1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
মধ্যপ্রাচ্য থেকে টরন্টো
বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৭:০১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
সস্তায় বিদেশ ভ্রমণ: স্বপ্নকে সত্যি করার বিজ্ঞানসম্মত গাইড ব্রিটেনে ভিসা বদল, বাংলাদেশিদের জন্য কী পরিবর্তন ক্রিপটিক গর্ভাবস্থা – যখন নিজেই জানেন না আপনি গর্ভবতী পর্যটন ভিসায় বিদেশ গিয়ে কাজ করলে কী কী শাস্তি হতে পারে স্পা থেকে সিনেপ্লেক্স , যা যা আছে বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল বিমানবন্দরে তিন বছরে পাঁচ লাখ কর্মী নেবে ইটালি, সুযোগ পেতে পারেন বাংলাদেশিরাও চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ইইউতে অভিবাসী কমেছে ২০ ভাগ, শীর্ষে বাংলাদেশিরা মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর সমুদ্রপথে অবৈধভাবে ইউরোপ প্রবেশে শীর্ষে বাংলাদেশ ভারতের এই গ্রামে মেয়েদেরকে কাপড় ছাড়াই থাকতে হয়

মধ্যপ্রাচ্য থেকে টরন্টো

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

কিছুদিনের মধ্যে আমার স্বামীর দুই বন্ধুর সাথে পরিচয় হোল তারাও বুয়েট থেকে একসাথে পাস করেছিলেন। উনারা প্রতিদিন না হলেও দুই একদিন পর পরই আমাদের এখানে আসতেন। আমাদের এই তিন পরিবারের মধ্যে বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেলো । বসরাতে একটা সিনেমা হলে প্রতি সাপ্তাহেই হিন্দি ছবি মুক্তি পেতো । আমরা তিন বন্ধু পরিবার মিলে হিন্দি সিনেমা দেখতে যেতাম । সেটা ছিলো আমাদের একটা আনন্দ। কিছু কিছু সুন্দর পার্ক ছিলো সেখানেও আমরা ছুটির দিনে ঘুরতে যেতাম , ছবি তুলতাম। দেশে ছবি পাঠাতাম । তবে মজার ব্যাপার ছিলো , বিখ্যাত বসরাই গোলাপ দেখার যে বাসনা মনের মাঝে ছিলো সারা শহর ঘুরেও সে গোলাপের কোনো দেখা পেলাম না। তখন ভেবে নিলাম এই গোলাপ মনে হয় বহু যুগ আগের কোনো রাজা বাদশার আমলের গল্প এখন তার আর কোনো অস্তিত্ব নেই।

বসরা বা অন্যান্য যে কোন শহরে বাঙালি ভারতীও যারা ছিলেন তাদের কারোই নিজস্ব গাড়ি কেনা সম্ভব ছিলো না। গাড়ি কিনে আনতে হতো পাশের দেশ কুয়েত থেকে। আমাদেরও প্রথম দিকে গাড়ি ছিলো না। পরে অবশ্য আমরা গাড়ি কিনেছিলাম। গাড়ি না কেনার প্রধান কারন ছিলো , সবাই এই দেশে এসেছিলো কয়েক বছর থেকে টাকা জমিয়ে দেশে চলে যাওয়া কিংবা অন্য কোথাও । কাজেই সেখানে অহেতুক পয়সা তেমন কেউ নষ্ট করতো না সেখানে বাস বা ট্যাক্সি নিয়ে চলাচল খুব সহজ ছিলো । মোটামোটি সবাই টেক্সি ও বাসে চলাফেরা ঘুরাঘুরি করতো । যারা একটু কাছা কাছি থাকতেন তারা হেঁটে হেঁটেই বেড়াতেন ।এতে করো কোন দুঃখ ছিলো না। সবাই যার যা ছিলো তা নিয়েই আনন্দ করে দিন কাটাতো । সবার মনে সপ্ন ছিলো বেশ কিছু টাকা জমিয়ে দেশে ফিরে যাওয়া । তবে সেখানে এমন বাঙ্গালিও দেখেছি স্ত্রীকে কখনো ট্যাক্সিতে উঠাতেন না পয়সা খরচ হবে বলে। স্ত্রী বেচারি ক্লান্ত হয়ে ট্যাক্সি ডাকতে চাইলে স্বামী বলতো ,

জানো তো এতোটুকু পথ যেতে ট্যাক্সি এক দিনার চাইবে । কতইবা দূর হেটেই চলো । এমন শিক্ষিত চামার টাইপের লোকজন ও সেখানে দেখেছি।

সেখানে বাংলাদেশের কিছুই পাওয়া যেতো না। যদিও মধ্য প্রাচ্যর অন্যান্য দেশে বাংলাদেশ সহ অন্যান্য দেশের অনেক জিনিষই পাওয়া যেতো । ওখানে আমরা বাংলা কিছুই পেতাম না। কোনো বাংলাদেশী সাংস্কৃতিক অনুষ্টান করার কোন সুযোগ ছিলো না। বাংলাদেশের কোনো বিনোদন মুলক পত্রিকাও আমরা চোখে দেখি নি । কেউ দেশে গেলে বাংলা বই ম্যাগাজিন এসব নিয়ে আসতো । তবে আমরা নিজেদের বাড়ীতে বন্ধুরা মিলে বাংলাদেশের নানা অনুষ্টান করতাম একদম ঘরোয়া ভাবে। তারপর নানা রকমের খাবার রান্না করে খেয়ে আনন্দ করতাম।

আমার স্বামী যখন কাজে চলে যেতেন তখন আমার একাকীত্ব কাটাবার জন্য প্রায়ই হেঁটে হেঁটে বাজারে চলে যেতাম। বাজারটা আমাদের বাসা থেকে বেশ কাছেই ছিলো আর আমাদের এলাকাটা ছিলো খুবই নিরিবিলি। আমাদের ইউনিভারসিটি কোয়াটার তার কিছুটা পরেই ইরাকিদের কিছু বাড়ি । তারপর কিছুটা হেঁটে গেলেই শপিং সেন্টার যেটা আমার ভাষায় বাজার, । রাস্তায় খুব হাল্কা পাতলা ট্যাক্সি চলাচল । তবে এটা ঠিক বসরা খুব নিরাপদ শহর ছিলো । এখানে একা একা কোনো মহিলা রাতে কোনো কারনে বের হলেও কোনো রকম বিপদের সম্ভবনা ছিলো না। আমিও প্রায় দিনই এই নিরিবিলি রাস্তা দিয়ে আরাম করে হেঁটে হেঁটে বাজারে যেতাম । সংসারের টুকটাক জিনিষ কিনতাম। নতুন সংসার কতো কিছুর দরকার হয়। তাছাড়া কিছু দোকানে শাড়ি বিক্রি করতো । অবশ্যই ভারতীয় শাড়ি না, জাপানিস শিফন শাড়ি । ভালো ভালো ডিজাইনের সুন্দর সুন্দর শাড়ি । আমরা সেখান থেকেও শাড়ি কিনতাম।
পথে হেঁটে যেতে যেতে একটা দৃশ্য প্রতিদিন দেখতাম একটি তরুন কিংবা যুবক হবে হয়তো তাদের ইরাকি বাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো ।প্রতিনিয়ত দেখতে দেখতে ছেলেটাকে মোটা মুটি চিনে ফেলেছিলাম। ভেবে নিয়েছিলাম ছেলেটি হয়তো কারো জন্য অপেক্ষা করে কিংবা ছোট ভাই বোনরা স্কুল থেকে ফিরবে তাদের জন্য অপেক্ষা করে অথবা তরুন বা যুবকটির মনের মানুষ এ পথ ধরে আসা যাওয়া করে বলে তার অপেক্ষাতে থাকে। আমি যখন বাজার থেকে ফিরতাম তখন আর তাকে কখনো দেখতে পেতাম না। বাসায় ফেরার পর এই তরুনের কথা আমার আর মনেও থাকতো না। এমন কি আমার স্বামীকেও এ কথা কোন দিন বলিনি কথাছলে। কারন এটা বলার মতো কোন কথাই ছিলো না। তবে আমার আর এই তরুণটির মাঝে একটা অদৃশ্য বন্ধুত হয়েছিলো তাও দশ ফিট দূর থেকে। আমাদের কারো ভাষা কারো জানা নেই। দূর থেকে হাত নাড়া আর মৃদু হাসি বিনিময়। তারপর কতো বছর পেড়িয়ে গেছে। আমরাও আর সেখানে ছিলাম না। সে তরুণটির কথা চেহারা কিছুই আমার মনে ছিলো না। আজ এতো বছর পর ইরাকের কথা লিখতে গিয়ে তরুণটির চেহারা অদ্ভুত ভাবে আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো । জানি না ইরাকের এই ধ্বংস লিলার মাঝে সে এখনো ভোরের সূর্য দেখতে পায় কিনা? দেখতে পেলেও কি অবস্থাতে দেখতে পায় কে জানে।

ইরাকের আরেকটা বাজে জিনিষ ছিলো শাসক ( প্রেসিডেন্ট না বলে শাসকই বললাম) সাদ্দাম হোসেন জনগণকে শান্তিতে আরামে থাকতে দেননি । মানুষদের একটা টানা পোড়নের মাঝে রাখতেন। বাজারে মুরগি আছে তো ডিম নেই, আটা আছেতো ময়দা নেই। যার ফলে মানুষ যখন যেটা বাজারে আসতো সেটাই মজুত করে রাখতো ।মাঝে মাঝে শুনা যেতো মুরগি এসেছে বাজারে বক্স ভর্তি ভর্তি ফ্রোজেন ক্লিন করা মুরগী । সবাই দুইটা করে বক্স পেতেন একেকটা বক্সে দশটা করে মুরগী থাকতো । মুরগির ঝামেলা গেলো বাজারে ডিম নেই। আবার কিছুদিন পরে ডিম এলো আবার ডিমের লাইন। সবাই তিন চার ক্যরট করে ডিম কিনে আনতো । খাদ্য সংগ্রহ নিয়ে ব্যস্ত থাকাতে জনগন অন্য দিকে মন দিতে পারতো না। জ্যান্ত মুরগীও বিক্রি হতো খোলা বাজারে। স্থানিয় ইরাকীরা হাঁস মুরগি শাক সবজি নিয়ে বাজারে বসতো । বেশীর ভাগ বিক্রেতারাই ছিলো বয়েস্ক নারীরা। তাদের দেখলেই বুঝা যেতো টানা পোড়নের জীবন তাদের। নানা রকম মাংস মাছও পাওয়া যেতো বিভিন্ন দোকানে । তবে খুব যে বিপুল পছন্দের ব্যাপার ছিলো সে রকম কিছু না।

আমরা এবং আমাদের আরেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাজ্জাক ভাই আর মনজু ভাবী তাদের ২ বছরের ছেলে। আমরা ঠিক করলাম এই দেশ ছেড়ে যাবার আগে ঐতিহাসিক জায়গা গুলো দেখে আসি। আমরা ট্রেন এ আমাদের যাত্রা শুরু করলাম। ট্রেন এর ভ্রমন বেশ আরামদায়ক ছিলো । আমরা প্রথম রাজধানী বাগদাদ গেলাম। যেহেতু রাজধানী তাই বসরা থেকে স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা ঝলমলে এবং উন্নত ছিলো । কিন্তু জীবন যাত্রার মান একই ছিলো যদি না তারা ইরাকি ধনী পরিবারের লোক না হয়ে থাকে।

মধ্যবিত্তরাও মোটা মটি ছিলো । কিন্তু খাবার নিয়ে ছুটা ছুটি তাদেরও করতে হতো । বাগদাতে আমরা বড় পীর সাহেবের মাজার যিয়ারত করলাম। তারপর আমরা ব্যবিলনের শুন্য উদ্যান দেখতে গেলাম। যদিও সেখানে শুন্য উদ্যানের অসিস্ত নেই আছে শুধু স্টাকচারটা । তবুও ভালো লাগলো জায়গাটা । সেখানে গিয়ে প্রথম ক্যবেল কারে উঠলাম । এদিক সেদিক ঘুরে দেখলাম।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com