লাক্ষাদ্বীপে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভ্রমণ নিয়ে মালদ্বীপের মন্ত্রীদের কটূক্তিকে কেন্দ্র করে বেড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশের বিরোধ। ভারতের অন্যতম বৃহত্তম ভ্রমণ এজেন্সি ইজি মাই ট্রিপ আজ সোমবার পর্যটন নির্ভর দেশ মালদ্বীপে ফ্লাইট বুকিং স্থগিত করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে খবরটি জানিয়েছে।
ভ্রমণ এজেন্সি ইজি মাই ট্রিপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক প্রশান্ত পিট্টি মালদ্বীপে ফ্লাইট বুকিং অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার কথা বলেছেন। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আমরা এই পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি কারণ, আত্মসম্মান থাকা যে কোনো জাতিরই এটি করা উচিত। মালদ্বীপ সরকারের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে আমরা যে বিবৃতি শুনেছি তা আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর।’
পিট্টি জানান, ইজি মাই ট্রিপ হচ্ছে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম অনলাইন ভ্রমণ বুকিং প্ল্যাটফর্ম—বাজারে যার ২২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। তিনি বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক পর্যটনে অস্থায়ী হ্রাসের আশঙ্কা থাকলেও তার সংস্থা যে কোনো বিদেশি ভ্রমণ গন্তব্যের চেয়ে লাক্ষাদ্বীপের প্রচার বেশি চালাবে।
মালদ্বীপে, ভারত মহাসাগরে দৃষ্টিনন্দন দ্বীপগুলোর সমাবেশ মালদ্বীপে প্রতি বছর সর্বাধিক সংখ্যক দর্শনার্থী পাঠায় ভারত ও রাশিয়া। বার্ষিক এই সংখ্যা ২ লাখেরও বেশি। এ বছর প্রায় ২০ লাখ পর্যটক আশা করছে মালদ্বীপ। অনেকগুলো বিলাসবহুল রিসোর্টও আছে দেশটিতে। বিশ্বব্যাংকের মতে, মালদ্বীপের অর্থনীতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল।
মালদ্বীপের তিন মন্ত্রী সামাজিক প্ল্যাটফর্মে নরেন্দ্র মোদিকে ভাঁড়, সন্ত্রাসী, ইসরায়েলের পুতুল ইত্যাদি অবমাননাকর মন্তব্য করে বরখাস্তও হয়েছেন। বরখাস্ত হওয়া তিনজন হচ্ছেন—তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মরিয়ম শিউনা, ক্ষমতায়ন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মালশা শরীফ এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ মাহজুম মজিদ।
এ ঘটনার পর কয়েকজন সেলিব্রিটিসহ অনেক ভারতীয় মালদ্বীপের চেয়ে ভ্রমণের গন্তব্য হিসেবে ভারতের দর্শনীয় স্থানগুলোর প্রচার চালিয়ে সামাজিক প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করেছেন।
মালদ্বীপ সরকার বলেছে যে, যারা ভারত ও মোদি সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করেছেন তাদের মতামত সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। এর সঙ্গে সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে এতেই সম্পূর্ণ ঘটনা ধামাচাপা পড়েনি। ঐতিহ্যগতভাবেই নয়াদিল্লি ও মালের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও তাতে ফাটল ধরার ইঙ্গিত স্পষ্ট। মালদ্বীপের নতুন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মুইজু মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনাদের প্রত্যাহারের জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সে থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মোদি সম্পর্কে মালদ্বীপের তিনজন মন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক ঠিক তখনই ওঠে যখন মোহাম্মদ মুইজু ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথা ভেঙে ভারত ডিঙিয়ে চীন সফরে যাচ্ছেন। মালদ্বীপের বেশির ভাগ নেতাই নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের প্রথম আন্তর্জাতিক সফর হিসেবে নয়াদিল্লিকেই বেছে নেন। ভারত মহাসাগরীয় দেশটি মালদ্বীপে প্রভাব বিস্তারের জন্য বেইজিং এবং নয়াদিল্লি উভয়ই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। আর, মোহাম্মদ মুইজু চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে নয়াদিল্লি মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম সাহেবকে তলব করেছে। গতকাল রোববার মালেতে ভারতের মিশন মালদ্বীপের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশের পরই রাষ্ট্রদূত তলবের ঘটনা ঘটল।