আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে ব্রিটেনে কেবল পিএইচডি ছাড়া অন্য কোনও কোর্সের শিক্ষার্থীদের স্পাউস বা পরিবারের সদস্যদের না আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। তবে এটিকে দেশটির হোম অফিসের অমানবিক ও অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষার্থী, ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির আইনজীবী ও শিক্ষকরা বলছেন, ব্রিটেনে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে স্পাউস না আনার সিদ্ধান্ত স্পষ্টতই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করা।
বৃহত্তর সিলেটের খ্যাতিমান আইইএলটিএস শিক্ষক কাজী মাহফুজুর রহমান বুধবার (২৪ মে) ফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, স্টুডেন্ট ভিসা থেকে ওয়ার্ক পারমিট বা অন্য কোনও ভিসায় সুইচ করার বিদ্যমান সুযোগটি বন্ধ করে দেওয়া প্রকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। কিন্তু জানুয়ারি থেকে কেবল পিএইচডি ছাড়া শিক্ষার্থীরা স্পাউস বা পরিবার আনতে না পারার যে পদ্ধতি ব্রিটিশ সরকার নিয়েছে, তা অমানবিক।
একজন শিক্ষার্থীর স্বামী বা স্ত্রী ব্রিটেনে থাকবেন নাকি দেশে থাকবেন, সে অধিকার শিক্ষার্থীর হাতে থাকা উচিত। আগামী জানুয়ারি সেশনে বাংলাদেশ থেকে আমাদের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী তাদের স্পাউস, পরিবারসহ ব্রিটেনে আসার জন্য আইইএলটিএস-সহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু ব্রিটেন সরকারের গতকালের ঘোষণায় স্পষ্টতই তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মনে হতাশা নেমে এসেছে।
কাজী মাহফুজুর রহমান আরও বলেন, স্পাউস আনার নামে চুক্তিভিত্তিক বিয়ের নামে কিছু ভুয়া, যোগ্যতাহীন মানুষ গত কিছুদিনে ব্রিটেনে এসেছে এটা সত্য। কিন্তু কিছু প্রতারণার জন্য একজন শিক্ষার্থীর তার পরিবারের সঙ্গে থাকার সুযোগ বা পুরো সিস্টেমটাই বন্ধ করে দেওয়া হোম অফিসের যুক্তিসংগত সিদ্বান্ত নয়। হোম অফিস বরং অধিকতর যোগ্য ও দক্ষ স্পাউস আনার ক্ষেত্রে নতুন কিছু শর্তারোপ করতে পারতো। স্পাউস হিসেবে দক্ষ জনশক্তি ব্রিটেনে এলে তারা ব্রিটেনের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারতো।
পূর্ব লন্ডনের চ্যান্সেরি সলিসিটর্সের কর্ণধার ব্যারিস্টার ইকবাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হোম অফিসের গতকালের ঘোষণা স্পষ্টভাবেই বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করা। একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে আসা তার স্পাউস এ দেশে কাজ করে শিক্ষার্থীর বিশাল অঙ্কের টিউশন ফি, বাড়ি-ভাড়া ও দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহে সহযোগিতা করতে পারতো। ঘরে-বাইরে একজন শিক্ষার্থীকে তার স্পাউস সহযোগিতা না করতে পারলে ব্রিটেনে একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করা দুরূহ ব্যাপার।
ব্রিটেনের কিংস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থী ইফতেখার আলম রাফিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, স্পাউস না আনতে পারলে একা এ দেশে একজন শিক্ষার্থীর জীবন নানাভাবে হতাশায় ফেলতে পারে। হোম অফিসের স্পাউস না আনতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে হাজারো প্রকৃত শিক্ষার্থীর জন্য হতাশা ও দুঃখজনক।
লন্ডনের লেক্সপার্ট সলিসিটর্সের ব্যারিস্টার শুভাগত দে বলেন, কয়েক বছর ধরে আমরা দেখছি হোম অফিসের বহু সিদ্ধান্ত সমন্বিত, দীর্ঘমেয়াদি ও পরিকল্পিত নয়। একেক সরকার ও একেক হোম সেক্রেটারির আমল অভিবাসনের ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদে উপযোগিতা ও সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই বিভিন্ন সিদ্বান্ত নেওয়া হচ্ছে। এতে ব্রিটেনে ছাত্র বা কাজের ভিসায় আসা অভিবাসীরা শুধু যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসব ভিসার ফাঁকফোকর ব্যবহার করে একশ্রেণির দালাল লাভবান হলেও রাষ্ট্র হিসেবে ব্রিটেন ও দেশটির নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সমাজকর্মী নজরুল ইসলাম বলেন, যতবারই ব্রিটেনে বাংলাদেশি স্টুডেন্টদের দরজা উন্মুক্ত হয়েছে, ততবারই কিছু সংঘবদ্ধ চক্র সুযোগের অপব্যবহার করে স্টুডেন্টদের বিভ্রান্ত করেছে। হোম অফিস বাংলাদেশের স্টুডেন্টদের জন্য এ দেশে আসার ও লেখাপড়া করার যে গাইডলাইন তৈরি করে, এই সংঘবদ্ধ চক্র অনেক ক্ষেত্রে তার অপব্যবহার করছিল।
তিনি বলেন, ইস্ট লন্ডনকে কেন্দ্র করে একটা জমজমাট ব্যবসা হয়ে উঠেছিল। অনেক লোক এই ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়েছে। আমরা কোনও সুযোগ পেলে সেটা কাজে লাগানোর চেয়ে সেটার অপব্যবহার করে পুরো সিস্টেমটা বন্ধ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি।