যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের গণ ডিপোর্টেশনে ফেডারেল ইমিগ্রেশনের অভিযানে ৭, ২৬০ জনকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার ইউএস ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এর এক্স পোস্টে গ্রেপ্তারের এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ২৩ জানুয়ারী থেকে ৩১ জানুয়ারি শুক্রবার পর্যন্ত দৈনিক গ্রেপ্তারের সংখ্যা এক্স পোস্টে প্রকাশ করেছে। সেই হিসেবে ৯ দিনে গড়ে ৮২৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
গত সপ্তাহে সীমান্ত জার টম হোম্যান একটি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন দৈনিক ১০ হাজার অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তারের লক্ষ্যমাত্রা তাদের।
২৩ জানুয়ারি ৫৩৮ জন, ২৪ জানুয়ারি ৫৯৩ জন, ২৫ জানুয়ারি ২৮৬ জন, ২৬ জানুয়ারি ৯৫৬জন, ২৭ জানুয়ারি ১১৭৯ জন, ২৮ জানুয়ারি ৯৬৯ জন, ২৯ জানুয়ারি ৯৬২ জন, ৩০ জানুয়ারি ৯১৩ জন, ৩১ জানুয়ারি ৮৬৪ জন অবৈধ ও অপরাধী অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এনওয়াই পোস্ট জানিয়েছে, আইস স্থানীয় গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৫,৭৬৩ জন ‘‘বন্দী’’ রাখার জন্য মামলা দায়ের করার কথা কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছে। আর নির্বাসনের জন্য অভিবাসীদের তাদের দেশে ফিরিয়ে দিতে বলা হয়।
আইস জানিয়েছে, নিউইয়র্ক সিটি, শিকাগো এবং বোস্টনের মতো অভয়ারণ্য শহরগুলিকে কেন্দ্র করে এই অভিযান চালানো হয়েছে এবং যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মধ্যে ধর্ষণ, অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধ এবং বন্দুক ও মাদক অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত অবৈধ ব্যক্তিরা রয়েছেন।
আইস গ্রেপ্তার হওয়া কয়েক ডজন অভিবাসীর সম্পর্কে সীমিত তথ্য সরবরাহ করেছে। যাদের সবাই পূর্বে অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল এবং ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছিল।
তাদের মধ্যে রয়েছে জোসে ওর্তেগা রামিরেজ, যিনি পূর্বে শিশু পর্নোগ্রাফি এবং মাদক রাখার অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার পরে মঙ্গলবার ফিলাডেলফিয়ায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সাইদজান হিসেন সালিহ যিনি মঙ্গলবার সান দিয়েগোতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি হামলা, মাদক ও চুরির অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন।
এর আগে এবিসি নিউজকে টম হোমান বলেছেন যে প্রশাসন বর্তমানে শুধুমাত্র সহিংস অবৈধ বহিরাগতদের লক্ষ্যবস্তু করছে। দৈনিক গ্রেপ্তারের হার এর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হোম্যান বলেন, এক হাজার কিংবা তার কিছু বেশি গ্রেপ্তার এটা যথেষ্ট নয়। আমরা দৈনিক ১০ হাজার জনকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্য রেখেছি। আইস সহ আইন প্রয়োগকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। কিছুদিনের মধ্যে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যমাত্রা দেখতে পারবেন।
আইস এর তত্ত্বাবধানকারী হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম বলেছেন যে ফেডারেল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ অভিযানে ‘‘সবচেয়ে খারাপ ও অপরাধী’’ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করছে।
ট্রেন ডি আরাগুয়া এবং এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সহিংস সদস্যদেরও সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বর্ডার প্রধান টম হোম্যান বলেছেন, প্রশাসন বর্তমানে শুধুমাত্র সহিংস অবৈধ অভিবাসীদের লক্ষ্য করছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম বলেছেন, আমরা ‘সবচেয়ে খারাপ’ অপরাধীদের গ্রেপ্তার করছি। তিনি বলেন, এই গ্রেপ্তারের ফলে রাস্তাগুলো আরও নিরাপদ হয়েছে।
অনেক আইসিই অভিযান অন্যান্য ফেডারেল সংস্থা যেমন ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি (ডিইএ), অ্যালকোহল, তামাক, আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক ব্যুরো (এটিএফ) এবং ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) সঙ্গে একযোগে পরিচালিত হয়েছে।
নোয়েম নিউইয়র্ক সিটিতে একটি অভিবাসন অভিযানে যোগ দেন। যেখানে কর্মকর্তারা ২৬ বছর বয়সী আন্দারসন জাম্ব্রানো পাচেকোকে গ্রেপ্তার করেন। তাকে সহিংস ট্রেন ডি আরাগুয়া গ্যাংয়ের নেতাদের একজন হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। জাম্ব্রানো পাচেকো সেই ব্যক্তি, যাকে গত গ্রীষ্মে কলোরাডোর অরোরায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে সশস্ত্র লোকদের দ্বারা দরজা ভাঙার একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে।
গুয়াতেমালার নাগরিক এবংএমএস-১৩ গ্যাংয়ের সদস্য লুইস আদোলফো গেরা পেরেজকে (১৯) আইসিই গত সপ্তাহে ম্যাসাচুসেটসে গ্রেপ্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে অঙ্গরাজ্য অস্ত্রের অভিযোগ ছিল। বোস্টন আদালত তাকে আগেই বিতাড়নের নির্দেশ দিয়েছিল। তবে পরে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
আইস ৬০টিরও বেশি মামলার বিবরণ প্রকাশ করেছে। হোয়াইট হাউসের এক্স অ্যাকাউন্টে অন্তত ২০টি মামলার বিবরণ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে ৭ হাজার ৪১২ জনের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠের অপরাধমূলক ইতিহাসের বিস্তারিত তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।
এই গ্রেপ্তারের সংখ্যা এমন সময়ে এসেছে যখন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ নিশ্চিত করেছেন যে, ‘সবচেয়ে খারাপ অপরাধী’ অভিবাসীদের অস্থায়ীভাবে গুয়ান্তানামো বে বন্দিশিবিরে রাখা হবে এবং মাদক চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের জন্য ‘সব ধরনের বিকল্প খোলা থাকবে।
হেগসেথ শুক্রবার ফক্স অ্যান্ড ফ্রেন্ডসে একটি সাক্ষাৎকারে এই ঘোষণা দেন, যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বুধবারের ঘোষণার পর আসে। সেখানে তিনি পেন্টাগনকে ৩০ হাজার ‘অপরাধী অবৈধ অভিবাসী’ আটকানোর জন্য গুয়ান্তানামো বে প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।