শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১১ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত

  • আপডেট সময় শনিবার, ১০ জুলাই, ২০২১

ইউরোপীয় বণিকেরা যখন থেকে ভারত, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকাতে অবতরণ করেছে তখন থেকে তারা আমাদের শোষণ করেছে। এই শোষণের পাশাপাশি তাদের দ্বারা কিছু কিছু সুন্দর প্রাকৃতিক জিনিসও আবিষ্কার হয়েছে। যদিও এই সব প্রাকৃতিক নিদর্শন তারা আসার আগেই বিদ্যমান ছিলো। তবু এটা বললে ভুল হবে না যে তারা এটা বিশ্ববাসীর সামনে এনেছে যাতে আমরা তা অবলোকন করতে পারি। আর আজ তেমনি একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে আলোচনা করব এবং তা হল ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত

ভয়ঙ্কর সুন্দর ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত

ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত
ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত

আজ আমরা এই জলপ্রপাত দেখে মুগ্ধ হই কিন্তু জানি না এই জলপ্রপাত আবিষ্কার এর পিছে আছে বিশাল এক ইতিহাস। আসলে আমরা সবায় ঘড়ি দেখি কিন্তু দেখিনা এই ঘড়ির পিছে লুকিয়ে আছে  কত  কলকব্জা। তো, আজ আমরা কলকব্জা সহ কিছু ফিচার জানব। ভিক্টোরিয়া ফলস বা ভিক্টরিয়া জলপ্রপাত এর সম্পর্কে। পৃথিবীর প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি হল এই ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত। রহস্যঘন আফ্রিকা মহাদেশের দুটি দেশ জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ের সীমানায় অবস্থিত এই জলপ্রপাত যা কিনা পৃথিবীর দীর্ঘতম জলপ্রপাত। জিম্বাবুয়ে ও জাম্বিয়ার সীমানাবর্তী যৌথ নদী জাম্বেজি থেকেই এই জলপ্রপাতের উৎপত্তি হয়েছে। উচ্চতা প্রায় ১০৮ মিটার চওড়ায় প্রায় ১,৭০৩ মিটার।

অবাক করা বিষয় হল! প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৯৩৫ ঘনমিটার পানি পতিত হয় এই জলপ্রপাত থেকে যা সত্যিই বিস্ময়কর। যখন জল পড়ে তখন সেই সময় প্রচণ্ড আওয়াজ সৃষ্টি করে বলে স্থানীয় ভাষায় এর নাম ‘মোজি-ওয়া-তুনিয়া’। এর অর্থ ‘বজের ধোয়া’। তাই তারা এই জলপ্রপাত এর কাছে আসতে  ভয় পেতো।

ল্যাটিন আমেরিকার সবচেয়ে সুন্দর জলপ্রপাত
ল্যাটিন আমেরিকার সবচেয়ে সুন্দর জলপ্রপাত

ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত থেকে জল পড়ার সময় জলীয়বাষ্পের মেঘ তৈরি হয় যা প্রায় ৪০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত চলে যায়  এবং প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও যা দেখা যায়। অনিন্দ্য সুন্দর এই প্রাকৃতিক নিদর্শনের অন্যতম আকর্ষণীয় দৃশ্য এখানকার জলীয়বাষ্পে আলো পড়ে রংধনুর সৃষ্টি হওয়া। আমরা জানি যে জলকণার মধ্যে দিয়ে সূর্যের আলো প্রবাহিত হলে রংধনুর সৃষ্টি হয়। যেমন আকাশে বৃষ্টির পর বিপরীত দিকে সূর্য উঠলে এই রংধনু হতে পারে। শুধু দিনেই নয়, পূর্ণিমার রাতেও এই রংধনু দেখা যায়, যা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ।

ব্রিটিশ অভিযাত্রী ডেভিড লিভিংস্টোন ১৮৫৫ সালে এই জলপ্রপাত দেখে এর নামকরণ করেন রাণী ভিক্টোরিয়ার নামে, সেই সময় তিনি ছিলেন ব্রিটিশ রাণী (এত সুন্দর একটা জিনিসের নাম অমন খারাপ এবং সাম্রাজ্যবাদী রাণীর নামে নামকরণ না করলেও হত) সেই থেকে এটি ভিক্টোরিয়া ফলস নামে পরিচিত হলেও বর্তমানে জিম্বাবুয়ে সরকার এর নামকরণ করেছে ‘মোজি-ওয়া-তুনিয়া’ ফলস। উল্লেখ যে ব্রিটিশ অভিযাত্রী ডেভিড লিভিংস্টোন ছিলেন পাদ্রী। তিনি দাস প্রথার বিরুদ্ধে ছিলেন।

অনেক কাছ থেকে দেখা যায় কিভাবে ওপর থেকে পানি নিচে পড়ে গর্জন করছে আর সে পানির তোড়ে ধোঁয়ার মতো বাষ্প উপরের দিকে  উঠে যাচ্ছে। সে দৃশ্য দেখলে বুঝতে মোটেই অসুবিধা হবে না কেন ভিক্টোরিয়াকে অনেকে বলেন ‘বিজলী ধোঁয়া’, যেমন সেই সময়কার আদিবাসীরা এটা বলেই ডাকত এবং ভয়ও পেতো। তবে দুই দেশের  কোনো পার্ক থেকেই আসলে পুরো সৌন্দর্যটা  অবলোকন করা যায় না। জিম্বাবুয়ের অংশ থেকে দেখা যায় প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ আর  অন্য দিকে জাম্বিয়া অংশ থেকে দেখা যায় প্রায় ২০ থেকে ১৫ শতাংশ মাত্র।

ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের দর্শনার্থী
ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের দর্শনার্থী

জাম্বেজি নদী থেকে প্রবাহিত এই ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত হল এই অঞ্চলের অর্থনীতি, বাস্তুসংস্থান ও সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা শুধুমাত্র পর্যটনের মাধ্যমেই নয়, বিদ্যূৎ উৎপাদনেও চরম ভাবে সাহায্য করে। আর এই নদীর জলপ্রবাহ মোটামুটি সারা বছরই গম্ভীর থাকায়, আপনি চাইলে বছরের যেকোনো সময়েই ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত ভ্রমণ করতে পারবেন।

ইউনেস্কো ১৯৮৯ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে জলপ্রপাতটিকে উভয় নামেই তালিকাভুক্ত করে। জলপ্রপাতের উভয় অংশকে সংযুক্ত করতে ভিক্টোরিয়া ফলস, জাম্বেজি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে যান চলাচল সহজ হয়েছে এবং এই যান চলাচল এর কারণেই পর্যটন শিল্প সমৃদ্ধ হয়েছে। বর্তমানে এটি বহির্বিশ্বের পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com