সম্প্রতি বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য বিনামূল্যে ই-ভিসা আবেদনের সুযোগ দিয়েছে পাকিস্তান। অনলাইনে আবেদন করলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে ই-ভিসা। অনেকের পাকিস্তান ভ্রমণে আগ্রহ থাকলেও বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কোনো ফ্লাইট নেই দেশটির কোনো শহরে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইন্সগুলোতে অন্য দেশের ট্রানজিট নিয়ে যেতে হয় পাকিস্তানে।
বাংলাদেশি যাত্রীদের পাকিস্তানের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দিতে দীর্ঘদিন ধরে আগ্রহ দেখিয়ে আসছিল পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ)। তবে, এখন বাংলাদেশিদের আগ্রহ দেখে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি।
জানা যায়, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ ঘোষণা করে পিআইএ। তখন ঢাকা থেকে করাচির ভাড়া ছিল ৪৫ থেকে ৫৫ হাজার টাকার মধ্যে।
বাংলাদেশি যাত্রীদের পাকিস্তানের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দিতে দীর্ঘদিন ধরে আগ্রহ দেখিয়ে আসছিল পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ)। তবে, এখন বাংলাদেশিদের আগ্রহ দেখে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি
বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ঢাকা পোস্টকে জানায়, ২০২২ সালে পিআইএ ঢাকা থেকে করাচির ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়ে তৎকালীন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মো. মফিদুর রহমানকে জানায়। তারা বাংলাদেশ থেকে যাত্রীদের করাচি, করাচি হয়ে ইসলামাবাদ ও লাহোর এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ইরান, ইরাক, সৌদি আরব, ওমান, ইয়েমেন, উজবেকিস্তান ও তুরস্কসহ আশপাশের দেশগুলোতে পৌঁছে দেওয়ার কথা জানিয়েছিল।
তবে, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য পাকিস্তান সবসময়ই একটি সংবেদনশীল রাষ্ট্র। সার্বিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বেবিচক থেকে তাদের বলা হয়েছিল, ফ্লাইট পরিচালনার আবেদনের আগে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। যদি দুই দেশ কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেবিচককে বিষয়টি অবগত করবে। তখন বেবিচক পিআইএ-কে ফ্লাইটের অনুমতি চাওয়ার জন্য বলবে। তবে, ওই সময় কূটনৈতিক চ্যানেলে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় বিষয়টি আর সামনে এগোয়নি। বর্তমানে ফ্রি-ভিসা দেওয়ার কারণে পিআইএ আবারও ফ্লাইট পরিচালনার কথা ভাবছে।
ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে পিআইএ মুখপাত্র মারভি বুকশ্ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আপাতত অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকার ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখনও পিআইএ ফ্লাইটের আবেদন করেনি। আবেদন করলে অনুমতির বিষয়টি পরবর্তীতে যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে।
বর্তমানে পিআইএ’র বহরে তিনটি এটিআর, ১৭টি এয়ারবাস, ১২টি বোয়িং ৭৭৭-সহ মোট ৩২টি উড়োজাহাজ রয়েছে। তারা পাকিস্তান ও বিশ্বের ৬৬টি গন্তব্যে (কার্গোসহ) ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে লাহোর, ইসলামাবাদ, সৌদি আরব, দুবাই, ম্যানচেস্টার ও লন্ডন।
ঢাকা থেকে পাকিস্তান যায় যে সব এয়ারলাইন্স, ভাড়া কত
বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি এয়ারলাইন্স নিজ নিজ দেশে ট্রানজিট নিয়ে পাকিস্তানে যাচ্ছে। ট্রানজিটের সময়সহ ঢাকা থেকে পাকিস্তানের করাচি যেতে সাড়ে আট থেকে ১৩ ঘণ্টা সময় লাগে। ফেরার সময় অবশ্য দুই ঘণ্টা কম লাগে। এ রুটে ইকোনমি ক্লাসে রিটার্নসহ সর্বনিম্ন ভাড়া পড়ে ৮৮ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। অথচ আগস্ট মাসে ভাড়া ছিল ৫৫ হাজার টাকা।
বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শারজাহ্তে ট্রানজিট নিয়ে এয়ার অ্যারাবিয়া সাড়ে আট ঘণ্টা, ব্যাংকক হয়ে থাই এয়ারওয়েজ সাড়ে নয় ঘণ্টা, দুবাইয়ের ট্রানজিটসহ এমিরেটস এয়ারলাইন্সে সাড়ে নয় ঘণ্টা, বাহরাইন হয়ে গালফ এয়ার ১২ ঘণ্টা, জেদ্দা হয়ে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স ১২ ঘণ্টায় করাচি পৌঁছে। এ ছাড়া কাতার এয়ারওয়েজ কাতারের দোহা এবং টার্কিশ এয়ারলাইন্স ইস্তাম্বুল হয়ে করাচি যায়। তাদের ট্রানজিট ১২ ঘণ্টার ওপরে থাকায় মোট সময় ব্যয় হয় ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা।
অন্যদিকে, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স যদি ভারতের আকাশসীমা ব্যবহার করে তাহলে চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টায় ঢাকা থেকে সরাসরি করাচি পৌঁছানো সম্ভব।
বর্তমানে ভারত নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহার করে পিআইএ’র দুটি রুটের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে। একটি পাকিস্তান থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর এবং অপরটি থাইল্যান্ডের ব্যাংকক। তবে, পাকিস্তান সরকার ভারতের সব এয়ারলাইন্সকে পশ্চিমা দেশগুলোতে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য নিজেদের আকাশসীমা উন্মুক্ত করে দিয়েছে।