শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩১ অপরাহ্ন

মৃত সাগর

  • আপডেট সময় রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪
মৃত সাগর, যা ইংরেজিতে “Dead Sea” নামে পরিচিত, এটি একটি লবণাক্ত হ্রদ যা জর্ডান এবং ইসরায়েলের মধ্যে অবস্থিত। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে পৃথিবীর সবচেয়ে নিম্নতম ভূ-ভাগে অবস্থিত, প্রায় ৪৩০ মিটার (১,৪১১ ফুট) নিচে। মৃত সাগর তার অত্যন্ত উচ্চ লবণাক্ততার জন্য বিখ্যাত, যার ফলে এই সাগরের জলে কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ টিকে থাকতে পারে না, তাই এর নাম “মৃত সাগর”।
মৃত সাগরের পানির লবণাক্ততা সাধারণ সমুদ্রের পানির তুলনায় প্রায় ৯.৬ গুণ বেশি। এর উচ্চ লবণাক্ততার কারণে মানুষ সহজেই পানিতে ভাসতে পারে। এছাড়াও, মৃত সাগরের খনিজসমৃদ্ধ কাদা ত্বকের চিকিৎসায় উপকারী বলে মনে করা হয়।
বর্তমানে মৃত সাগরের জলস্তর ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে, যার প্রধান কারণ হলো এর পানি সরবরাহকারী নদীগুলোর ব্যবহার বৃদ্ধি এবং হ্রদের কাছাকাছি খনিজ আহরণ কার্যক্রম।
মৃত সাগর সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য নিচে দেওয়া হলো:
ভৌগোলিক অবস্থান
মৃত সাগর জর্ডান রিফট ভ্যালির অংশ, যা জর্ডান এবং ইসরায়েলের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। এটি উত্তর দিকে জর্ডান নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে। হ্রদের আশেপাশের অঞ্চলটি মরুভূমি পরিবেশে ঘেরা, যা হ্রদটিকে একটি অনন্য ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য প্রদান করে।
লবণাক্ততা
মৃত সাগরের লবণাক্ততা প্রায় ৩৪ শতাংশ, যা সাধারণ সমুদ্রের জল থেকে অনেক বেশি। এই উচ্চ লবণাক্ততার কারণে এর পানিতে কোনো জলজ প্রাণী বা উদ্ভিদ টিকে থাকতে পারে না। তবে কিছু ব্যাকটেরিয়া এবং মাইক্রোবিয়াল ফাংগাস এখানে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এই লবণাক্ততার কারণে মানুষ এখানে সহজেই ভেসে থাকতে পারে, যা অন্য কোনো হ্রদে বা সমুদ্রে সম্ভব নয়।
খনিজ উপাদান ও স্বাস্থ্য উপকারিতা
মৃত সাগরের খনিজসমৃদ্ধ পানি এবং কাদা বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত উপকারিতার জন্য বিখ্যাত। বিশেষ করে ত্বকের রোগ যেমন সোরিয়াসিস, একজিমা, এবং আর্থ্রাইটিসের মতো অসুস্থতার চিকিৎসায় এটি ব্যবহৃত হয়। কাদার মধ্যে থাকা খনিজগুলো ত্বকের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয় এবং অনেক স্বাস্থ্য স্পা এই কাদা ব্যবহার করে থাকে।
ইতিহাস এবং ধর্মীয় গুরুত্ব
মৃত সাগর প্রাচীনকালে “লবণের সাগর” নামে পরিচিত ছিল। এটি বাইবেল এবং কোরআনে উল্লেখিত স্থানগুলোর মধ্যে একটি। প্রাচীনকালে এটি বাণিজ্যিক পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত, বিশেষত লবণ এবং খনিজের জন্য।
ধর্মীয় দিক থেকে, এটি সাদোম ও গোমোরার কাছাকাছি অবস্থিত বলে ধারণা করা হয়, যা বাইবেল অনুযায়ী ধ্বংসপ্রাপ্ত দুটি শহর ছিল। মৃত সাগরের পাথুরে ও খনিজসমৃদ্ধ লবণ পাহাড়গুলো এই অঞ্চলটির ঐতিহাসিক গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বর্তমান পরিস্থিতি এবং জলস্তরের হ্রাস
মৃত সাগরের জলস্তর গত কয়েক দশক ধরে দ্রুত কমছে। এর প্রধান কারণ হলো এর পানি সরবরাহকারী জর্ডান নদীর পানি কৃষিকাজ ও শহরের চাহিদা মেটাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও, খনিজ আহরণ কার্যক্রম ও পর্যটনও এর জলস্তর কমানোর কারণ হিসেবে কাজ করছে। ১৯৬০ সালের পর থেকে মৃত সাগরের আকার প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
মৃত সাগরের জলস্তরের হ্রাস রোধে বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, যেমন: লোহিত সাগর থেকে পানি এনে হ্রদের জলস্তর বৃদ্ধি করা। “রেড-ডেড ক্যানাল” নামে একটি প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা লোহিত সাগর থেকে মৃত সাগরে পানি স্থানান্তর করবে। তবে এই প্রকল্পের ব্যয়বহুল এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
মৃত সাগর তার অনন্য বৈশিষ্ট্যের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত, তবে জলস্তরের হ্রাস এটিকে একটি সংকটময় অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com