মনিপুরী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী রাসনৃত্য

ভারতবর্ষের শাস্ত্রীয়, কথক, ভরতনাট্যম থেকে ভিন্ন আঙ্গিকের এই মনিপুরী রাসনৃত্য তার কোমলতা, আঙ্গিক, রুচিশীল ভঙ্গিমা ও সৌন্দর্য দিয়ে জয় করেছে সংস্কৃতজনের মন। এই নৃত্যকলার সার্বজনীন প্রসার ঘটে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সিলেট ভ্রমণের পর।
মনিপুরী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যের অন্যতম অনুষঙ্গ মনিপুরী রাসনৃত্য।  রাঁধাকৃষ্ণের প্রেমের মধ্য দিয়ে জীবাত্মা ও পরমাত্মার মিলনের তত্ত্বকে অনুধাবন করে মানুষের সঙ্গে প্রকৃতি বা ঈশ্বরের লীন হয়ে যাওয়াই রাসনৃত্যের মূলতত্ত্ব।  বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী মনিপুরী সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মূলতঃ এই নৃত্য পরিবেশিত হয়।

গবেষকদের মতে, মনিপুরী সম্প্রদায়ের গণ্ডি পেরিয়ে এই নৃত্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সার্বজনীন হয়ে ওঠে রবীন্দ্রনাথের হাত ধরেই।

সিলেটের মনিপুরী সমাজকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সংগ্রাম সিংহ বলেন, “রবীন্দ্রনাথ সিলেটে আসার আগে সাতবার গিয়েছিলেন ত্রিপুরায়, সেখানেও মনিপুরী নৃত্য দেখেছিলেন তিনি। আরো অনেক জায়গায় দেখেছেন, কিন্তু সিলেটে আসার পরে সেটা উপভোগ করেছেন।”

১০০ বছর আগে ১৯১৯ সালের ৬ নভেম্বর সিলেটের মাছিমপুরের মনিপুরী পল্লীতে আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।  সেদিন দুপুরবেলায় ঘণ্টাখানেক তিনি পল্লীতে অবস্থান করেন এবং পল্লীর শিল্পীদের পরিবেশনায় রাখালনৃত্য উপভোগ করেন।

তাদের জীবনযাত্রা এবং সংস্কৃতিতে মুগ্ধ হন কবিগুরু।  এই মুগ্ধতার পথ ধরে কবিগুরু শান্তিনিকেতনে মনিপুরী নৃত্য চালু করেন।

রবীন্দ্র গবেষক মিহির কান্তি চৌধুরী বলেন, “তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন যে শান্তিনিকেতনে মনিপুরী নৃত্য প্রচলন করবেন, এবং এই লক্ষ্যে তিনি ত্রিপুরা ও সিলেট থেকে নৃত্যগুরু নিয়ে গিয়েছিলেন।”

মনিপুরী নেতা নির্মল সিংহ বলেন, “মনিপুরী নৃত্যের বিশ্বব্যপী যে প্রসার ঘটেছে তার একমাত্র অবদান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের।”

সিলেট সফরে মনিপুরী পল্লী ঘুরে দেখার সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মন ছুঁয়ে যায় মনিপুরী তাঁত শিল্প আর তাদের সহজিয়া জীবনযাপন। কবিগুরুর সান্নিধ্যের শতবর্ষ স্মরণে তাই মনিপুরী পল্লীতে আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠানমালা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: