শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪১ অপরাহ্ন

মায়ের চিকিৎসা খরচ মেটাতে লিবিয়া এসেছি, লাইফ সাপোর্ট’কে এক বাংলাদেশি

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৪

বাংলাদেশিসহ ২০২ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে ইটালির রাভেনা বন্দরে নামিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ইমার্জেন্সি অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী জাহাজ লাইফ সাপোর্ট৷ উদ্ধারের পাঁচ দিন পর অর্থাৎ, ১০ এপ্রিল তাদের সবাইকে ইটালিতে নামানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷

গত ৫ এপ্রিল অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ভূমধ্যসাগরে লিবিয়ার অনুসন্ধান ও উদ্ধার অঞ্চল থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল৷ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে ১৫ নারী ও ১৮ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন৷ অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে আবার আট জন অভিভাবকহীন৷ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সবাই বাংলাদেশ, মিশর, ইরিত্রিয়া, ঘানা, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন এবং সিরিয়ার নাগরিক৷

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধারের পর ৩৫ বছর বয়সি এক বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলেছেন লাইফ সাপোর্ট জাহাজের সদস্যরা৷

ওই বাংলাদেশি তাদের বলেন, ‘‘আমার বাবা মারা গেছেন সাত বছর আগে৷ আমার মা খুব অসুস্থ, তার বয়স ৭০ বছর৷ তার চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল৷ বাংলাদেশে আমার চাকরি দিয়ে সেই খরচ মেটাতে পারিনি৷’’

তাই কাজের খোঁজে লিবিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ওই তরুণ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি লিবিয়া পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে কিছু লিবিয়ান নাগরিক আমাকে অপহরণ করে বন্দিখানায় নিয়ে যায়৷ সেখান থেকে মুক্ত হতে আমাকে হাজার হাজার ডলার দিতে হয়েছে৷ ১৫ দিন পর পর, তারা আমাদের এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে নিয়ে যায়৷’’

বন্দিশিবিরগুলো খুবই ভয়ঙ্কর ছিল বলেও জানান এই বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ তিনি বলেন, ‘‘দুই বা তিন দিন পর পর আমাদের খেতে দিত৷ প্রতি রাতে তারা আমাদের মারধর করতো, যাতে আমাদের পরিবার তাদের জন্য আরো টাকা পাঠায়৷ সেখান থেকে আমাকে মুক্ত করার জন্য আমার মাকে বাড়ি বিক্রি করে দিতে হয়েছে৷ আমার পরিবার মুক্তিপণ দেয়ার পর, এক রাতে কিছু লোক আমাকে নিতে এসেছিল৷ মুক্তি দেয়ার পরিবর্তে, তারা আমাকে নৌকায় বসিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়৷ আমি জানি না কেন, কিন্তু তারা আমার চোখ বেঁধে ফেললো এবং একটি গাড়িতে তুলে নিল৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা কোথায় যাচ্ছি জানতাম না৷ যখন তারা আমার চোখে খুলে দিল, তখন আমরা জাওইয়া সমুদ্র সৈকতে ছিলাম৷ তারা আমাদের একটি নৌকায় বসিয়েছিল, আমরা যে কজন মানুষ ছিলাম, তাদের তুলনায় নৌকাটি ছিল ছোটো৷’’

নৌকার ভেতরে দিকে বসানো হয়েছিল এই বাংলাদেশিকে৷ সেখানে ছিল পেট্রলের উৎকট গন্ধ৷ বাধ্য হয়ে সেখানেই গুটিসুটি মেরে বসেছিলেন তিনি৷ পরে লাইফ সাপোর্ট জাহাজটি আর সবার সঙ্গে এই বাংলাদেশিকেও নৌকাটি থেকে উদ্ধার করে৷

বাংলাদেশি এই তরুণ বলেন, ‘‘ভাগ্যক্রমে, আপনারা আমাদের খুঁজে পেয়েছেন৷ আমি এখন শুধু একটি চিন্তাই করতে পারি৷ সেটা হলো, আমার পরিবারকে ফোন দিয়ে বলা আমি ঠিক আছি, আমি আর লিবিয়ায় নেই৷’’

৫ এপ্রিল সকালে আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে এই ২০২ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়৷ মোট দুটি নৌকায় ছিলেন তারা৷ একটি নৌকা ছেড়ে এসেছিল লিবিয়ার সাবরাথা থেকে এবং অপরটি জাওইয়া উপকূল থেকে৷

নৌকা ভ্রমণটি ভয়ঙ্কর ছিল বলে জানিয়েছে সিরিয়া থেকে আসা এক অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি মানুষ তোলা হয়েছিল নৌকায়৷ ফলে আধাঘণ্টা না পেরোতেই পায়ে আর বাহুতে ব্যথা অনুভব করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘এক সময় নৌকার নিচ থেকে পানি আসতে শুরু করে৷ আমরা কিছু বোতল কেটে পানি তুলে আবার সাগরে ফেলছিলাম৷ নিজেদের বাঁচাতে অনেকক্ষণ ধরে এই কাজ করেছি আমরা৷ এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে যাই৷’’

২০১৬ সালে নিজ দেশে সিরিয়া ছেড়েছেন এই মানুষটি৷ যাদের আত্মীয় স্বজন দেশের বাইরে থাকে, অর্থকড়ি পাঠায় তেমন পরিবাগুলোই সিরিয়াতে খেয়ে পরে বেঁচে আছেন বলে জানান তিনি৷

তিনি বলেন, ‘‘আমি ২০১৭ সাল থেকে লেবাননে ছিলাম৷ আমার বাবা-মার বয়স হয়েছে৷ তাদের কাছে টাকা পাঠাতে একটি রেস্টুরেন্টে ডেলিভারি বয় হিসেবে কাজ করছি৷ কিন্তু আমাকে লেবানন ছাড়তে হয়েছে৷ কারণ যারা আমাকে আশ্রয় দিয়েছিল, তাদের লেবানন ছেড়ে যেতে হয়েছে৷ এরপর আমার থাকার কোনো জায়গা ছিল না৷ আর লেবাননে জীবন গড়াও কঠিন৷’’

বড় ভাই, ভাইয়ের ছোটো ছেলে আর বোনের ছেলের সঙ্গে লেবানন ছেড়ে লিবিয়া এসেছেন ইউরোপ পৌঁছাবেন বলে৷ এই সিরীয় বলেন, ‘‘আমি ইউরোপে নতুন জীবন গড়তে চাই, আমি স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই৷’’

এই অভিযানের মধ্য দিয়ে লাইফ সাপোর্ট তাদের ১৮তম উদ্ধার অভিযান শেষ করেছে৷ এ নিয়ে মোট এক হাজার ৫৪৪ জনকে উদ্ধার করেছে জাহাজটি৷ নাবিক, চিকিৎসক, মধ্যস্থতাকারী এবং উদ্ধারকারী মিলিয়ে ২৯ জন কাজ করছেন লাইফ সাপোর্ট জাহাজটিতে৷

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com