বিশ্বে যে কয়টি দেশ পর্যটকদের কাছে স্বর্গের মতো তাদের মধ্যে মরিশাস অন্যতম। ছোট্ট এই দেশটিতে প্রতিবছর প্রায় 20 লক্ষের অধিক পর্যটক বেড়াতে আসেন। আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্বে ভারত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত ছোট এই দেশটির আয়তন মাত্র 2040 বর্গকিলোমিটার। মরিশাস আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে ধনী, উন্নত এবং আধুনিক সংস্কৃতির দেশ। অতীতে ডাচ, ফরাসি এবং ব্রিটিশরা এই দ্বীপ শাসন করেছে। সর্বশেষ ঔপনিবেশিক জাতি ব্রিটিশদের কাছ থেকে মরিশাস 1968 সালে স্বাধীনতা লাভ করে।
মরিশাসের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর হল পোর্ট লুইস। মজার ব্যাপার হলো আপনি মরিশাস গেলে দেখতে পাবেন যে এখানকার বেশিরভাগ মানুষই তামিল, ভোজপুরি, হিন্দি এবং তেলেগু ভাষায় কথা বলছে। মরিশাসের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় আচার আচরণ অনেকটা ভারতীয়দের মতো। কারণ মরিশাসের বেশিরভাগ লোকই ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তাদের বেশিরভাগ লোকের ধর্ম হিন্দু। এটি যেন ভারত মহাসাগরের বুকে আরেকটি ভারত। মরিশাস বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দু রাষ্ট্র। এর কারণ হলো মরিশাসে ব্রিটিশ শাসনামল চলাকালে আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে আখ চাষের জন্য ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে শ্রমিক নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে পরবর্তীতে এরাই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে ওঠে এবং বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে থাকে। ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতা লাভের পর এখনো ভারতীয় বংশোদ্ভূতরাই এই দ্বীপটি শাসন করছে।
মরিশাস আফ্রিকার সবচেয়ে সুন্দর দেশও বটে। দেশটির চারপাশ সমুদ্র বেষ্টিও এবং মধ্য ভূমি উঁচু পাহাড় এবং আগ্নেয়শিলা দ্বারা গঠিত। এর মধ্য ভাগে রয়েছে বেশকিছু নয়নাভিরাম লেক। এছাড়া দেশটির বাকি অংশ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্য আর সুবিশাল আখ ক্ষেত দিয়ে আবৃত। দেশটির এই বিচিত্র ভৌগলিক পরিবেশ আর চারপাশের নীল জলরাশি মরিশাস কি করে তুলেছে পর্যটকদের স্বর্গরাজ্য।
মরিশাস এর প্রধান দুটি প্রাণী হল সাম্বালা নামের এক ধরনের হরিণ আর ডোডো নামের এক ধরনের বিলুপ্ত পাখি। দুটো প্রাণীকেই মরিশাসের জাতীয় প্রতীকের স্থান দেওয়া হয়েছে।
ঐতিহ্যগত ভাবে মরিশাসের অর্থনীতিতে একমাত্র অর্থকরী শস্য আধিপত্য বিস্তার করে আসছে যা হলো আখ। দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের জমিতে আখ চাষ করা হয়। আখ থেকে প্রস্তুতকৃত চিনি এবং ছোলা গুড় মরিশাসের প্রধান দুটি রপ্তানি দ্রব্য। স্বাধীনতার পর মরিশাসের সরকার কৃষির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে অর্থনীতির আধুনিকায়নের উদ্যোগ হাতে নেয় এবং নতুন নতুন শিল্প স্থাপন করে। বর্তমানে মরিশাস আখের রস থেকে পরিশোধিত চিনি এবং চিনিজাত দ্রব্য প্রক্রিয়াজাতকরণের পাশাপাশি বস্ত্র, ধাতু, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ধাতব দ্রব্য, রাসায়নিক সার ও রাসায়নিক দ্রব্য, পানীয় এবং চামড়াজাত দ্রব্য, ইলেকট্রনিকস যন্ত্রাংশ ইত্যাদি উৎপাদন করে থাকে।
মরিশাস একটি সমাজ কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। এই দেশের সরকার সমস্ত নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ও প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান করে থাকে। 2019 সালে বিশ্ব শান্তি সূচক অনুযায়ী মরিশাস আফ্রিকার সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশের স্বীকৃতি লাভ করেছে। এছাড়া মরিশাস একমাত্র আফ্রিকার রাষ্ট্র যেটি মানব উন্নয়ন সূচকে অত্যন্ত উচ্চ শ্রেণীর স্থান করে নিয়েছে।