
জিডিপি: $ ২.৮৪০ ট্রিলিয়ন (৮ম)
দ্বীপপুঞ্জ সংখ্যা: ১৩,৪৬৬
দৈর্ঘ্য: পূর্ব থেকে পশ্চিমে ৩,১৮১ মাইল, এটি বিশ্বের দীর্ঘতম দ্বীপপুঞ্জ
সর্বোচ্চ পয়েন্ট: ৪,৮৮৪ মিটার (পুনকাক জায়া)
বৃহত্তম হ্রদ: ৪৪২ বর্গ মাইল (লেক টোবা)
বার্ষিক দর্শনার্থী: ৯,৪৩৫,০০০

৪. বিশ্বমানের ডাইভিং
ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, পাপুয়া নিউ গিনি, টিমোর লেস্টে এবং সলোমন দ্বীপপুঞ্জের জলসীমার সমন্বয়ে গঠিত কোরাল ট্রায়েঙ্গেল বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ডাইভিং করার জায়গা। পৃথিবীতে যত রকমের প্রবাল রয়েছে তার ৭৫ ভাগের দেখা মিলবে এখানকার পানির নিচে। যার মধ্যে রয়েছে ২০০০ প্রজাতির মাছ।

৫. জাভা দ্বীপের মন্দির ও পর্বতমালা
এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দ্বীপ বললেও মনে হয় ভুল হবে না। প্রায় ১৪ কোটি মানুষের বাসস্থান এই জাভা। তবে ভয়ের কোন কারণ নেই, এখানে ঢাকার মত মানুষ গিজগিজ করবে না। কারণ আয়তনের দিক থেকেও বিশাল এই জাভা দ্বীপ। ইউনেস্কো তালিকাভুক্ত উজুন কুলন সহ ১২টি ন্যাশনাল পার্ক রয়েছে এখানে। হাইকিং করার জন্য ব্রোমো এবং মেরাপির মত আগ্নেয়গিরিও রয়েছে।

৬. স্বর্গীয় বালি দ্বীপ
পৃথিবীর খুব কম জায়গাতেই একাধারে আধ্যাত্মিকতা পাশাপাশি ভোগ বিলাস ও আনন্দ ফুর্তির সুযোগ খুঁজে পাওয়া যায়। বালি সেই খুব কম জায়গার মধ্যে একটি। ধর্মভীরু তরুণদের দেখাও মিলবে এখানে আবার বেলা পড়লেই মদ হাতে নিয়ে মাতাল হওয়া মানুষও দেখবেন চোখের সামনেই। এই দ্বীপের সাংস্কৃতিক রাজধানী নামে পরিচিত উবুদে রাস্তার মোড়ে মোড়েই দেখতে পাবেন নাচ গানের আসর। পাশাপাশি দেখতে পাবেন কাঠের তৈরি জিনিস, রুপার তৈরি জিনিস, পোশাক, চিত্রকর্ম এবং ভাস্কর্যের দোকান। ধান ক্ষেতের পাশেই রয়েছে ট্রেকিং, শহরের উত্তরে রয়েছে আগুং বাটুর নামের দুইটি আগ্নেয়গিরি। বালি বারাট জাতীয় উদ্যান হল বন্য হরিণ, শুকর ও ম্যাকাক নামের বানরের জন্য অভয়ারণ্য। ডাইভ করতে চাইলে যেতে পারেন মেনজাঙ্গান দ্বীপে।

৭. অবিশ্বাস্য সব হোটেল
বিলাসবহুল হোটেলের জন্য যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে বালির। সায়ানে অবস্থিত ফোর সিজন্স রিসোর্ট, আলীলা ভিলাস উলুওয়াতু, কমো শাম্বালা এস্টেট আর সেমিনিয়াকে অবস্থিত ওবেরয় এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

৮. লম্বক
কোটি কোটি মানুষ প্রতিবছর বালিতে যায় মনোরম সৈকত দেখতে। কিন্তু বালির ঠিক ৩০ মাইল পূর্বে রয়েছে স্বল্পপরিচিত লম্বক দ্বীপ। যেখানে আপনি পাবেন হুবহু বালির সৌন্দর্য। শুধু আপনাকে ভিড় ঠেলতে হবে না। প্রবালে আবৃত গিলি দ্বীপপুঞ্জ, পাহাড়, দর্শনীয় সৈকত আর সার্ফিং এর জন্য এটি বিখ্যাত। কিছুদিন আগে পর্যন্ত এখানে গুটিকয়েক পর্যটক যেত তাদের খরচ কমাতে। তবে ইদানীং লম্বকের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তৈরি হচ্ছে রিসোর্ট, লজ, স্পা ইত্যাদি। তবে এখনো এখানে গেলে ভবঘুরে একটা আমেজ পাবেন আপনি। বাই সাইকেল আর কিমোডোস নামের ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া অন্য কোন যানবাহনের দেখা মেলে না এখানে।

৯. কালিমানটান আদিবাসী উপজাতি
ভিক্টরিয়ান যুগ থেকেই যারা রোমাঞ্চ ভালবাসের তাদের মধ্যে জনপ্রিয় বোর্নিও নামের বন্য দ্বীপ। এই দ্বীপের মূল আকর্ষণ গুলো হল রেইনফরেস্ট, আদিবাসী উপজাতি ও তানজং পুটিং জাতীয় উদ্যানের অরাঙ্গুটান।

১০. দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম জাতীয় উদ্যান
ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া দ্বীপে অবস্থিত লোরেন্তজ ন্যাশনাল পার্ক। যার আয়তন ৯৬৭৪ বর্গমাইল অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট তালিকায়। যা ম্যানগ্রোভ, রেইনফরেস্ট, আলপাইন টুনড্রা এবং ইকোটোরিয়াল গ্লাসিয়ার্সের মত বিশাল বিশাল ইকোসিস্টেমের জন্মস্থান বলে পরিচিত। এর সর্বোচ্চ স্থান পুনকাক জায়া হিমালয় এবং আন্দিস পর্বতমালার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। ১২৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ৬৩০ প্রজাতির পাখি রয়েছে এখানে। যার বেশিরভাগ এখানকার স্থানীয়। পার্কের বেশিরভাগ জায়গা এখনো অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। তাই বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস আরও অনেক প্রজাতির প্রাণী ও পাখি হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে সামনে।

১১. পূর্বের প্যারিস বলে খ্যাত
অনেক শহরকেই এই নামে ডাকা হয়। এর মধ্যে জাভা দ্বীপের বান্ডুং একটি। এর শীতল জলবায়ুর টানে জাকার্তার বাসিন্দারা ছুটির অবসর কাটাতে চলে আসেন এখানে। বেড়াতে আসার আরও একটি কারণ এর আধুনিক বুটিকের দোকান ও আধুনিক সব স্থাপনা।

১২. সাংস্কৃতির কেন্দ্র বিন্দু
জাভার আরেক শহর ইউগ্যকার্তা। যেটি সাংস্কৃতিক এবং আধ্যাত্মিক দিক থেকে জনপ্রিয়। ছায়া-পুতুল নাচ, কনসার্ট এবং শিল্প প্রদর্শনীর জন্য এই শহরের সুনাম রয়েছে। এখানে আরও দেখতে পাবেন বোরোবুদুর, প্রব্বানান হিন্দু মন্দির, বিষ্ণু, শিব ও ব্রহ্মা মন্দির ও এদের ঘিরে শত শত ছোট মন্দির।

১৩. মন্দির
এখানে যত মন্দির রয়েছে তা একজীবনে দেখে শেষ করা সম্ভব না। বোরোবুদুর ও প্রব্বানান সবচেয়ে বেশি পরিচিত হলেও এখানে বড় ছোট আরও শত শত মন্দির রয়েছে।

১৪. বিশ্বের সবচেয়ে দর্শনীয় লাইটহাউস
লেঙ্কুয়াস দ্বীপের ১২ তলা বিশিষ্ট এই লাইটহাউস ১৮৮২ সালে ওলন্দাজরা নির্মাণ করেন। এখানে যেতে আপনাকে তানজুং কেলেয়াং থেকে নৌকায় চড়তে হবে।

১৫. অল্প খরচে ভ্রমণ
সবশেষে বললেও বাংলাদেশের ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল খরচ। দর্শনীয় স্থানের কথা মাথায় রেখে ভাবতে গেলে এই খরচে পৃথিবীর আর কোথাও ভ্রমণ সম্ভব নয়। এমনকি থাইল্যান্ড, মায়ানমার, কম্বোডিয়া, এবং ভিয়েতনামের থেকেও ইন্দোনেশিয়াতে থাকা খাওয়ার খরচ কম।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

Like Us On Facebook

Facebook Pagelike Widget
© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com
%d bloggers like this: