চোখ ধাঁধানো ক্লাব ও রিসোর্টের পাশাপাশি মরিশাসে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে চমৎকার সমুদ্র সৈকত, বোটানিকাল গার্ডেন আর সাত রঙের পাহাড়। সবকিছু মিলিয়ে মরিশাস দেশ কেমন তা নিজের চোখে না দেখে অনুধাবন করা সম্ভব না। আজকের গাইডে আমরা জানাব কিভাবে মরিশাসের ভিসা আবেদন করে ম্যাজিকাল এই দ্বীপটিতে আসতে পারবেন। চলুন জেনে নিই দেশটির অবস্থান কোথায়, কিভাবে ভিসা নিবেন আর কি কি দেখবেন।
আফ্রিকার পূর্বে ভারত মহাসাগরের মাদাগাস্কার দ্বীপ থেকে ৮০০ কিমি দূরে অবস্থিত মরিশাস দ্বীপ। মরিশাসের রাজধানী পোর্ট লুইস। প্রায় ১৫ লাখ জনসংখ্যার এই দ্বীপের চারপাশ জুড়ে প্রবাল দেখা যায়। স্বস্তিদায়ক আবহাওয়া, স্বচ্ছ পানির সমুদ্র, সবুজ পাহাড় আর নানারকম খাবারের জন্য মরিশাসের পর্যটন শিল্প অনেক প্রসার লাভ করেছে। এছাড়া সারা পৃথিবী থেকে মানুষ এখানকার মন্দির, মূর্তি ও স্থাপনা দেখতে যায়।
মরিশাস দুটি জোনে বিভক্ত। নর্থ জোনে পাহাড় আর সাউথ জোনে সমুদ্র ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক ভ্রমণস্থান। এখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে গাড়ি নিয়ে পুরো দ্বীপ ঘুরে দেখতে হবে। তাই ভ্রমণ সহজ করতে সব জায়গার মধ্যে থেকে আমরা সেরা স্থানগুলোর তালিকা তৈরি করেছি। মরিশাসের সেরা ১০টি ভ্রমণ স্থান হলোঃ-
মরিশাসের অন্যতম আকর্ষণ টামারিন্ড জলপ্রপাত। পর্যটক, পাখিপ্রেমী আর ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্য সেরা জায়গা এটি। এখানে হাইকিং, ক্যানোওনিং, ক্লিফ জাম্পিং, পাখির ফটোগ্রাফি ও সাঁতার কাঁটাসহ নানারকম কর্মকান্ড করে সময় কাটানো যায়। প্রথমবার গেলে হেনরিয়েটা নামক গ্রাম থেকে গাইড পাবেন। বাস স্টেশন থেকে ঝর্ণার দিকে যাবার পথে অনেক ছোট ছোট রেস্তোরা আছে। খাবার পর ঝোপঝাড় পাড়ি দিয়ে জলপ্রপাতে এগোতে হবে। অ্যাডভেঞ্চার-প্রেমীরা ১০ মিটার উঁচু থেকে ক্লিফ জাম্পিং করার জন্য এখানে যায়। চারপাশে উজ্বল সবুজ গাছগাছালির মাঝে স্বচ্ছ পানির জলপ্রপাতটি আপনাকে এক অপার্থিব শান্তি দেবে। পথ কিছুটা দুর্গম হবার কারণে ছোট বাচ্চা সাথে না নিয়ে ভ্রমণের পরামর্শ থাকবে।
মরিশাসের পূর্বদিকের শহরে অসংখ্য বিলাসবহুল হোটেল, রিসোর্ট ও ক্লাব রয়েছে। প্রিয়জন সাথে থাকলে লাক্স বেরে মারে রিসোর্ট ও স্পাতে সময় কাটাতে পারেন। হানিমুনে বা অন্য ছুটিতে আসা কাপলদের জন্য প্রথম পছন্দ এই রিসোর্ট। এটাকে পৃথিবীর সেরা রিসোর্টের তালিকায় উপরে রাখা যায়। রিসোর্টের বাইরে ২০০০ বর্গমিটারের আউটডোর সুইমিং পুল এর অন্যতম আকর্ষণ। চারিদিকে বড় বড় পাম ও নারিকেল গাছ রিসোর্টসহ আশেপাশের সৌন্দর্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশাল গেস্টরুমগুলোর আলো ও সাজসজ্জা আপনাকে স্বপ্নময় অনুভূতি দেবে। প্রাইভেট টেরেস দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ট্রোপিকাল গার্ডেন দেখতে পারবেন। এছাড়া রেস্তারাতে মেডিটেরেনিয়ান, সাউথ ইস্ট এশিয়ান আর লোকাল খাবার পাবেন।
ব্ল্যাক রিভার জর্জেস ন্যাশনাল পার্ক হলো সাড়ে ৬ হাজার হেক্টরের বিশাল পার্ক। এখানে ৩০০ প্রজাতির ফুলের গাছ ও ৯ প্রজাতির বিশেষ পাখি আছে। এছাড়া বিলুপ্তপ্রায় গোলাপী কবুতরের দেখা মিলে। প্রকৃতি ও অ্যাডভেঞ্চার লাভারদের মরিশাসের প্রথম গন্তব্য এটি। ৫০ কিমি দীর্ঘ হাইকিং ট্রেইল ধরে ঘোরার পাশাপাশি গিরিখাত ধরে খাড়া সব পাহাড়ে চড়াও যায়। পার্কে বুনো শুকর, ছোট্ট হরিণ, লাল হরিণ, টেনরেক এবং ম্যাকাও বাঁদরের উপস্থিতি দেখা যায়। এই পার্কের মধ্যেও ৭০০ মিটার উঁচু একটি জলপ্রপাত আছে। ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেলে এখানকার লেকে সাতার কেঁটে বিশ্রাম করতে পারেন।
মরিশাসের পশ্চিমের এই শহরটি ট্রোপিকাল গার্ডেন আর রিসোর্টের জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে মন মাতানো সব সমুদ্র সৈকত। ছোট্ট ছোট্ট ভিলা, পাম ও নারিকেল গাছ, শুকনো বালু, সমুদ্রে মাঝে কায়াক এসব এখানকার মূল আকর্ষণ। রিসোর্টগুলোতে ছোট্ট ছোট্ট ছনের মত ভিলাগুলো বেশ সুন্দর। এখানে আস্ত শুকর, খাসি বা বড় টার্কির রোস্ট পাওয়া যায়। অবসরে ‘সেগা-জুম্বা’ নামক বিশেষ ধরনের নাচের মাধ্যমে একসাথে অনেক এক্সারসাইজ করা যায়। আর সাথে ছোট বাচ্চা থাকলে কিড ক্লাব ও টিন ক্লাবের মত প্লেগ্রাউন্ডে সময় কাটাতে পারবেন। অনেকেই সুস্বাদু সব রেসিপি দিয়ে সকালের নাস্তা করতে এখানে যায়।
মরিশাসের ট্যুরিস্ট অ্যাট্রাকশনের মধ্যে একটি হলো সেভেন কালারড আর্থ। প্রথম প্রথম এখানে গিয়ে খুবই অদ্ভুদ লাগবে। চারপাশে বিভিন্ন রঙের পাথর দেখতে পারবেন। মূলত লাল, বাদামী, বেগুনী, নীলসহ সাতটি আলাদা রঙের বালির স্তূপ থেকে তৈরি হওয়া টিলা আছে এখানে। স্তূপগুলো মূলত আগ্নেয়গিরি থেকে আসা লাভা থেকে তৈরি হয়েছে। ১৯৬০ সাল থেকে মানুষের দেখার জন্য এটি খুলে দেওয়া হয়। কাঠের বেড়া দিয়ে সাত রঙের পাথরগুলো রক্ষিত রাখা হয়েছে। দর্শনার্থীরা পায়ে হেঁটে হেঁটে সবকিছু দেখতে পারে।
মরিশাসের রাজধানী পোর্ট লুইসকে এখানকার সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ভান্ডার বলা যায়। এখানে ওয়াটারফ্রন্ট, চ্যাম্প ডি মার্স, হারবোরসহ বিভিন্ন জিনিস দেখতে পারবেন। সারা শহরই বর্ণিল কমলা রঙের আলোকছটায় ঢাকা থাকে। সেন্ট্রাল মার্কেটে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প, মশলা, কার্পেট ও কসমেটিক্স কেনাকাটা করতে পারবেন। অনেকে এখানের কাউডান ওয়াটারফ্রন্টের পাশ দিয়ে হেঁটে ঘুরতে পছন্দ করে। সারা শহর জুড়েই দোকান, রেস্তারা আর বিনোদনের স্থান রয়েছে। মরিশাসের ইতিহাস জানতে হলে এখানে ঐতিহাসিক ফোর্ট অ্যাডিলাড ভ্রমণ করতে পারেন। পোর্ট লুইসে অসংখ্য জাদুঘরও আছে। পুরনো ক্যামেরার ফটোগ্রাফি থেকে শুরু করে প্রাচীন সময়কার বিভিন্ন জিনিস দেখতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন।
দেশী বিদেশী বিভিন্ন উদ্ভিদের প্রজাতি দেখতে হলে বোটানিকাল গার্ডেনে যেতে পারেন। ২০২৯ সালে এই গার্ডেনের বয়স হবে ৩০০ বছর হবে। এখানে বিশাল সাইজের পদ্ন পাতা দেখতে পারেন। এছাড়া ৮৫ রকমের পাম গাছসহ অনেক খেজুর গাছ আছে। এখানকার আরেকটা আকর্ষণ হলো স্পাইস গার্ডেন। ঝালপ্রেমীরা বিভিন্ন প্রজাতির মরিচ গাছের সমারোহ দেখতে এখানে যেতে পারেন। ১৯৮৮ সালে এই গার্ডেনের নাম পাল্টে স্যার সিউসাগুর রামগুলাম গার্ডেন রাখা হয়। এখানে তার দেহাবশেষের ছাই করা সমাধিসৌধ তৈরি করা হয়েছে।
মরিশাস মূলত হিন্দুপ্রধান দেশ। এখানে বেশ কিছু মন্দির আছে। তার মধ্যে ১৮৮৮ সালে মহেশ্বরনাথ শিব মন্তিদরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। অনেকে ধারণা করে মন্দিরের নিচে প্রচুর পরিমাণে স্বর্ণমুদ্রা পুতে রাখা আছে। আবার অনেকে ভাবেন তখনকার সময়ে জলদস্যুরা এসব স্বর্ণমুদ্রার মালিক ছিল। মন্দিরের নকশা অনেকটা ওড়িষ্যার মন্দিরগুলোর মত করা হয়েছে। সবগুলো মন্দিরেই বড় বড় গম্বুজ আছে। মন্দিরের বিভিন্ন অংশ পার্বতী, গণেশ, কার্তিক ভৈরবসহ বিশেষ দেব-দেবীর জন্য বরাদ্দ রাখা আছে। প্রতিবছর অনেক মানুষ মন্দিরের শিবলিঙ্গে পবিত্র জল ও দুধ দিয়ে তাদের পূজা করতে আসে।
লে অক্স কার্ফস মূলত মরিশাসের একটি ব্যক্তিগত দ্বীপ। বিনোদনের জন্য তৈরি হবার কারণে অনেকে এটাকে লেজার আইল্যান্ড নামেও চিনে। এখানে অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট আর অ্যাডভেঞ্চার পার্ক আছে। ৮৭ হেক্টর জায়গাজুড়ে তৈরি এই দ্বীপে অনেক বড় গল্ফ কোর্স আর ড্রিংকস বার রয়েছে। এসবকিছুর পাশাপাশি ভ্রমণার্থীরা স্বচ্ছ পানির অগভীর হ্রদে নৌকায় ঘুরতে পছন্দ করে। এখানরকার রেস্টুরেন্টে সব ধরনের সামুদ্রিক মাছের বানানো খাবার পাওয়া যায়। তরুণ পর্যটকেরা এখানে প্যারাসেইলিং, স্কিয়িং, ওয়কবোর্ডিংসহ অনেক ধরণের কর্মকান্ড করতে পারবে।
খুব কাছে থেকে আগ্নেয়গিরি দেখতে হলে ট্রো অক্স সার্ফস ঘুরে আসতে পারেন। সমুদ্রপৃষ্ঠের ৬০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত আগ্নেয়গিরিটি প্রায় ১০০ মিটার প্রশস্ত। এর উপর থেকে দারুণ মনোমুগ্ধকর একটি ল্যান্ডস্কেপ দেখা যায় আর নিচে রয়েছে খুবই সুন্দর একটি হ্রদ। পর্বতারোহণকারীরা এই আওগ্নেয়গিরিরি খাত ধরে নিচে নামতে পছন্দ করে। আগ্নেয়গিরির কিছুটা দূরেই ঘুর্ণিঝড় নজরদারি করার জন্য একটা রাডার স্টেশন আছে। এখান থেকে সহজে বোটানিক্যাল গার্ডেন, ক্যামারেল জলপ্রপাত, চায়না টাউন ও চেরি টি ফ্যাক্টরিতে যাওয়া যায়।
একসময় মরিশাসের ভিসা আবেদন করা কিছুটা জটিল ছিল। দিল্লি বা কুয়ালালামপুর থেকে ট্রানজিট ভিসা নিতে হতো। এতে যেতে ১০ ঘন্টার বেশি সময় লাগতো। কিন্তু এখন মরিশাস দূতাবাসের মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা যায়। সরাসরি ভিসা আবেদন পদ্ধতি নেই বলে কিছুটা জটিল মনে হবে। তাই ভিসা প্রক্রিয়াকরণ একেবারে সহজ ও নিশ্চিন্তে শেয়ারট্রিপের মাধ্যমে ভিসা আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া [email protected]এ ইমেইল করলে কি কি লাগবে জেনে নিতে পারবেন। এভাবে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দিয়ে নিজে কোনো কষ্ট না করে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা যায়।
ভিসা অ্যাপ্লিকেশন করতে সাধারণত যা যা লাগেঃ
শহুরে রিসোর্ট ও নাইটক্লাবের মত বিনোদেনকেন্দ্র থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত, ল্যান্ডমার্ক ও আগ্নেয়গিরি সবকিছুই পাবেন মরিশাসে। জনসংখ্যা কম হবার কারণে এখানে ঘুরতে ফিরতেও বেশ আরাম পাবেন। তাই এখনো গিয়ে না থাকলে শেয়ারট্রিপের মরিশাস ভ্রমণ প্যাকেজ নিয়ে খুব সাশ্রয়ী খরচে ঘুরে আসতে পারেন। মরিশাস ভ্রমণ সম্পর্কিত যেকোন তথ্য জানতে ইমেইল করুন [email protected]এ অথবা কল করুন +8809617617617 নম্বরে।