ভারতে ভ্রমণকারী বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে আবারও শীর্ষ পাঁচে উঠে এসেছে বাংলাদেশিরা।
দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের এপ্রিলে ভারতে গিয়েছেন প্রায় ২৯ হাজার বাংলাদেশি, যা সে মাসে বিদেশি পর্যটকের ৪.৬ শতাংশ। এ তালিকায় বাংলাদেশের (৪ দশমিক ৬ শতাংশ), যুক্তরাষ্ট্র (১৬.৩ শতাংশ), যুক্তরাজ্য (১৩.৫ শতাংশ), অস্ট্রেলিয়া (৬.১ শতাংশ) ও কানাডা (৪.৮ শতাংশ)।
এদিকে, ভারতে ভ্রমণে যাওয়া বিদেশী পর্যটকদের একটি বড় অংশই আবার ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত এপ্রিলে ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের ২৯ দশমিক ৫ শতাংশই ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। হিসাবটি আমলে নিলে দেখা যাবে, ওই সময়ে ভারতে ভ্রমণ করা প্রকৃত বিদেশীদের মধ্যে বাংলাদেশীদের হার আরো বাড়বে।
গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা সীমিত করে দেয়। ফলে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ তালিকার বাইরে চলে যায়। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আবারও বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে।
ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশিদের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা বাদে ১৪টি ক্যাটাগরির ভিসা দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ১,৫০০ থেকে ২,০০০ ভিসা ইস্যু হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মেডিকেল, ব্যবসা, শিক্ষা ও জরুরি ভিসা।
ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয় জানায়, এপ্রিল মাসে যাওয়া বিদেশি পর্যটকদের ২৯.৫ শতাংশই ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত, ফলে প্রকৃত বিদেশিদের মধ্যে বাংলাদেশিদের হার আরও বেশি হতে পারে।
বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া অধিকাংশ পর্যটকই বর্তমানে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আটাব মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত বলেন, ‘ভারত এখন মূলত মেডিকেল ভিসা দিচ্ছে, বিজনেস ভিসাও খুব সীমিত।’
টোয়াবের তথ্যমতে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে আনুমানিক ৪০ লাখ মানুষ বিদেশ ভ্রমণ করেন, যার অর্ধেকের গন্তব্য প্রতিবেশী ভারত।
অন্যদিকে ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে দেশটিতে ৯৫ লাখের বেশি বিদেশী পর্যটক ভ্রমণ করেন। এর মধ্যে বাংলাদেশীর সংখ্যা ছিল ২১ লাখ ২০ হাজার, যা ওই বছর দেশটিতে যাওয়া বিদেশী পর্যটকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
তবে ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রগুলোতে হামলা ও মব সৃষ্টির ঘটনায় আতঙ্ক ছড়ায়। এর জেরে ভারত ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ করে দেয় এবং ভিসা প্রক্রিয়া সীমিত করে।
বর্তমানে বাংলাদেশে পাঁচটি ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে ১,৫০০ থেকে ২,০০০ ভিসা দেয়া হচ্ছে। আগে প্রতিদিন ৬,০০০ থেকে ৭,০০০ ভিসা ইস্যু হতো, যার বড় অংশই ছিল ট্যুরিস্ট ভিসা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারত ভ্রমণে বাংলাদেশীদের চাহিদা মূলত চিকিৎসা, শিক্ষা ও কেনাকাটা নির্ভর। ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ থাকায় আপাতত সংখ্যা সীমিত হলেও ভবিষ্যতে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে। দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও সাংস্কৃতিক ঘনিষ্ঠতা বিবেচনায় ভারত সরকার দ্রুতই ধীরে ধীরে ট্যুরিস্ট ভিসাও চালু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।