বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

মাঝ আকাশে উড়ে গেল বিমানের ছাদ

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

মাঝ আকাশে ২৪ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়ে গেল বিমানের ছাদ। যাত্রী ছিলেন ৮৯ জন। নিশ্চিত মৃত্যুর আতঙ্কে যাত্রীরা আঁতকে উঠেছিলেন। এই বুঝি ছিটকে পড়লেন নীচে। যদিও শেষ পর্যন্ত সবাইকে নিয়ে নিরাপদেই নেমেছিল বিমানটি। মৃত্যু হয়েছিল এক বিমানকর্মীর। বিমানযাত্রীদের রক্ষা পাওয়ার সেই গল্প কোনও সিনেমার চেয়ে কম নয়।

দুর্ঘটনাটি হয়েছিল ১৯৮৮ সালের ২৮ এপ্রিল। বিমানটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের আলোহা এয়ারলাইনসের। হাওয়াইয়ের হিলো থেকে হনলুলু যাচ্ছিল সেটি। বিপত্তির পর মাওয়িতে জরুরি অবতরণ করে সেই বিমান।

বোয়িং ৭৩৭ বিমানটি তৈরি হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। ওই বছরই আলোহা বিমান সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয় সেই বিমান। ১৯৮৮ সালে দুর্ঘটনার সময় বিমানটির বয়স ছিল ১৯ বছর।

দুর্ঘটনার দিন বিমানটি চালাচ্ছিলেন ৪৪ বছরের রবার্ট স্কর্নসথেইমার। ৮,৫০০ ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল তার। এর মধ্যে বোয়িং ৭৩৭ চালিয়েছিলেন ৬,৭০০ ঘণ্টা। সহকারী চালক ম্যাডেলিন মিমি টম্পকিনসও যথেষ্ট অভিজ্ঞ চালক ছিলেন।

২৮ এপ্রিল দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে হিলো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৮৯ জন যাত্রী এবং ৬ জন কর্মীকে নিয়ে উড়েছিল বিমানটি। সে সময় বিমানে কোনও অস্বাভাবিকতা চোখে পড়েনি কারও।

দুপুর ১টা ৪৮ মিনিটে ২৪ হাজার ফুট উচ্চতায় ওঠে বিমানটি। তখনই ভয়ঙ্কর শব্দে উড়ে যায় বিমানের ছাদের বাঁ দিকের অংশ।

চালক বুঝতে পারেন, বিমানটি এক বার ডান দিকে, এক বার বাঁ দিকে দুলছে। এর ফলে নিয়ন্ত্রণ আলগা হতে থাকে চালকের। সহকারী চালক লক্ষ্য করেন, মাথার উপর দিয়ে ধূসর রঙের কিছু ভেসে বেড়াচ্ছে।

ঠিক তখনই ভেঙে যায় ককপিটের দরজা। বিমান চালাতে চালাতেই চালক দেখেন তাঁর পাশে নীল আকাশ। ক্রমে হাওয়ার চাপে বিমানের গোটা ছাদটাই উড়ে যায়।

সে সময় যাত্রীদের আসনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিমানকর্মী ক্লারাবেল। ছাদ উড়তেই নিমেষে ছিটকে যান ৫৮ বছরের ওই মহিলা। তার মরদেহ আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৩৭ বছর ধরে বিমানসেবিকার কাজ করছিলেন তিনি। আরও আট জন যাত্রী গুরুতর জখম হন। সকলেই সিটবেল্ট পরেছিলেন বলে সে যাত্রায় রেহাই পান।

ছাদ যখন উড়ে যায়, তখন বিমান চালাচ্ছিলেন সহকারী চালক টম্পকিনস। তাকে সরিয়ে চালকের আসনে বসে পড়েন অভিজ্ঞ স্কর্নসথেইমার।

জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন চালক। কাহুলুই বিমানবন্দরে অবতরণের চেষ্টা করে বিমানটি। অবতরণের সময় বিমানের বাঁ দিকের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়।

ছাদ উড়ে যাওয়ার ১৩ মিনিটের মাথায় কোনও মতে অবতরণ করে সেই বিমান। ৬৫ জন যাত্রী জখম হন। ছোট্ট দ্বীপে মাউয়িতে এত জনের চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা ছিল না। এমনকি গোটা দ্বীপে ছিল মাত্র দুটি অ্যাম্বুল্যান্স।

এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল থেকে কাছের শহর আকামাইতে যোগাযোগ করা হয়। পর্যটকদের ভ্যানে চাপিয়ে আহতদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়।

দুর্ঘটনায় বিমানটি এতটাই বিকল হয়ে গিয়েছিল যে, পরে তা আর মেরামত করা যায়নি। আমেরিকার ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড দুর্ঘটনার তদন্ত করেছিল। তাতে জানিয়েছিল, ১৯ বছর ধরে নোনা সামুদ্রিক আবহাওয়ার মধ্যে দিয়ে চলাচল করেছিল বিমানটি। ফলে তার ধাতব আবরণ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বিমানটির রক্ষণাবেক্ষণও ঠিক ভাবে হয়নি। তাই এই বিপত্তি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com