মধুচন্দ্রিমা বিবাহিত জীবনে এমন এক আয়োজন, যা নব দম্পতির মানসিক বোঝা পড়ায় বেশ অবদান রেখে থাকে। ভ্রমণে গিয়ে মধুচন্দ্রিমা এখন আর বিলাসিতা নয়, এটি এখন বিয়ে পরবর্তী গোছানো জীবনের অনুষঙ্গ। আর্থিক সামর্থ্যরে ওপর নির্ভর করে প্রেয়সির হাতে হাত রেখে দু’-চারটা দিন কোথায় কাটাবেন, দেশে না বিদেশে? তা নিয়েই লিখেছেন- মো. জাভেদ হাকিম আমাদের এই সুজলা-সুফলা, শ্যামল-সুন্দর বাংলাদেশেই রয়েছে অনেক অনেক সুন্দর জায়গা। এ রকম অনেক অনেক সুন্দরতম আকর্ষণীয় জায়গার মধ্যে মাত্র আটটি জায়গার নাম দেয়া হলো : মধুচন্দ্রিমা উদযাপনের জন্য দেশের মধ্যে সর্ব প্রথম যে জায়গাটির কথা আসবে তার নাম হলো কক্সবাজার।
দারুণ এক পরিবেশ, মনোরম তার চার পাশ। তবে নতুন যুগলবন্দীরা এই সময়টা একটু বেশিই একান্তে কাটাতে চান, তাই তাদের জন্য পরিচিত জেলাগুলোর মধ্যে থেকে বেশ নিরিবিলি ও কোলাহলমুক্ত এবং নিরাপদ স্থানগুলো হলো যথাক্রমে- কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার মনোরম সমুদ্র সৈকত পাটুয়ারটেক, প্রেয়সির হাতে হাত রেখে গল্প আর খুনসুটি করার ছলে দৌড়ে বেড়ানোর মতো চমৎকার এক সাদা বালির সৈকত। জোয়ারে মন মাতিয়ে তুলবে আর ভাটার সময় যত দূর চোখের দৃষ্টি যায়, শুধুই দেখা যাবে হাজার-লাখ ছড়িয়ে থাকা প্রবাল, জীবন্ত সেই প্রবাল পাথরে বসে শুভ্র ফেনা তোলা ঢেউয়ে পা দুলিয়ে ভেজাতে ভেজাতে করে নিন, আগামী দিনের সাংসারিক পরিকল্পনা।
দ্বিতীয় পছন্দের তালিকায় চলে আসে সেন্টমার্টিন। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। স্থানীয়রা নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও ডেকে থাকেন। কারণ সেখানে রয়েছে প্রচুর নারিকেল গাছ। জোছনা রাতে সেই গাছের নিচে বসে ঝির ঝির বাতাস আর সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে- নববধূর কোলে মাথা রেখে, নানা গল্পে মেতে থাকার মুহূর্তগুলো আজীবন স্মরণীয় হয়ে রবে।
তৃতীয় যে জায়গাটি মধুচন্দ্রিমা উদযাপনের জন্য স্মৃতির আঙিনায় জল জল করবে, সেই দুর্নিবার আকর্ষণের বর্তমান সুপার হিট পর্যটন স্পট- ঢেউ খেলানো পাহাড়ের গায়ে গড়ে তোলা সাজেক ভ্যালি, ওয়াও! সাজেক। যাদের কিছুদিন হলো বাহু বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন, কিন্তু ঠিক করেন নাই কোথায় যাবেন মধুচন্দ্রিমা উদযাপনে, তারা আর অন্য কোথাও চিন্তা না করে ছুটে যান রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালি, সাজেকের বর্ণনা আমি না হয় নাই দিলাম। আপনি নিজে গিয়েই দেখুন না সাজেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর মিজোরাম পাহাড় থেকে জেগে ওঠা সূর্যদোয়!
চতুর্থতম- মৌলভীবাজার জেলার চা পাতার দেশ শ্রীমঙ্গল। চা বাগানের মাঝে কোন রিসোর্টের ব্যালকনিতে কিংবা খোলা প্রান্তরে দু’জন দু’জনার হয়ে যাওয়ার জন্য রয়েছে বেশ সুযোগ, আরও রয়েছে নীল পদ্ম ফোটা প্রকৃতির অপার নিয়ামত মাধাবপুর লেক। যেখানে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রেয়সির সান্নিধ্যে কাটিয়ে দিন সময় নিশ্চিন্তে।
পঞ্চম স্থান হলো ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন- কোলাহল থেকে অনেক দূরে হিরণ পয়েন্টে। মধুচন্দ্রিমা উদযাপনের সময়গুলোতে মন চাইবে না আর ফিরে আসি শব্দ দূষণের ঘিঞ্জি শহরে। দিনের আলোতে ঘুরে বেড়াবেন কেওড়া শুঠি আর পূর্ণিমার আলোতে রেস্ট হাউসের- বারান্দাতে মজার মজার সব গল্প বলে।
ষষ্ঠ স্থান হলো : ঝুম ঝুম নিঝুম দ্বীপ, কেওড়া ও গোল পাতার ছায়ায় নববধূকে আলিঙ্গন করে রাখুন সারাক্ষণ। বনের হরিণও আপনাদের দু’জনের আনন্দ ঘন মুহূতের্, ছন্দপতনে ভূমিকা রাখবে না। শুধুই হবেন দু’জন দু’জনার। আর এমন পারিবেশেই গড়ে তোলা যায় ভবিষ্যত সংসারের ভিত্তি।
সপ্তম স্থান হলো রাঙ্গামাটি জেলার গহীনের সৌন্দর্য বড় হরিণা- আজকাল অনেক দম্পতি আছেন যারা ব্যক্তি জীবনে এ্যাডভেঞ্চার ট্রাভেল করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য বড় হরিণা একের মাঝে দুই, মেঘ যেখানে পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে অলস সময় কাটায়! ভাবুন তো একবার, ওমন জায়গায় মধুচন্দ্রিমার রোমাঞ্চের মাত্রাটা কেমন হতে পারে? অষ্টম স্থান হলো বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার প্রকৃতির স্বর্গ তিন্দু- তিন্দুর উপমা শুধু তিন্দুই। পাহাড়ি খর ¯্রােতা নদী শঙ্খর স্বচ্ছ জলে, রাত শেষে যখন কাকডাকা ভোরে ডুব দেবেন- তখন মনে হবে মধুচন্দ্রিমায় তিন্দু আসায়, দু’জনের বন্ধন যেন হয়ে গেল চির অটুট। উপরোক্ত স্থান ’গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে, নেটে সার্চ দিলে মিলে যাবে সব আকর্ষণীয় তথ্য। তাহলে নব দম্পতিরা ছুটে যান, অবারিত প্রকৃতির মায়া ঘেরা সেই সব জায়গায়- ভালবাসার বন্ধন অটুট আর সময়ের দাবি- মধুচন্দ্রিমা উদযাপনে। যোগাযোগ ও থাকা-খাওয়া- নিঝুম দ্বীপ যেতে হলে সড়ক ও নৌপথে হবে, তবে নৌপথে বেশ নিরাপদ।
সদরঘাট থেকে প্রতিদিন জাহাজ ছেড়ে যায় নোয়াখালীর হাতিয়া, সেখানে থেকে ট্রলারে নিঝুম দ্বীপ। থাকা-খাওয়ার জন্য থাকুন নিশ্চিন্ত। যাওয়ার আগে যোগাযোগ করে যাবেন নিউ ইস্কাটনে অবস্থিত অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রে। বান্দরবান- ঢাকা থেকে বান্দরবানের বিভিন্ন পরিবহনের এসি/নন এসি বাস সার্ভিস রয়েছে। বান্দরবানের শহর থেকে লোকাল বাস/জীপে থানচি। থানচি বাজার হতে ট্রলারে তিন্দু। থাকা-খাওয়ার জন্য কটেজ রয়েছে। ভাড়া সহনীয়। বড় হরিণা- ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি শহরের বিজার্ভ বাজার হতে জাহাজে বড় হরিণা। থাকা-খাওয়া আদিবাসীদের ভাড়া দেয়া ঘরে। পাহাড় ঘেরা ছোট্ট ঘরে মধুচন্দ্রিমার রোমাঞ্চ হয়ে উঠবে ষোলো কলায় পূর্ণ।
সুন্দরবন : ঢাকা থেকে মঙ্গলা, বন বিভাগের অনুমতি গিয়ে জালি বোটে হিরণ পয়েন্টে, যাবার আগে অবশ্যই বন বিভাগ হতে অনুমতি নিয়ে যাবেন। সাজেক ভ্যালি- ঢাকা থেকে শান্তি পরিবহনে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা। সেখান থেকে জীপে / মোটর বাইকে অপরূপ সাজে সাজানো সাজেক ভ্যালি। থাকা-খাওয়ার জন্য নেটে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন পূর্ণাঙ্গ তথ্য। সেন্টমার্টিন- ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফ, বিভিন্ন পরিবহনের বাস সার্ভিস রয়েছে। টেকনাফ থেকে জাহাজে চড়ে স্বপ্নের আঙিনা, কোড়াল দ্বীপ সেন্টমার্টিন চলে যান। থাকবেন রিসোর্টসহ বেশকিছু উঁচুমানের হোটেল-মোটেল রয়েছে সেখানে। চাইলেই কটেজের রাঁধুনী শিল্পীদের দিয়ে, নানা পদের সামুদ্রিক মাছ রান্না করিয়ে, স্বাদ নিতে পারবেন।
শ্রীমঙ্গল : বাস ও ট্রেন দুটোই চলাচল করে। তবে ট্রেনে চড়ে চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গলে যাওয়ার অনুভূতিই হবে অন্য রকম। থাকবেন-খাবেন, লাউয়াছড়া বনের পাশে গড়ে ওঠা আনন্দবাড়িসহ বেশকিছু কটেজে। তবে যেখানেই থাকুন কেন হাঁসের গোশতের ঝাল দিয়ে- চিতই পিঠা আর নীল কণ্ঠের সাত রঙের চা পান করতে ভুল যেন না হয়। খরচাতি : দশটি জায়গার মধ্যে- চারটি বাদ দিলে বাকি ছয়টি জায়গায়, এক সপ্তাহ মধুচন্দ্রিমায় খরচ হবে পনেরো হতে বিশ হাজার টাকা মাত্র। কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, সাজেক ও শ্রীমঙ্গল এই চারটি জায়গায় খরচের লাগাম নিজেকেই টানতে হবে। এক সপ্তাহ মোটামুটি ভাবে কাটাতে চাইলেও ন্যূনতম পঞ্চাশ থেকে এক লাখ টাকা খরচ হবে।
দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ
Like this:
Like Loading...