1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
যুক্তরাষ্ট্রের নন সিটিজেনরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠালে দিতে হবে কর
বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৩:২৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

যুক্তরাষ্ট্রের নন সিটিজেনরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠালে দিতে হবে কর

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে নন সিটিজেন অভিবাসীরা নিজ দেশে রেমিট্যান্স পাঠালে দিতে হবে কর ৫ শতাংশ কর। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড এমন একটি প্রস্তাব হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ এ রিপাবলিকানরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিল আকারে পাসের জন্য যুক্ত করেছেন। চলতি মাসে বিলটি অনুমোদন পেলে আগামী জুন অথবা জুলাই মাসে এটি কার্যকর হতে পারে। এটি কার্যকর হলে রেমিট্যান্স প্রেরণকারীরা বিপাকে পড়তে পারেন এবং বাংলাদেশ-ভারতসহ রেমিট্যান্স নির্ভর বিভিন্ন দেশে এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এছাড়াও বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণে অনেকেই নিরোৎসাহিত হতে পারেন। এমনটি ধারণা বিশ্লেষকদের।

এদিকে সম্প্রতি ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি একটি প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডাম চূড়ান্ত করছেন। যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে থাকা ব্যক্তিদের রেমিট্যান্স পাঠানোর সুযোগ পুরোপুরি বন্ধ করা হবে।

দ্য এসোসিয়েট প্রেস ‘এপি’র প্রতিবেদনে রেমিট্যান্স বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে বলা হয়, এ ধরনের কর আরোপ বা নিষেধাজ্ঞা দিলে যে সমস্ত পরিবার রেমিটেন্সের ওপর নির্ভর করে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উল্টোভাবে আরো বেশি অবৈধ অভিবাসনকে উসকে দিতে পারে। এমনকি এ কর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অভিবাসী ৪ কোটিরও বেশি মানুষকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে। নন সিটিজেন গ্রিন কার্ডধারী এবং এইচ-১বি, এইচ-২এ, ও এইচ-২বি ভিসাধারীরা অন্তর্ভুক্ত।

টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রতিবেদনে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স প্রেরণে কর কার্যকর হলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে ভারতীয় অভিবাসীদের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৫ লক্ষ ভারতীয় রয়েছেন, যার মধ্যে ৩২ লক্ষ ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং তাদের কয়েক লক্ষাধিক নন সিটিজেন। এসব বসবাসরত এবং কাজ করা লক্ষাধিক ভারতীয়, যারা নিয়মিতভাবে দেশে অর্থ পাঠান। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রায় ৩২ বিলিয়ন ইউএস ডলার।

অপরদিকে বাংলাদেশে গত কয়েক মাসে রেকর্ড রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। এরমধ্যে গত জানুয়ারি থেকে টানা সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠানোর তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র স্থান করে নিয়েছে। গত মার্চ মাসে রেকর্ড ৫৪ কোটি ৬১ লাখ ৩০ হাজার ডলার যায় বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। কয়েক লাখ বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত অভিবাসী রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। যার বৃহৎ একটি অংশ নন সিটিজেন হিসেবে এদেশে অবস্থান করছেন। কর কার্যকর হলে রেমিট্যান্স খাতে বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশী প্রবাসীদের মধ্যে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রয়া সৃষ্টি হয়েছে।

নিউইয়র্কে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশি আবুল কালাম ১৫ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। নিউ জার্সির একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করেন দৈনিক ১০-১২ ঘণ্টা। নিজের খরচ বাঁচিয়ে প্রতি মাসেই কিছু ডলার পাঠান গ্রামের বাড়িতে, তার পাঠানো অর্থেই চলে গ্রামের বাড়ির সংসার, মেয়ের পড়াশোনা, ছোট ভাইয়ের ওষুধ। পরিবারে তিনজন নির্ভরশীল — সবাই রেমিট্যান্সনির্ভর। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে প্রস্তাবিত একটি আইনের খবরে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আবুল কালাম। আবুল কালাম বলেন, “যদি এই কর বসে, আমাদের মতো প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়বে। আর দেশে আমার মা, মেয়েরাও।”

বাংলাদেশের উন্নয়ন সংগঠক রাশিদা আখতার বলেন, “প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ কেবল ভোগের জন্য নয় — এই টাকায় গ্রামে ঘর তৈরি হয়, কৃষিকাজে বিনিয়োগ হয়, ছেলে-মেয়ে স্কুলে যায়। ট্যাক্স আরোপ করলে এই জীবনচক্রটাই ব্যাহত হবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সাবেক উপপরিচালক বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে কর বসানো হলে বৈধ পথে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা কমে যাবে। হুন্ডির মতো অবৈধ চ্যানেল আবার সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে, যা বাংলাদেশে অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ হবে।”

রেমিট্যান্সের উপর কর আরোপ হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো। এসব দেশের বহু পরিবার নির্ভর করে আমেরিকায় দিনরাত শ্রম দেওয়া একজন পরিবারের সদস্যের উপর। ল্যাটিন আমেরিকার অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব মানবিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যকেও নাড়া দিতে পারে বলে উদ্বেগ বাড়ছে বিশেষজ্ঞ মহলে।

ইন্টার-আমেরিকান ডায়ালগের অভিবাসন, রেমিট্যান্স এবং উন্নয়ন প্রোগ্রামের পরিচালক মানুয়েল ওরোজকো বলেন, “রেমিট্যান্স কমানোর যেকোনো উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব স্বার্থে আঘাত হানবে। এর প্রভাব পড়ে নিজ দেশেও।” তিনি ব্যাখ্যা করেন, অনেক গরিব শহর বা গ্রামে চাকরির সুযোগ সীমিত। সেখানকার মানুষের জন্য রেমিট্যান্সই একমাত্র জীবনরেখা। তাই রেমিট্যান্সের সুযোগ কমলে, মানুষ আবারও ঝুঁকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে ঢোকার চেষ্টা করবে।

তবে এই করের পক্ষে মতদানকারীরা বলছেন, যারা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন, তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করা এবং সরকারের জন্য রাজস্ব আয়ের পথ খোলার জন্য রেমিট্যান্সে কর আরোপ কার্যকর হতে পারে।

মার্ক ক্রিকোরিয়ান, যিনি সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজ-এর নির্বাহী পরিচালক, বলেন: “মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে আসে মূলত কাজ করতে এবং সেই টাকা দেশে পাঠাতে। যদি এই কাজটিই কঠিন করে তোলা হয়, তাহলে তাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আসার আকর্ষণ অনেকটাই কমে যাবে।”

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com