ভেসে চলা ট্রেন

ফ্যান্টাসি ফিকশনের কোনো গল্প নয়। বাস্তবেই এমন উড়ন্ত রেলগাড়ি আবিষ্কার করেছে মানুষ। আর সেটি ব্যবহারও করা হচ্ছে চীন, জাপান এবং কোরিয়ায়। দারুণ এই ট্রেনের নাম ম্যাগলেভ ট্রেন।

ম্যাগনেট বা চুম্বকের একটা কারসাজি আছে এই রেলগাড়িতে। এমনিতে রেলকে অনেক বেশি দ্রুতগতি দিয়েছে বুলেট ট্রেন। তবে ম্যাগনেটিক ট্রেন তার থেকেও আরো একধাপ এগিয়ে আছে গতির হিসাবে। অন্য কোনো রেল পরিবহনের সাথে এই রেলের তুলনাই চলে না এ ক্ষেত্রে।

ম্যাগলেভ ট্রেনের কথা ইদানীং বেশি শোনা গেলেও এই ট্রেন জাপান রেলওয়ে কোম্পানি আবিষ্কার করে ১৯৭০ সালে। এই রেলগাড়ির জন্য দু’টি সংযুক্ত মেটাল কয়েল স্থাপন করা হয়। এই কয়েল থেকেই আসে ইলেক্ট্রোম্যাগনেট। পুরো প্রক্রিয়ায় ট্রেন নিজেই একটা বিশাল সুপারকন্ডাক্টিং ইলেক্ট্রোম্যাগনেটে পরিণত হয়। শুধু থামানোর সময় ট্রেনকে রাবারের চাকা নিয়ে নামানো হয়।

শুরুর সময়ে ম্যাগলেভ ট্রেনকে খুব ধীরে সামনে নেয়া হয়। এতে করে ট্রেনের নিচের চুম্বক কাজ শুরু করার জন্য যথেষ্ট সুযোগ পায়। একবার ট্রেনের গতি ঘণ্টাপ্রতি ১৫০ কিলোমিটারে পৌঁছালে তারপরেই সেটিকে মোটামুটি ১০০ মিলিমিটার বা ৪ ইঞ্চি উপরে হাওয়ায় ভাসানো সম্ভব হয়। আর একই সাথে বৃদ্ধি পেতে থাকে ট্রেনের গতিও। টেসলার হাইপারলুপের বেলায় যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল ম্যাগলেভ ট্রেনেও সেই একই প্রযুক্তি ব্যবহার করায় এটি শুধু যাত্রীদের দারুণ একটা চলাচলের সুযোগই দেয় না, একই সাথে পুরো প্রক্রিয়াকে করে ফেলে অনেক অনেক বেশি নিরাপদ।

যেকোনো প্রযুক্তি প্রতিদিন একটু একটু করে উন্নত হয়। ম্যাগলেভ ট্রেনের ব্যাপারেও একদম আলাদা কিছু নয়। তাই এই ট্রেনের গতি সর্বোচ্চ কত হতে পারে সেটি নিয়ে এখনো পরীক্ষার অবকাশ আছে। তবে ২০১৫ সালে পাওয়া তথ্যানুসারে প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০৩ কিলোমিটার অতিক্রম করেছিল এই ট্রেন। প্রতিদিনের যাতায়াতে অবশ্য আরেকটু কম গতিতেই চলে এই ট্রেন। চীন বা দক্ষিণ কোরিয়ায় সাধারণত ঘণ্টাপ্রতি ২৬৮-৩১১ মাইল চলছে ম্যাগলেভ ট্রেন। এর আগে জাপানের শিনকানসেন ট্রেনকে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেন বলে মনে করা হতো। সেটির প্রতি ঘণ্টায় ২০০-২৭৫ মাইল যাওয়ার রেকর্ড অনেক আগেই ভেঙে ফেলেছে ম্যাগলেভ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: