বিগত কয়েক বছরে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক। ইন্টারনেট আর টেকনোলোজির এই যুগে মানুষ নিজেদের কাজ আর কাজের আইডিয়া বিক্রিতে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। সেই সাথে মরিয়া সফলতা পেতেও। ওয়েবসাইট তৈরি হোক বা অনলাইনে পণ্য বিক্রি, মানুষ এখন নিজের কাজ অন্যের মাঝে পৌঁছে দিতে পারছেন খুব সহজে। আর পরিচিতও হচ্ছেন তাড়াতাড়ি।
এই সফল ব্যক্তিদের মাঝে সবাই কিন্তু একদিনেই সফল হননি। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত পরিশ্রম তাদেরকে আজকের এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। এদের মাঝে অনেকেই খুব অল্প বয়সে পেয়েছেন সফলতার দেখা। কাজে একাত্ম হবার জন্য ছেড়েছেন পড়াশোনাও। তবু দিনশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি হাতে না পেয়েও তারা আজ সফল। চলুন জেনে নিই কয়েকজন অল্প বয়সী তরুণের গল্প যারা খুব অল্প বয়সেই পেয়েছিলেন বিশ্বজোড়া খ্যাতি:
বিশ্বসেরা উদ্যোক্তাদের তালিকা যদি করতেই হয় তবে সেখানে মার্ক জুকারবার্গের নাম অবশ্যই সবার আগে থাকবে। মাত্র ১৯ বছর বয়সে একটি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শুরু করা ফেসবুক আজ তাকে দেখিয়েছে সফলতা। ফেসবুক শুরুর কয়েক বছরের মধ্যেই বিশ্বের সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে পেছনে ফেলে তালিকার শীর্ষে চলে আসে। বর্তমানে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন প্রায় হাজারখানেক কর্মী।
ফেসবুক যে ঠিক কত মানুষের অনুপ্রেরণা সে বিষয়ে সঠিক সংখ্যা হয়ত জানা নেই কারও। বর্তমানে জুকারবার্গ প্রায় ৭৫ বিলিয়ন ডলারের মালিক।
২০০৫ সালে ম্যাথিউ প্রতিষ্ঠা করেন ‘অটোমেটিক’ কোম্পানি। এরপর ২০ বছর বয়সের আগেই জনপ্রিয় ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম ‘ওয়ার্ডপ্রেস’ তৈরি করে ফেলেন
কে ভেবেছিল কলেজ থেকে ড্রপআউট হওয়া ছেলেটি ব্লগিং প্ল্যাটফর্মের খুব সাধারণ একটি আইডিয়া দিয়ে রীতিমত বিশ্বে ঝড় বইয়ে দেবে? ‘অটোমেটিক’ এর একটি অংশ হওয়ায় ওয়ার্ডপ্রেসের আলাদা কোনো অফিস নেই। ৬৯ দেশের ৮৫০ এরও বেশি কর্মী নিয়ে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে যখন শিক্ষার্থীরা কেবলমাত্র কলেজের দরখাস্ত ভালো করে লিখতে পারা শেখে, ঠিক সেই সময় ক্যাথেরিন আর তার ভাই ডেভ একটি দারুণ আইডিয়া বের করে করেন। হাই স্কুলের ইয়ারবুকগুলো ডিজিটালাইজড করে সেগুলোকে অনলাইনে প্রতিস্থাপন করাটাই ছিল তাদের শুরুর কাজ।
তাদের এই কাজে ইনভেস্ট করেন তাদের বড় ভাই জিওফ কুক। এরপরই ক্যাথেরিন আর ডেভ মাইইয়ারবুক ডট কমকে সবার সামনে নিয়ে আসেন আর বলাই বাহুল্য খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়ে যান। এটি প্রতিষ্ঠার পর ক্যাথেরিন আর ডেভ সে সময় সবচেয়ে কনিষ্ঠ মিলিওনিয়ারের খেতাব পান।
এত বছর পর, বেশ কিছু ওয়েবসাইটের সাথে তুমুল প্রতিযোগিতার পরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টাম্বলার এখনও নিজের জায়গা ধরে রেখেছে।
‘হাউ আই ব্রেভ আনু আন্টি এন্ড কো-ফাউন্ডেড এ মিলিয়ন ডলার কোম্পানি’ বইয়ের লেখক বরুণ আগারওয়াল একজন উদ্যোক্তা এবং ফিল্ম-মেকার। ভারত এমন একটি জায়গা যেখানে বাবা-মা সন্তানকে ভবিষ্যতে চিকিৎসক আর ইঞ্জিনিয়ার হবার জন্য একপ্রকার মানসিক চাপ প্রয়োগ করেন সেখান থেকেই উঠে আসা বরুণের। পরিবারের চাপে পড়ে বরুণকেও যেতে হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে।
শেষ পর্যন্ত পরিবারের চাপ আর সমাজে চাকরি খুঁজে পাওয়ার ভিড়কে না মেনে বরুণ ভিন্নধারার একটি আইডিয়া বের করে ফেললেন। স্কুলের পণ্যদ্রব্য বিক্রি শুরু করলেন তিনি। আর চলে এলেন দেশের শীর্ষ উদ্যোক্তাদের মাঝে একজন হয়ে। মাত্র ২১ বছর বয়সে বরুণ অস্কার বিজয়ী এ আর রহমানের সাথেও কাজ করেছেন।
২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা পায় ম্যাশেবল। মাত্র ২০ বছর বয়সে পিট ক্যাশমোর বিনোদন জগতের জনপ্রিয় এই সাইটটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিদিনের খবর আর বিনোদনের সকল আপডেটেড তথ্যের জন্য বেশ পরিচিত এই সাইটটি। বর্তমানে টুইটারে এই কোম্পানির ফলোয়ার প্রায় ৮.৮২ মিলিয়ন।
নিজের নাম দিয়ে হয়ত পরিচিত নন তিনি, তবে তার কাজের নাম সবাই একনামে চেনে। বলছিলাম মজিলা ফায়ারফক্সের কথা। নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেমের ব্রাউজারে অথবা শুধুমাত্র গুগল ক্রোমের মাঝেই হয়ত মানুষ আটকে থাকেন, কিন্তু সেদিক দিয়ে ফায়ারফক্স গ্রাহক শুধু তারাই যারা এক কথায় নিবেদিত।
বর্তমানে ফায়ারফক্স বেশ কিছু সুপরিচিত ওয়েব ব্রাউজারসহ উইন্ডিজ, লিনাক্স এবং অ্যান্ড্রয়েডের মতো প্লাটফর্মে কাজ করছে। ব্লেক যখন মাত্র ১৯ বছর বয়সী তখন প্রতিষ্ঠা পায় ফায়ারফক্স।
সিনের বয়স যখন ১৪, তখন তিনি তার ওয়েবসাইট ‘বিজচেয়ার ডট কম’এ ফার্ণিচার বিক্রি করা শুরু করেন। সময়টা ছিল ২০০৪। প্রতিষ্ঠানের বিক্রি বাড়তে থাকার সাথে সাথে সে সময়ই ৪০ মিলিয়নেরও বেশি আয় করে নেয় বিজচেয়ার।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ছবি রাখার ওয়েবসাইট ‘ইমেজশ্যাক’এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা লেভিন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে এটি জনসম্মুখে নিয়ে আসেন তিনি। ৫০ মিলিয়ন ডলার আয়ে আলেক্সান্ডার ছিলেন কম বয়সী এবং সফল উদ্যোক্তাদের মাঝে একজন।
ইমেজ হোস্টিং সার্ভিস জগতে এখনও ইমেজশ্যাক অবস্থান করছে ভালোভাবেই আর এত বছরেও তাদের জনপ্রিয়তা কমেনি এতটুকু।