1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
মেসি, ম্যারাডোনার দেশে
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:০৫ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

মেসি, ম্যারাডোনার দেশে

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৫ মে, ২০২১

আমাদের লাল-সাদা রঙের বিমান দুটি মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আটলান্টিকের আরেক পাড়ে যখন ধীরে ধীরে নামতে থাকল তখন রাতের আঁধার কেটে গেছে। একটি গোল; মনে হলো লাল ও বেগুনি রং মিশ্রিত সূর্য; উদিত সূর্যের এমন রং আর কখনো দেখিনি। অদ্ভুত এক অনুভূতি হলো!

উইন্ডো দিয়ে এই সূর্য দেখতে দেখতেই বিমান আর্জেন্টিনার ভূমি ছুঁয়ে দিলো। রোদের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠল চারদিক। মাইনাস দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের লন্ডন থেকে রোদ ঝলমল বুয়েন্স আইরেস বিমান বন্দরে নামতে নামতে আরেক অনুভূতি মনের মধ্যে চাড়া দিলো- রবীন্দ্রনাথের ওকাম্পো, ম্যারাডোনা আর মেসির শহরে সত্যি কি পা রাখছি? তখন সকাল ৮টা। ইমিগ্রেশন পার হয়েই দেখলাম ঝলসানো রোদে আর্জেন্টিনা ভাসছে!

‘দি থিঙ্কার’ বিখ্যাত সেই ভাস্কর্য

‘এই বাসাছাড়া পাখি ধায় আলো-অন্ধকারে
কোন পার হতে কোন পারে
ধ্বনিয়া উঠিছে শূন্য নিখিলের পাথার এ গানে
হেথা নয় অন্য কোথা অন্য কোথা অন্য কোনখানে।’

সেদিন ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখ। এই তারিখটি মনে মনে রাখলাম। তখন সকাল দশটার প্রচণ্ড রোদের উত্তাপ। ইমিগ্রেশন শেষ করে আমরা বাইরে এসে ট্যাক্সি নিলাম। চালকসহ আর্জেন্টাইনরা কেউ ইংরেজি বোঝে না, ওদের ভাষা স্পেনিশ। বহু বছর লাতিন আমেরিকার দেশগুলো স্পেন শাসন করেছে বলে, তাদের ভাষাটিও এখানে বটবৃক্ষ হয়ে গেছে। আমাদের দলনেতা ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল তার ডিভাইস দিয়ে টপাটপ আমাদের কথাগুলো ইংরেজি থেকে স্পেনিশে ভাষান্তর করে চালকের সামনে দিতেই সে গাড়ি নিয়ে দৌড় দিল শহরের দিকে।

যেতে যেতে গাড়ি থেকে তাকিয়ে দেখছি আর দেখছি। ইউরোপ ও আমেরিকার মতই সড়ক পথ আর দুপাশে প্রকৃতির নন্দিত চেহারা ফুটে আছে। নতুন জায়গা দেখলে যে মন নড়ে, সেরকমই নড়ছে ভেতরে। প্রায় এক ঘণ্টা পর বুয়েন্স আইরেসের মূল শহরে ঢুকলাম। এতটুকু সময় বেশ কৌতূহল ও উদ্দীপনা নিয়েই ছিলাম। শহরের ভেতরে ঢুকে চোখ খুলে গেল, অন্য এক জিজ্ঞাসায়- এরকম শহর কী হতে পারে! বৃক্ষশোভিত, বিশাল রাস্তার সমাবেশ আর পরিচ্ছন্ন চাদরে ছেয়ে আছে পুরো শহর!

আমরা এসে থামলাম লন্ডন থেকে ঠিক করে আসা হোটেলে। লাগেজগুলো যার যার রুমে রেখে, নিচতলায় অবস্থিত রেস্টুরেন্টে গেলাম। তখন স্থানীয় সময় সকাল ১১টা। ব্রেকফাস্ট সারলাম। যথেষ্ট ভালো খাবার, বিশেষ করে নানা রকম জুস। বলে রাখি, এই ব্রেকফাস্ট ফ্রি। হোটেলটি শহরের কেন্দ্রে। সুন্দর, নিরিবিলি এবং পরিচ্ছন্ন। নাস্তা শেষ করে আমরা বেরিয়ে পড়লাম আমাদের গন্তব্যে। হোটেলের পাশেই শহরের কেন্দ্রস্থল। সেখানে একটি বিশাল টাওয়ার। টাওয়ারের একপাশে সবুজ কৃত্রিম ঘাস দিয়ে ‘বিএ’ লেখা। অর্থাৎ বি মানে বুয়েন্স এবং এ মানে আইরেস। বিভিন্ন দেশের পর্যটক এবং আর্জেন্টাইনরা সবাই ছবি তুলছে। আমরাও স্মৃতি রাখার জন্য কিছু ছবি তুললাম। বলে রাখি, বুয়েন্স আইরেস শহরে সবচেয়ে ভালো লাগল— এই শহরের প্রতিটি রাস্তা বেশ প্রশস্ত এবং রাস্তার দুপাশে এবং মাঝখানে নানা প্রজাতির গাছে শোভিত। রাস্তার ফুটপাত অনেক প্রশস্ত। রাস্তা বা ফুটপাতে তেমন ভিড় নেই। পার্কগুলোও বেশ সাজানো-গোছানো। ওরা খুব স্বাস্থ্য-সচেতন, দেখলাম হাঁটাহাঁটি করছে, সাইকেল চালাচ্ছে, ব্যায়াম করছে। অধিকাংশ মানুষই সাদা চেহারার, কেউ কেউ তামাটে। তবে রাস্তা বা পার্কে লোকজন খুব কম। পুরো শহরে কোনো কোলাহল নেই, শান্ত-নিরিবিলি। হেঁটে-চলে, গাড়িতে ঘুরে খুব আরাম।

আমাদের জন্য দুটো বড় সমস্যা হলো— ভাষা ও খাবার। স্পেনিশও বুঝি না, হালাল খাবারও নেই। ফলমূল ও সবজি ছাড়া। সেকারণে আমাদের দলনেতা আবু হেনা স্যার বেছে নিলেন কেএফসি। সেখানেও প্রশ্ন থেকে যায় চিকেনগুলো মুসলিম কায়দায় জবাই হয়েছে কিনা? কিচ্ছু করার নেই, সুতরাং চলুক।

আমরা ফুটপাত ধরে হাঁটছি। আমি ভাবছি ম্যারাডোনার কথা। ডিয়াগো ম্যারাডোনা। যদিও আমি সমর্থন করি ব্রাজিল কিন্তু ম্যারাডোনার নান্দনিক ফুটবল খেলা আমাকে দারুণ আনন্দ দিয়েছে- সে কথা ভুলি কী করে!

আলো ঝলমলে এক শহর

পরদিন ১ মার্চ ২০২০। আমরা সকাল ১০ টায় আর্জেন্টিনার সিভরি আর্ট মিউজিয়াম পরিদর্শনে যাই। পথে যেতে যতে মনে পড়ছিল যে শহরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসেছিলেন। আমরাও ভাগ্যবান বাঙালি হিসেবে এখানে আসতে পেরেছি। সব মিলিয়ে দারুণ অনুভূতি! মিউজিয়ামটির তথ্য নিয়ে জানা গেল এটি ১৯৩৩ সালে পৌর জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। আমরা দেখলাম, এটি বৃক্ষশোভিত প্রাকৃতিক ও নান্দনিক পার্কের ভেতর এই আর্ট মিউজিয়াম খুবই আধুনিক ও উন্নত পরিচ্ছন্ন। দিনের আলোয় আলোকিত জাদুঘরটিতে ঢুকেই আমাদের দারুণ ভালো লাগলো। কারণ গ্যালারিগুলো যেমন সুন্দর তেমনি ফাইন আর্টসের মনোমুগ্ধকর সব নিদর্শন!

মিউজিয়াম পরিদর্শনের পর আমরা বুয়েনস আইরেসের বৃক্ষশোভিত শহরের মধ্যখানে অবস্থিত আর্জেন্টিনার প্রখ্যাত লেখক ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর বাড়ি যাই। যেটি বর্তমানে ওকাম্পো জাদুঘর। এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর ১৯১৪ সালে ‘গীতাঞ্জলি’ ফরাসি ভাষায় অনূদিত হয় এবং সেই অনুবাদ পড়েই ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো রবীন্দ্রনাথের অনুরাগী হয়ে পড়েন। ১৯২৪ সালে পেরু এবং মেক্সিকো ভ্রমণের পথে অসুস্থ হয়ে পড়লে কবি আর্জেন্টিনায় যাত্রা বিরতি করেন এবং সান ইসিদ্রোতে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর আতিথ্যে বিশ্রাম গ্রহণ করেন। ওকাম্পোর এই বাড়িতে প্রায় ২ মাস ছিলেন ঠাকুর এবং ৩০টি কবিতা রচনা করেন এ সময়। বর্তমানে এই বাড়িটি জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেদিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় আমরা জাদুঘরটি দেখতি পারিনি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com