যেখানে দেখা মেলে মেঘের লুকোচুরি

রূপের রাণী বলা হয়- পাহাড়-অরণ্য-হ্রদ ঘেরা রাঙামাটিকে। যেখানে প্রকৃতি সারা বছর ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন রূপ ধারণ করে।

‘ফুরোমন’ শব্দটি চাকমা ভাষা। যার বাংলা অর্থ- ফুরফুরে। ফুরোমন পাহাড় অর্থ দাঁড়ায় ফুরফুরে পাহাড়। পাহাড়টিতে গেলে মন ফুরফুরে হয়ে যায় বলে চাকমা জনগোষ্ঠি পাহাড়টির নামকরণ করেছে ফুরোমন পাহাড়। পাহাড়টির উচ্চতা এক হাজার ৫১৮ ফুট। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ২ হাজার ৬০০ ফুট উঁচু।

পাহাড়টিতে উঠতে পারলে এর সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হবে না এমন লোক পাওয়া ভার। তবে পাহাড়টিতে উঠতে হলে আপনাকে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হবে। পার হতে হবে প্রায় চারশ’র কাছাকাছি সিঁড়ি। স্থানীয় পাহাড়িরা পাহাড়ের চূড়ায় মন্দির স্থাপন করায় স্থানীয় প্রশাসন মন্দিরে যাতায়াতের সুবিধার্থে সিঁড়ি নির্মাণ করে দেয়।

বর্তমানে ফুরোমন পাহাড়টি স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। পাহাড়টিতে উঠলে দেখা যাবে সবুজের সমারোহ, কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জলরাশির খেলা, সোনালি রঙের বৌদ্ধ মূর্তি। শীতল বাতাসে উপভোগ করা যাবে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়। পাহাড়ের দক্ষিণ-পশ্চিমে চট্টগ্রাম শহর, বন্দরে ভাসমান জাহাজের মাস্তুল, রাঙামাটির রাঙা রূপ। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে অজানা অসংখ্য ফোটা ফুল মনকে পুলকিত করে তুলবে। দুঃখ, উদাসীনতা ভোঁ দৌড় দেবে।

পাহাড়টির আরেকটি গোপন সৌন্দর্য হলো- মেঘের লুকোচুরি খেলা। সাজেকে যেমন মেঘের উপত্যকার দেখা মেলে তেমনি ফুরোমন পাহাড়েও দেখা মিলবে মেঘের এমন চিত্র। আর এ রূপ দেখতে হলে আপনাকে অবশ্যই খুব ভোরে সেখানে যেতে হবে।

পাহাড়টির এমন সৌন্দর্যের কথা মাথায় নিয়ে স্থানীয় পর্যটক সংশ্লিষ্টরা এখানে কিভাবে পর্যটন স্পট গড়ে তোলা যায় এমন চিন্তায় বিভোর। পর্যটকদের আকর্ষণ করতে তারা নতুন নতুন উদ্যোগ হাতে নিচ্ছেন। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে গড়ে তুলবেন পর্যটন স্পট।

রাঙামাটি হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনুদ্দীন সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, রাঙামাটি হলো- প্রকৃতির সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এমন প্রকৃতিকে ঢেলে সাজাতে পারলে মানুষ বিদেশে না যেয়ে পাহাড়ি এ জেলায় ছুটে আসবেন। এজন্য পরিকল্পিত পরিকল্পনার প্রয়োজন। তবেই এ জেলা দেশের মধ্যে অন্যতম পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে।

তিনি আরও বলেন, ফুরোমন পাহাড়টির সৌন্দর্যের কথা জানি। বাইরের মানুষ তো তা জানে না। এজন্য পাহাড়টি নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। যদি স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা পাওয়া যায় এবং নিরাপত্তা জোরদার করা যায় তাহলে আমরা পরিকল্পিত পর্যটন স্পট গড়ে তুলতে উদ্যোগী হবো।

রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘ফুরোমন পাহাড় নিয়ে জেলা পরিষদের চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। আগামী অর্থ বছরে পাহাড়টি নিয়ে কিছু করার চিন্তা আছে। যদি সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি তাহলে সেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগানো হবে।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, রাঙামাটিকে পর্যটন নগরী গড়ে তুলতে জেলা পরিষদ বদ্ধপরিকর। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি জন্মলগ্ন থেকে কাজ করছে।

যেভাবে যাবেন:

ঢাকার ফকিরাপুল এবং সায়দাবাদে রাঙামাটিগামী এসি ও নন-এসি বাস রয়েছে। এই বাসগুলো সাধারণত সকাল ৮টা থেকে ৯টা এবং রাত সাড়ে ৮টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে রাঙামাটির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এসব বাসে চেপে যেতে হবে রাঙামাটি শহর। রাঙামাটি শহর থেকে অটোরিকশায় করে চলে যাবেন জেলা সদরের সাপছড়ি শালবাগান পুলিশ ফাঁড়ি। একটু সামনে দেখবেন বড় সাইনবোর্ডে লিখা আছে বৌদ্ধমূর্তি স্থাপনের জন্য নির্ধারিত স্থান। তার পাশ ঘেঁষে পাহাড়ি রাস্তা ধরে চলে যাবেন ফুরোমন পাহাড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: