ন্ত্রিক এই নগর থেকে মাঝে মাঝে অনেকেরই গ্রামে চলে যেতে মন চায়। কোলাহল মুক্ত একটি গ্রাম। যেখানে নেই কোন উঁচু অট্টালিকা, ভারী যানবাহন, অসংখ্য মানুষ। ঠিক এমনই একটি গ্রামের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে ভারতের আসাম রাজ্যে।
এই রাজ্যের নলবাড়ী শহরের মেডিকেল কলেজ থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে একটি গ্রাম আছে। গ্রামটির নাম বর্ধনারা। এই গ্রামে যাওয়াটা বেশ কষ্টসাধ্য। কারণ গ্রামটিকে শহরের সাথে সংযুক্ত করার কোনও রাস্তা নেই।
বর্ধনারা ভারতের সবচেয়ে প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর মধ্যে একটি। এই গ্রামে কেবল মাত্র একটি পরিবার বাস করে। পরিবারের প্রধানের নাম বিমল ডেকা। তিনি প্রায় চল্লিশ বছর ধরে এই গ্রামে বাস করেন। বসবাসের জন্য রয়েছে একটি কাঁচা বাড়ি। তার স্ত্রীর নাম অনিমা। তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে- নরেন, দীপালি ও সেউতি। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এই গ্রামটিতে প্রায় ১৬ জন মানুষ ছিল। বর্তমানে তা পাঁচজনে দাঁড়িয়েছে।
ডেকা, গ্রামের রাস্তার ব্যাপারে আক্ষেপ করে জানিয়েছেন যে, “আমি গত ৪০ বছর ধরে এই গ্রামে আছি। এখানে আরও কয়েকজন গ্রামবাসী ছিল। কিন্তু তারা চলে যায়। স্থানান্তর করার মতো সম্পদ না থাকায় আমি যেতে পারিনি। আমাদের যাতায়াত এবং নিকটতম বাজার বা অফিসে পৌঁছানোর জন্য একটি নৌকা রয়েছে। প্রকৌশলী এবং স্থানীয় পর্যায়ের কর্মকর্তারা বহুবার আমাদের গ্রামে এসেছিলেন। তারা রাস্তার জন্য জমি পরিমাপ করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, রাস্তাটি তৈরি করা যায়নি। আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধি আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি”।
এই গ্রামে ঘুরতে গেলে পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সেউতি আপনাকে স্বাগত জানাবে। সেউতি তার গ্রামের জন্য কেবল মাত্র একটি রাস্তা চায়। সে জানিয়েছে, “আমাদের গ্রামে কোনও রাস্তা নেই। বর্ষাকালে, আমরা নৌকায় যাতায়াত করি। শুকনো সময়ে আমরা স্কুলে যাই। আমি মাঝপথে সাইকেল চালাই। তারপর নৌকায় চড়ে স্কুলে যাই। আমাদের গ্রামে একটি রাস্তা খুবই দরকার”।
বর্ষাকালে, অনিমা তার বাচ্চাদের স্কুলে পৌঁছাতে নৌকা চালান। এরপর তাদেরকে নিকটতম রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে আসেন। যেখান থেকে তারা পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে পারে। এত কষ্টের জীবন হওয়া সত্ত্বেও তাদের বড় ছেলে ও মেয়ে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী।
ডেকা ও তার পরিবার এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়াই এই গ্রামে বসবাস করছেন। সরকারী প্রকল্প, অরুণোদয় পরিবারটিকে নানা ভবে সাহায্য করছে।
আসামের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুরাম মেধি কয়েক দশক আগে বর্ধনারা গ্রাম পরিদর্শন করেছিলেন। তিনি কৃষি উৎপাদনের জন্য পরিচিত। তার মতে, “আমি কৃষিজমিতে চাষাবাদ করি। পশু পালন করি। এটাই আমাদের আয়ের একমাত্র উৎস। আমি বিশ্বাস করি যে, এই গ্রামে খুব শীঘ্রই একটি রাস্তা তৈরি হবে। যা কিনা গ্রামটিকে তার অতীত গৌরব ফিরে যেতে সাহায্য করবে”।
তথ্যসূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া