নভেল করোনাভাইরাসে কুপোকাত বিশ্ব অর্থনীতি। আর পরিস্থিতি মোকাবিলায় একের পর এক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক বিমান যোগাযোগ। প্রতিনিয়ত সীমিত হচ্ছে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফ্লাইট পরিচালনা। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের পাশাপাশি করোনার প্রভাব পড়েছে অভ্যন্তরীণ রুটেও। এ কারণে প্রতিনিয়ত ব্যবসায়ী, পর্যটক ও প্রবাসীর ভ্রমণ বাতিল করা হচ্ছে। ফলে মন্দা চলছে ট্যুর ও ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়। কারও কারও লেনদেন চলে এসেছে শূন্যের কোঠায়। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এ খাতে কর্মহীন হতে পারেন কয়েক লাখ কর্মী। আর অজানা আতঙ্কে আছেন এসব খাতের ব্যবসায়ী ও কর্মজীবীরা।
ট্যুর ও ট্রাভেল এজেন্টরা জানান, সম্প্রতি ইউরোপের সেনজেনভুক্ত ২৬টি দেশের অন অ্যারাইভাল ভিসা ও ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। এর আগে একে একে বন্ধ হয় কুয়েত, কাতার, নেপাল, ভারত ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ। এছাড়া প্রথম ওমরাহ ও ভিজিটর ভিসা বন্ধের ঘোষণা দেয় সৌদি আরব। এতে বাংলাদেশের প্রায় ১৬ হাজার ওমরাহ যাত্রীর সৌদি যাত্রা বাতিল হয়। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে করোনার প্রভাবে ৩৩টি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হলো বাংলাদেশের। যদিও করোনাভাইরাসের কারণে অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়েছে গেছে চীনের বিভিন্ন রুটের ফ্লাইট পরিচালনা। ফলে বাধ্য হয়ে এসব যাত্রীর টিকিটের মূল্য ফেরত দেয় এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো। করোনোভাইরাসের কারণে বাতিলকৃত ফ্লাইট ও টিকিটের মূল্য ফেরত দেওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ক্ষতি হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা। আর বেসরকারি বিমান পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর আয় সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ কমেছে। এছাড়া করোনার প্রভাব যত দীর্ঘ হবে, ক্ষতি তত বাড়বে, এমনটাই আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে দ্য ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল (ডব্লিউটিটিসি) বলছে, বিশ্বজুড়ে করোনভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় পর্যটনশিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু দেশ এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ কারণে এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এমনকি কিছু বিমা সংস্থা নতুন গ্রাহকদের জন্য ভ্রমণ বিমা স্থগিত করেছে। সংস্থাটি নতুন পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, এভাবে চলতে থাকলে ২০২০ সালে ভ্রমণ খাতের অন্তত ২৫ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হবে। এ মহামারির কারণে পাঁচ কোটি মানুষ কর্মহীন হতে পারে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারিতে পর্যটনশিল্পে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। ভ্রমণপিপাসুরা এখন আগের মতো ট্যুরে যাচ্ছেন না। ফলে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও ভিড় কমতে শুরু করেছে। বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকের আগমন শূন্যের কোঠায় পৌঁছেছে। দেশের অধিকাংশ হোটেলের ৫০ শতাংশের বেশি খালি পড়ে আছে। এছাড়া কক্সবাজার, কুয়াকাটা ও পার্বত্য জেলায় বিদেশি পর্যটকের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। আর দেশ থেকে পর্যটক, চিকিৎসা ও ওমরাগামী যাত্রীও শূন্যের কোঠায়। দ্রুতই করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে না এলে এ সংকট আরও প্রকট হবে। এ খাতে ক্ষতির পরিমাণও অনেকাংশ বৃদ্ধি পাবে। এ বিষয়ে ইনফিনিটি ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস ম্যানেজিং পার্টনার আরাফাত রুবাই শেয়ার বিজকে বলেন, করোনার কারণে নতুন করে কোনো এয়ার টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। গত কয়েক দিনে আমাদের ট্যুর ও ট্রাভেল ব্যবসা পুরোপুরি স্থবির হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত টিকিট ফেরত আসছে। এভাবে আর কতদিন চলবে বোঝা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তবে বর্তমান পরিস্থিতির কারণে যে ক্ষতি পর্যটন খাতে হয়েছে, তা পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। এতে হয়তো অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে।