মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৯ অপরাহ্ন
Uncategorized

ব্রুকলিনে পরকীয়া কান্ডে তুলকালাম

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২১

পুরনো প্রেম, পারিবারিক কলহ ও সাংসারিক বিচ্ছেদে নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনে গত মঙ্গলবার ঘটে গেল এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। নেমে এলো সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি পরিবারে কান্না ও হতাশা। হাতাহাতি ও রক্তারক্তির মধ্যদিয়ে তা গড়ায় থানা পুলিশ পর্যন্ত। মধ্যরাত অবধি ব্রকলিনের ৬৬ প্রিসিংকটের বাইরে ছিলেন প্রায় শতাধিক বাংলাদেশি। আর ভেতরে আটক ২ সন্তানকে ছাড়িয়ে আনতে আলোচনা করছিলেন বাংলাদেশি কমিউনিটির পরিচিত মুখ আব্দুল হান্নান পান্না। তারই স্ত্রী ইমরানা ফেরদৌসের কারণেই তাঁর ও ২ সন্তানের থানায় অবস্থান। এ ঘটনাটি দ্রুত বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়ে। ব্রুকলিনে টক অব দ্য কমিউনিটিতে পরিণত হয়।

প্রবাসের অন্যতম বৃহৎ আঞ্চলিক সংগঠন সন্দ্বীপ সোসাইটির সভাপতি আব্দুল হান্নান পান্না। এলাকার অধিকাংশ বাংলাদেশি তাকে পান্না ভাই বলেই চেনেন। কনস্ট্রাকশন ব্যবসার সাথে তিনি দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে ইমরানা ফেরদৌস’র সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। চট্রগ্রামের হালিশহরে সুন্দরী ফেরদৌসের বেড়ে ওঠা। বাবা মা’র অনুরোধে তিনি বিয়ে করেন জনাব পান্নাকে। বিয়ের আগে মইনুল হক রাসেল নামে একজনের সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল বলে এলাকায় গুঞ্জন ছিল। পান্না তা আমলে না নিয়ে স্ত্রীকে আমেরিকায় নিয়ে আসেন। ২৩ বছরের সংসার জীবনে তাদের ২টি ছেলে সন্তান রয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরেই পান্না ও ফেরদৌসের দাম্পত্য জীবনে খুনসাটি চলছিল। ভালো লাগা ও ভালোবাসায় ঘাটতি দেখা দেয় পারস্পরিক সম্পর্কে। বনিবনা মাঝে মধ্যেই চরমে পৌঁছায়। গেল বছর রাতের আঁধারের মতোই অন্ধকারের ছায়া নেমে আসে পান্নার পরিবারে। ২১ ও ১৭ বছরের সন্তান এবং স্বামীকে ত্যাগ করে ২৪ বছর আগের কৈশোর বয়সের বন্ধুর কাছে চলে যান ইমরানা ফেরদৌস। বাংলাদেশে মিলিত হন বাল্য বন্ধু রাসেলের সাথে। সময়ের তালে মইনুল হক রাসেলও অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। তাঁরও রয়েছে স্ত্রী-সন্তান। কিন্তু প্রেম ভালবাসা দুই মহাদেশ থেকে দুজনকে টেনে এনেছে শৈশবের চির পরিচিত শহর চট্টগ্রামে। ঘটেছে দুই যুগ আগের হারিয়ে যাওয়া প্রেমের পুনর্মিলন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পান্না জানতে পারেন রাসেল ও ফেরদৌস বিয়ে করেছেন। তবে তাঁর দালিলিক প্রমাণ নেই তাঁর হাতে। রাসেল ফেসবুক আইডিতে নিজেকে বিবাহিত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর ইমরানা ফেরদৌস তাঁর নতুন ফেসবুক আইডি খুলেছেন ইমরানা রাসেল নামে। তবে রাসেলের সাথে চলাফেরার খবর ব্রকলিন ও চট্টগ্রামে ভেসে বেড়াচ্ছে। এমনি এক পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার ব্রকলিনের ইস্ট ৭ স্ট্রিটের বাসার সামনে আসেন বন্ধু রাসেলসহ ইমরানা। পান্না বাসায় ছিলেন না। দুই ছেলে তখন ছিলেন। ইমরানা বাসার ভেতর প্রবেশ করতে চাইলে তারা মাকে বাধা দেন। ইমরানা ফেরদৌস তাঁর সন্তানদের জানান প্রয়োজনীয় কাগজ ও নিজের কিছু জিনিস নেবার জন্য এসেছেন। বাসায় বাবা না থাকায় তারা আটকে দেন মাকে। শুরু হয় তর্কাতর্কি। এতে রাসেলও অংশ নেয়। এক পর্যায়ে রাসেলের সাথে পান্নার দুই সন্তানের হাতাহতি হয়। এতে এলাকার লোকজনও ছেলেদের হয়ে মারামারিতে অংশ নেয়। রাসেলের গা দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। ইমরানা ফেরদৌস পুলিশ কল করে। গ্রেফতার হন তাঁরই ঔরষজাত দুই সন্তান।

আজকালের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় আব্দুল হান্নান পান্নার সাথে। তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় আপোষরফার মাধ্যমে আমরা ডিভোর্সের দিকে এগুচ্ছিলাম। দুই পক্ষের আইনজীবীরা কাজও করছেন। ওর কিছু দাবি ছিল তা মেন নিয়েই ফয়সালার পথে রয়েছি। কিন্তু মঙ্গলবারের ঘটনায় আমি মর্মাহত। কেন সে আমার বাসায় আসলো। কেন আমার সন্তানদেরকে তার কথিত স্বামী বা বয়ফ্রেন্ড নিয়ে এসে আক্রমণাত্মক আচরণ শুরু করলো। আমার ছেলেরা তখন বলছিল, মা আমরা ভালো আছি। ওকে নিয়ে তুমি চলে যাও। আমার নামে লোকটি গালিগালাজ করছিল। ছোট ছেলের দিকে তেড়ে আসছিল। এ সময় বাংলাদেশি প্রতিবেশিরা এগিয়ে এলে এক পর্যায়ে ঐ লোকটি আহত হয়। ফেরদৌস ৯১১ কল করলে আমাদের ছেলেদের পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। রাতে থানায় গিয়ে আমি তাদের নিয়ে আসি। থানার লোকজন আমাদের প্রতি যথেষ্ট সম্মান দেখিয়েছে। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। জনাব পান্না বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কমিউনিটিতে আছি। সবার সাথে কাজ করছি। এমন একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি আমাকে পড়তে হবে তা ভাবতেও পারিনি।

এদিকে মইনুল হক রাসেল (৪৩) বৃহস্পতিবার আজকালকে বলেন, আমি ইমরানাকে ভালোবাসি। স্কুল জীবন থেকে আমাদের সম্পর্ক। ১৬ বছর বয়সে অর্থের লোভে আত্মীয়স্বজন তাঁকে জোর করে আমেরিকা প্রবাসী পান্নার সাথে বিয়ে দেয়। প্রথম দিন থেকে অপ্রাপ্ত বয়স্কা ইমরানাকে নির্যাতন করে। ১৬ বছর বয়সেই তাকে প্রেগন্যান্ট করে পান্না। আমেরিকায় এনেও তাঁকে নির্যাতন চালায়। ২২টি বছর সে চোখ বুজে নির্যাতন ও অত্যাচার সহ্য করেছে। গত বছর সে সেপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়। আমার কাছে চলে আসে। আমি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই। বাংলাদেশে গিয়ে ইমরানা পান্নাকে তালাক দেয়। আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা বিয়ে করিনি। তবে বলতে পারেন সামাজিকভাবে বিয়ে করেছি। একসাথে থাকছি।

ইমরানা ফেরদৌসের গর্ভে এখন আমার ৫ মাসের সন্তান রয়েছে। আমেরিকায় আসার পর পান্নার সাথে তার দ্রুত ডিভোর্সের ফরমালিটিজ শেষ করতে চাচ্ছি আমরা। কিন্তু পান্না নানা অজুহাতে সময় ক্ষেপণ করছে। আমি নিজে অস্ট্রেলিয়ান সিটিজেন। সেখানে প্রফেশনাল জব করি আমাকে ফিরে যেতে হবে। এরমধ্যেই মঙ্গলবার আমার ও ইমরানার ওপর হামলা হলো। ইমরানা ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমি আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। পান্নার সন্তান স্থানীয় মাস্তানদের নিয়ে আমাদের মারধর করে। থানায় মামলা হয়েছে।

আমরা পান্নার বাসার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। ইমরানা তাঁর ছোট ছেলেকে দেখে গাড়ি থেকে নামে। কথা বলতে থাকে। কিন্তু এক পর্যায়ে ইসাম ও তার বড় ভাই ইসাফ লোকজন নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। ইমরানা মাটিতে পড়ে যায়। এটি একটা ক্রিমিনাল কেস। আমি সিভিল কোর্র্টে স্যু করবো। রাসেল বলেন, পান্না একজন প্রতারক। সে ইমারানার সই জাল করে ব্যাংক থেকে ৭ লাখ ডলার লোন নিয়েছে। তা এখন ইমরানার ঘাড়ে চাপাতে চাচ্ছে। স্টিমুলাসের চেকও সে তাকে দেয়নি। বরং বিভিন্নভাবে আমাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে রাসেল বলেন, আমি বিবাহিত। আমার সংসার রয়েছে। তবে আমি ইমরানাকেও ভালবাসি। আগামীতে আইন মোতাবেকই তাকে বিয়ে করবো। আমরা এখন গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ডের মতো বসবাস করছি। ইমরানা-পান্নার ভেজাল শেষ হলেই আমরা আনুষ্ঠানিকতায় যাবো।

আজকাল

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com