পড়াশোনা শেষে চাকরির জন্য যুক্তরাজ্যে থেকে যাওয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। ব্রিটিশ সরকারের এক গবেষণাতে এই তথ্য উঠে এসেছে। রুশ, সৌদি আরবীয় ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের তুলনায় বাংলাদেশিরা তাদের ছুটি বাড়িয়ে যুক্তরাজ্যে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে মাইগ্রেটরি অ্যাডভাইজরি কমিটি।
যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রভাব ও তাদের ভিসা প্রক্রিয়ায় কি পরিবর্তন আনা প্রয়োজন তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দফতর তাদের এই গবেষণার দায়িত্ব দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় দেখেছে রুশ, বাংলাদেশি, সৌদি আরবীয় এবং পাকিস্তানি শিক্ষার্থীরা তাদের ছুটি বাড়িয়ে থেকে যাচ্ছে। আর থাই, চীনা, আমেরিকান ও ভারতীয় শিক্ষার্থীরা ভিসা বাতিল হওয়ার আগেই যুক্তরাজ্য ছেড়ে চলে যাচ্ছে’।
প্রতিভাবান আবেদনকারীদের শিক্ষার্থী থেকে কাজের ভিসায় রুপান্তর প্রক্রিয়া সর্বাত্মক সহজ করতে গবেষণাটি সুপারিশ করেছে। এর আওতায় স্নাতক শিক্ষার্থীদের বর্তমানে শিক্ষা পরবর্তী সীমাবদ্ধ ছুটি তিন মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাস করতে সুপারিশ করা হয়েছে। তবে তারা পড়াশোনা পরবর্তী ভিসা রুট তৈরির প্রয়োজনীয়তা বাতিল করে দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানেরা পড়াশোনা পরবর্তী ভিসা রুট তৈরির কথা বলে আসছিলেন। সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ইউনিভার্সিটিজ ইউকে নতুন ‘গ্লোবাল গ্র্যাজুয়েট ট্যালেন্ট ভিসা’ চালুর প্রস্তাব দিয়েছিল।
এতে যোগ্যতাসম্পন্ন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্নাতক পরবর্তী দুই বছর মেয়াদে যুক্তরাজ্যে দক্ষতা সম্পন্ন কাজের অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল।
যুক্তরাজ্যের ১৩৬টি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ইউনিভার্সিটিজ ইউকে’র প্রেসিডেন্ট প্রফেসর জ্যানেট বিয়ার এই প্রতিবেদনের মূল সুপারিশের বিষয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘স্নাতক পরবর্তী নির্দিষ্ট সময় দক্ষতাপূর্ণ কাজ করতে পারার সক্ষমতা বহু আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী কোথায় পড়াশোনা করবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উন্নত শিক্ষা-পরবর্তী ভিসা আমাদের আমেরিকা, কানাডা এ অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলো থেকে এগিয়ে রাখতে পারে।’
তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, শুধুমাত্র আরও উৎসাহব্যঞ্জক অভিবাসন ব্যবস্থার মাধ্যমেই কেবল বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করা সম্ভব।
আরেক বিতর্কিত সুপারিশে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের বার্ষিক অভিবাসী লক্ষ্যমাত্রা পূরণের তালিকা থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সরানোর কোনও ঘটনা নেই।
গবেষণা দলের প্রধান প্রফেসর অ্যালান ম্যানিং প্রতিবেদন প্রকাশের পর বলেছেন, লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সময় শিক্ষার্থীরা যদি সমস্যা হয় তাহলে সরকারের অভিবাসী লক্ষ্যমাত্রায় তা অন্তর্ভুক্ত করার পরিবর্তে তার নিজের লক্ষ্যমাত্রাতেই তার সমাধান করা হবে।
তবে প্রচারণাকারীরা ভিসা প্রক্রিয়া আরও সহজ করার পক্ষে। তারা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন আমেরিকা, কানাডা, ফ্রান্স ও জার্মানি যুক্তরাজ্যের চেয়ে বেশি সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করছে।