মাটির ঘর রেস্টুরেন্ট

সময়ের আবর্তনে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে চিরায়ত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। হারিয়ে যাচ্ছে মাটির ঘর। আগে প্রতিটি গ্রামে নজরে পড়তো সুদৃশ্য অসংখ্য মাটির ঘর। আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলার সেই সরল-সহজ জীবন ও কৃষ্টি এখন প্রায় বিলুপ্ত।

শহুরে জীবনে যাদের ছোটবেলার গ্রামের বাড়ির কথা মনে পড়ে বা পরিবারের শিশুদের গ্রামীণ পরিবেশের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চান তারা চলে যেতে পারেন এই ‘মাটির ঘর’ (Matir Ghor)-এ। এটি মূলত একটি রেস্টুরেন্ট যেখানে আপনি মাটির বাড়িতে সম্পূর্ণ গ্রামীণ পরিবেশে সু-স্বাদু দেশীয় খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন।

গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘মাটির ঘর’ অবস্থিত। এই রেস্টুরেন্ট-এ পাবেন গ্রামীণ পরিবেশ। সেই সাথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য আর প্রাণজুড়ানো মুখরোচক সব খাবার। এখানে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরিবিলি পরিবেশে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য মেশানো পরিবেশে দারুণ কিছু সময় কাটাতে পারবেন এবং সেই সাথে নিতে পারেন গ্রামীণ খাবারের নিখাদ স্বাদ। তিন বিঘা জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে এই ‘মাটির ঘর’। এর চারপাশটা ভীষণ সবুজঘেরা।

মাটির তৈরি ‘মাটির ঘর’

বেড়ার ফটক দিয়ে ঢুকেই হাতের বাঁয়ে চোখে পড়বে মাটির উঠানে গাছের ডালে ঝোলানো রয়েছে দড়ির তৈরি দোলনা-বিছানা। পাশেই কাঠ আর গুঁড়ি দিয়ে বসার ব্যবস্থা। এখানে বসে আড্ডা দিতে পারবেন। এরপরই ছনের ছাউনি দেয়া গোলাকৃতি ঘর। চারপাশ খোলা এবং পুরো এলাকা সবুজঘেরা বলে প্রচণ্ড গরমেও এখানে বেশ প্রশান্তি পাওয়া যায়। ছনের ঘরটি ধরে এগোলে একপাশে পার্কিং। অন্যপাশে রেস্টুরেন্টটি।

এই রেস্টুরেন্টটির সবখানেই পাবেন মাটির স্পর্শ। ঘরগুলো সব মাটির তৈরি। ঘরের ভেতরে ঢুকতেই একটা প্রশান্তিতে ছেয়ে যায় মন। বড় বড় জানালার পাল্লায় বিভিন্ন ধরনের চিত্রকর্ম দিয়ে ঘরটিকে আরও আকর্ষণীয় করা হয়েছে। আসবাবপত্র হিসেবে নজরে পড়বে রেন্ডি গাছের তক্তা। এই তক্তাকে টেবিল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে চেয়ার হিসেবে রেন্ডি গাছের গুড়ি।

মাটির ছোট কলসির মতো পাত্রে খাবার পানি। মাটির গ্লাসেই পানি খাওয়ার ব্যবস্থা। খাবারও পরিবেশন করা হয় মাটির পাত্রে ও প্লেটে। বৈদ্যুতিক পাখা এবং লাইটের পাশাপাশি রয়েছে হ্যারিকেনের ব্যবস্থাও। সন্ধ্যা নামলেই জ্বলে উঠে হারিকেনগুলো। এ যেন চিরায়ত বাংলার রূপ। এর সবকিছুতেই রয়েছে নিপুণ হাতের যত্নের ছোঁয়া। প্রকৃতির মাঝে এক টুকরো সৌন্দর্য।

পার্কিংয়ের সামনেই রয়েছে একটি পাকা ঘর। রেস্টুরেন্টের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা হয় ঘরটিতে। সেখানে রয়েছে রেস্টুরেন্ট-কর্মীদের থাকার জায়গাও। ঘরটির পেছনে রয়েছে খানিকটা ইট বিছানো পাকা জায়গা ও বড় বড় কয়েকটি গাছ।

খাদ্যতালিকা

 

 

 

 

গ্রামের ঐতিহ্যবাহী যে খাবারগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে সেগুলো এখানে পরিবেশন হয়। পাশাপাশি যে খাবারগুলো মানুষ গ্রামে বা নিজের বাড়িতে খেতে পছন্দ করেন সেগুলোও এখানে পাবেন। রান্নার জন্য সবজিগুলো স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়। মাছ আনা হয় টঙ্গির আব্দুল্লাহপুর মাছের আড়ত থেকে। চাল আনা হয় বিভিন্ন অর্গানিক প্রতিষ্ঠান থেকে। সব উপকরণ টাকটা হওয়ার কারণে এখানকার খাবারের স্বাদ অতুলনীয়। আপনার মুখে লেগে থাকবে অনেকদিন।

এখানে মূল খাবার হিসেবে পাওয়া যায় দেশি লাল চালের ভাত, চিনিগুঁড়া চালের খুদের চচ্চড়ি, চাপা শুঁটকিসহ কয়েক পদের ভর্তা, পাঁচ মিশালী সবজি, তিনপদী ডাল, মাছ, দেশি মুরগির মাংস, রাজহাঁস। আরও পাবেন ফুলপিঠা, পাটি পিঠা, শামুক পিঠাসহ আরও নানা ধরনের পিঠা আর দইয়ের লাচ্ছি ও মৌসুমি ফলের জুস।

যাওয়ার একদিন আগে যোগাযোগ করে পছন্দের তালিকা জানিয়ে দিলে পরদিন যথাসময়ে পেয়ে যাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত খাবার।

শুক্রবার ও শনিবারসহ অন্য যেকোনো সরকারি ছুটির দিনগুলোতে এখানে বেশি ভিড় থাকে। অনেক সময় খাবারের জন্য আপনাকে এক থেকে দেড় ঘণ্টাও অপেক্ষা করতে হতে পারে। তবে ছুটির দিনগুলোতে খাবারের ভিন্নতা থাকে বেশি এবং এসব দিনে নিয়মিত আইটেমের বাইরেও মাটির চুলায় রান্না করা হয়। ছুটির দিনগুলোতে ব্যাম্বো চিকেন ও কলাপাতার মধ্যে রান্না করা হয় এক ধরনের মাছ। ঢাকার খুব কাছে হওয়াতে খেয়ে দেয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসতে পারবেন।

রেস্টুরেন্টটি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

যোগাযোগ :

ফোন : ০১৭১৬-৮৮৩১২০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: