মালয়েশিয়ায় অনলাইন মার্কেটিংয়ে সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশি ছাত্রী ফাহরিবা আবদুল্লাহ চিশতী। তিনি মেয়েদের বিভিন্ন বিখ্যাত পণ্য সংগ্রহ করে তা অনলাইনের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের ভোক্তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছেন। ‘অর্পিতা’স ক্রিয়েশন’ নামক একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনলাইন মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন ফাহরিবা।
ফাহরিবা যে ধরনের পণ্য সরবরাহ করে থাকেন, তার মধ্যে রয়েছে মেয়েদের থ্রিপিস, টুপিস, জিন্স, হ্যান্ডব্যাগ, পার্স, নেকলেস, জুতা, কানের দুল, বোরখা, লং-গাউন, মেয়েদের সাজসজ্জা সামগ্রী, ফেসওয়াশ, ছবি তোলার জন্য সেলফি-স্ট্যান্ড ও ঘর সাজানোর জন্য শোপিস।শুধু নিজ উদ্যোগে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি অনলাইন মার্কেটিংয়ের ব্যবসা শুরু করেন। বাংলাদেশে বসে ফাহরিবার ব্যবসায় তাঁকে সাহায্য করেন তাঁর মা।
এ ব্যাপারে ফাহরিবা বলেন, ‘আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে অনলাইন মার্কেটিংয়ের বিকল্প কিছু নেই। মানুষ এখন আগের মতো আর কষ্ট করতে চায় না। বিজ্ঞান পৃথিবীটাকে এখন হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। মানুষ এখন অনেক আধুনিক। ফেসবুক কিংবা টুইটারের মাধ্যমে এখন অনেক পণ্য কেনাবেচা হয়ে থাকে। আমি যেহেতু মার্কেটিংয়ে লেখাপড়া করছি, আমি কেন এ বিষয়ে পিছিয়ে থাকব।’
ফাহরিবা আরো বলেন, “দেশে থাকতে আমার ডিজাইন করা শাড়ি মানুষ কিনত। যখন নিজের ডিজাইন করা শাড়ির ছবি ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে শেয়ার দিতাম, তখন সেগুলোর জন্য প্রচুর অর্ডার পেতাম। এভাবে দিন দিন আমার ডিজাইন করার শাড়ির অর্ডারের পরিমাণ বেড়ে গেল। তখন আমি ‘অর্পিতা’স ক্রিয়েশন’ নামে ফেসবুক পেজ খুললাম। তখন আমার থেকে যারা শাড়ি কিনত, তারা এই পেজের মাধ্যমে অর্ডার দেওয়া শুরু করে। ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী পণ্য আমি ডাকযোগে পাঠিয়ে দিতাম। এভাবে ক্রেতাদের মধ্যে আমার পেজের প্রতি একটা বিশ্বাস জন্মাল।”
জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ফাহরিবা আবদুল্লাহ বলেন, ‘লেখাপড়া শেষ করে আমি অনলাইন ব্যবাসায় ভালোভাবে মনোযোগ দেব। এটাকে ধরে রাখব এবং ব্যবসার ক্ষেত্র আরো প্রসারিত করব।’ ফাহরিবা মনে করেন, অনলাইনে মার্কেটিংয়ে একটু মেধা এবং নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করলে ভালো করা যায়। যেখানে অনেকে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করেও ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারে না, সেখানে ফাহরিবার অনলাইন মার্কেটিংয়ের ব্যবসায় কোনো লোকসান নেই।
ক্রেতারা কেন আপনার কাছ থেকে পণ্য কিনবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ফাহরিবা আবদুল্লাহ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার চিন্তাভাবনা, শিল্পমন এবং রুচি অনেক ক্রেতা পছন্দ করেন। বাংলাদেশে থাকতে আমার অনেক ক্রেতা ছিল। আমি মালয়েশিয়া আসার পর ওই ক্রেতারা এখনো আমার কাছ থেকেই পণ্য কেনেন।’ বর্তমানে ‘অর্পিতা’স ক্রিয়েশন’ নামক ফেসবুক পেজে প্রায় ৩২ হাজার ব্যবহারকারী লাইক দিয়েছেন।
ফাহরিবা বলেন, ‘বাংলাদেশে আমার পণ্যের অনেক ক্রেতা আছেন, যারা এখন মালয়েশিয়া থেকে পণ্য অর্ডার দেয়। আমি মালয়েশিয়ার বাজারে পাওয়া সেরা পণ্যগুলো ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিক্রি করি। ফলে ক্রেতারা আমার কাছে কোনো ভেজাল পণ্য পায় না এবং সঠিক, সুন্দর ও আসল ব্র্যান্ডের পণ্য পায় আমার কাছে। পরিশ্রম ছাড়া জীবনে কেউ বড় হতে পারে না। তাই দেশে থাকতেও আমি চাকরি করেছি, এখন মালয়েশিয়ায়ও লেখাপড়ার পাশাপাশি পার্টটাইম জব করছি।’
এর বাইরে ছুটিতে বা অবসরে বেরিয়ে পড়েন মালয়েশিয়ার বিখ্যাত শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে পণ্য কিনে সেসব পণ্যের ছবি আপলোড করেন নিজের প্রতিষ্ঠানের পেজে। ফাহরিবারা দুই বোন ও এক ভাই। তাঁর ভাই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এবং বোন ডেন্টিস্ট। ফাহরিবার বাবা একটি জাপানি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়া ইসলামী ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন ফাহরিবা। এর আগে ২০০৬ সালে ঢাকার ভিকারুননিসা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০০৮ সালে ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এর পর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ থেকে বিবিএ শেষ করেন।
বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে এমএস করছেন। এর বাইরেও বাংলাদেশ স্টুডেন্ট ইউনিয়ন মালয়েশিয়ার একজন সম্মানিত সদস্য। অর্পিতা’স ক্রিয়েশন-এর ফেসবুক পেজের লিংক : https://www.facebook.com/pages/Arpitas-Creation/214875625211401?pnref=lhc
তথ্যসূত্র: এনটিভি