শীত এলে বিয়ের ধুম লাগে। আর মধুচন্দ্রিমা বিয়ে পরবর্তী এমন আয়োজন; যা নবদম্পতির মানসিক বোঝা পড়ায় বেশ অবদান রাখে। মধুচন্দ্রিমা এখন আর বিলাসিতা নয়, এটি এখন বিয়ে পরবর্তী গোছানো জীবনের অনুষঙ্গ। আর্থিক সামর্থ্যরে ওপর নির্ভর করে নব দম্পত্তিরা হাতে হাত রেখে দু-চারটা দিন কোথায় কাটাবেন, দেশে না বিদেশে?
আমাদের এ সুজলা-সুফলা, শ্যামল-সুন্দর বাংলাদেশেই রয়েছে অনেক সুন্দর জায়গা। এরকম অনেক সুন্দর ও আকর্ষণীয় কিছু স্থানের নাম দেয়া হল- মধুচন্দ্রিমা উৎযাপনের জন্য দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম যে জায়গাটির কথা আসবে তার নাম হল কক্সবাজার। নতুন যুগলবন্দিরা এ সময়টা একটু বেশিই একান্তে কাটাতে চান। তাই তাদের জন্য পরিচিত জেলাগুলোর মধ্যে থেকে বেশ নিরিবিলি ও কোলাহলমুক্ত এবং নিরাপদ স্থানগুলো হল- কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার মনোরম সমুদ্র সৈকত পাটুয়ারটেক, বেড়ানোর মতো চমৎকার এক সাদা বালির সৈকত।
জোয়ারে মনমাতিয়ে তুলবে আর ভাটার সময় যত দূর চোখের দৃষ্টি যায়, শুধুই দেখা যাবে হাজারও ছড়িয়ে থাকা প্রবাল-জীবন্তু। সেই প্রবাল পাথরে বসে শুভ্র ফেনা তোলা ঢেউয়ে পা দুলিয়ে ভেজাতে ভেজাতে করে নিন আগামী দিনের সাংসারিক পরিকল্পনা। পছন্দের তালিকায় চলে আসে সেন্টমার্টিন। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। স্থানীয়রা নারকেল জিঞ্জিরা নামেও ডেকে থাকেন। কারণ সেখানে রয়েছে প্রচুর নারকেল গাছ। জ্যোস্না রাতে সেই গাছের নিচে বসে ঝিরঝির বাতাস আর সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে- নববধূর কোলে মাথা রেখে, নানা গল্পে মেতে থাকার মুহূর্তগুলো আজীবন স্মরণীয় হয়ে রবে। এরপর যে জায়গাটি মধুচন্দ্রিমা উৎযাপনের জন্য স্মৃতির আঙিনায় জলজল করবে, ঢেউ খেলানো পাহাড়ের গায়ে গড়ে তোলা সাজেকভ্যালি। যারা কিছুদিন হল বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন, তারা আর অন্য কোথাও চিন্তা না করে ছুটে যান রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালি। আপনি নিজে গিয়েই দেখুন না সাজেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর মিজোরাম পাহাড় থেকে জেগে উঠা সূর্যদোয়।
ইতিহাস ঐতিহ্য ও প্রকৃতির রানী নেত্রকোনা। মধুচন্দ্রিমার রোমাঞ্চ করতে গিয়ে কেউ আর ইতিহাস-ঐতিহ্যের খোঁজ করবে না। করারও কথা নয়, তাই তাদের জন্য নেত্রকোনা জেলার সু-সং দুর্গাপুর হল বেষ্টহিট। সোমেশ্বরী নদীরপাড়ে কিংবা চীনামাটি পাহাড়ের পাদদেশে একান্তে দুজনে কাটিয়ে দিন অনেক সোনালি সময়। ঘুরে বেড়ান সীমান্ত গ্রাম লেংগুরা পর্যন্ত। মৌলভীবাজার জেলার চা পাতার দেশ শ্রীমঙ্গল। চা বাগানের মাঝে কোনো রিসোর্টের ভ্যালকনিতে কিংবা খোলা প্রান্তরে দুজন-দুজনার হয়ে যাওয়ার জন্য রয়েছে বেশ সুযোগ। আরও রয়েছে নীলপদ্মা ফোটা প্রকৃতির অপার নিয়ামত মাধবপুর লেক।
যেখানে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রেয়সীর সান্নিধ্যে কাটিয়ে দিন নিশ্চিন্তে।
ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, কোলাহল থেকে অনেক দূরে হিরণ পয়েন্টে। মধুচন্দ্রিমা উৎযাপনের সময়গুলোতে মন চাইবে না আর ফিরে আসি শব্দদূষণের ঘিঞ্চি শহরে। দিনের আলোতে ঘুরে বেড়াবেন কেওড়া শুঠি আর পূর্ণিমার আলোতে রেস্টহাউসের বারান্দাতে মজার মজার সব গল্প বলা।
ঝুম ঝুম নিঝুম দ্বীপ, কেওড়া ও গোলপাতার ছায়ায় নববধূকে আলিঙ্গন করে রাখুন সারাক্ষণ। বনের হরিণও আপনাদের দুজনের আনন্দঘন মুহূতের্, ছন্দপতনে ভূমিকা রাখবে না। শুধুই হবেন দুজন-দুজনার। আর এমন পরিবেশেই গড়ে তোলা যায় ভবিষ্যৎ সংসারের ভিত্তি। রাঙ্গামাটি জেলার গহিনের সৌন্দর্য জুড়াছড়ি আজকাল অনেক দম্পতি আছেন যারা ব্যক্তি জীবনে অ্যাডভেঞ্চার ট্রাভেল করতে পছন্দ করেন। তাদের জন্য জুড়াছড়ি একের মাঝে দুই। মেঘ যেখানে পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে অলস সময় কাটায়! ভাবুন তো একবার, এমন জায়গায় মধুচন্দ্রিমার রোমাঞ্চের মাত্রাটা কেমন হতে পারে? বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার প্রকৃতির স্বর্গ তিন্দু-তিন্দুর উপমা শুধু তিন্দুই। পাহাড়ি খরস্রোতা নদী শঙ্খর স্বচ্ছ জলে, রাত শেষে যখন কাকডাকা ভোরে ডুব দেবেন- তখন মনে হবে মধুচন্দ্রিমায় তিন্দু আসায়, দুজনের বন্ধন যেন হয়ে গেল চিরঅটুট। খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় পাহাড়ের পিঠে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা জ্যোৎস্নাবাড়ি। এছাড়া আরও রয়েছে আলু টিলা গুহাসহ অনেক বিনোদন কেন্দ্র। যেখানে নবনন্দিনীকে সঙ্গে নিয়ে অ্যাডভেঞ্চার করতে মজাই লাগবে বেশ।
কিভাবে যাবেন
নিঝুমদ্বীপ
নিঝুম দ্বীপ যেতে হলে সড়ক ও নৌপথে হবে বেশ নিরাপদ। সদরঘাট থেকে প্রতিদিন জাহাজ ছেড়ে যায় নোয়াখালীর হাতিয়া। সেখানে থেকে ট্রলারে নিঝুম দ্বীপ। থাকা খাওয়ার জন্য থাকুন নিশ্চিন্ত। যাওয়ার আগে যোগাযোগ করে যাবেন নিউইস্কাটনে অবস্থিত অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রে।
জ্যোৎস্নাবাড়ি
থাকা খাওয়ার দায়িত্ব নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন কটেজের স্বত্বাধিকারী সামির মল্লিকের কাছে। যোগাযোগ সিটিজি ফেসবুক পেজ।
বান্দরবান
ঢাকা থেকে বান্দরবানের বিভিন্ন পরিবহনের এসি/নন এসি বাস সার্ভিস রয়েছে। বান্দরবানের শহর থেকে লোকাল বাস/জিপে থানচি। থানচি বাজার থেকে ট্রলারে তিন্দু। থাকা খাওয়ার জন্য কটেজ রয়েছে। ভাড়া সহনীয়।
জুড়াছড়ি
ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি শহরের বিজার্ভ বাজার থেকে জাহাজে জুড়াছড়ি। থাকা খাওয়া আদিবাসীদের ভাড়া দেয়া ঘরে। পাহাড় ঘেরা ছোট্ট ঘরে মধুচন্দ্রিমার রোমাঞ্চ হয়ে উঠবে ষোলকলায় পূর্ণ।
সাজেক ভ্যালি
ঢাকা থেকে শান্তি পরিবহনে খাগড়াছড়ির দিঘীনালা। সেখান থেকে জিপে/মোটরবাইকে অপরূপ সাজে সাজানো সাজেক ভ্যালি। থাকা-খাওয়ার জন্য নেটে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন পূর্ণাঙ্গ তথ্য।
নেত্রকোনা
ঢাকার মহাখালী থেকে সূসং-দুর্গাপুরের বাসে। সময় লাগবে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা। থাকবেন জেলা পরিষদের ডাকবাংলোসহ ওয়াইএমসিতে। খাবেন লাল বিড়ই চালের ভাত আর সোমেশ্বরী নদীর মাছের ঝোল দিয়ে।
সেন্টমার্টিন
ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফ, বিভিন্ন পরিবহনের বাস সার্ভিস রয়েছে। টেকনাফ থেকে জাহাজে চড়ে স্বপ্নের আঙ্গিনা, কোড়াল দ্বীপ সেন্টমার্টিন চলে যান। থাকবেন সায়েরী ইকো রিসোর্টসহ বেশ কিছু উঁচুমানের হোটেল-মোটেল রয়েছে সেখানে। চাইলেই কটেজের রাঁধুনী শিল্পীদের দিয়ে নানা পদের সামুদ্রিক মাছ রান্না করিয়ে স্বাদ নিতে পারবেন।
শ্রীমঙ্গল
বাস ও ট্রেন দুটোই চলাচল করে। তবে ট্রেনে চড়ে চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গলে যাওয়ার অনুভূতিই হবে অন্যরকম। থাকবেন-খাবেন, লাউয়াছড়া বনের পাশে গড়ে উঠা আনন্দবাড়িসহ বেশকিছু কটেজে। তবে যেখানেই থাকুন না কেন হাঁসের গোস্তের ঝাল-ঝোল দিয়ে চিতই পিঠা আর নীলকণ্ঠের সাত রঙের চা পান করতে ভুল যেন না হয়।
সুন্দরবন
ঢাকা থেকে মংলা, বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে জালি বোটে হিরণ পয়েন্টে, যাওয়ার আগে অবশ্যই বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে যাবেন।
খরচাপাতি
দশটি জায়গার মধ্যে চারটি বাদ দিলে বাকি ছয়টি জায়গায় এক সপ্তাহ মধুচন্দ্রিমায় খরচ হবে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, সাজেক ও শ্রীমঙ্গল এ চার জায়গায় খরচের লাগাম নিজেকেই টানতে হবে। এক সপ্তাহে মোটামুটিভাবে কাটাতে চাইলেও ন্যূনতম ৫০ থেকে ১ লাখ টাকা খরচ হবে।