রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ০১:১০ পূর্বাহ্ন

ব্রিটেনের স্বাস্থ্যখাতে বিদেশি কর্মী নিয়োগে অগ্রাধিকারে যারা

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫

স্বাস্থ্যখাতে বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সমাজসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগে দেশটিতে অবস্থানরত বিদেশিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। বুধবার এই খাতে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি এমন নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে ভুক্তভোগীদের শনাক্ত ও রক্ষায় সরকারি উদ্যোগ ‘ন্যাশনাল রেফারেল মেকানিজম’ (এনআরএম) গত বছর রেকর্ড ১৯ হাজার ১২৫ জনকে আধুনিক দাসত্বের সম্ভাব্য শিকার হিসাবে নথিভুক্ত করেছে। আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে সংখ্যাটি ছিল ১৭ হাজার।

এছাড়াও স্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিচর্যা খাতে কর্মরত অভিবাসী কর্মীরাও শোষণের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বাস্তবতা হলো, যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিচর্যা খাতটি অনেকাংশেই অভিবাসনের উপর নির্ভরশীল। তাই এই খাতে শ্রম শোষণ ও নিপীড়ন ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে ব্রিটিশ সরকার।

গত বছরের নভেম্বরে নিয়োগকারী কয়েকটি সংস্থা বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দিয়েও তাদের কাজ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ওই সময় অভিযুক্ত নিয়োগকারী সংস্থাগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল সরকার। ফলে, কর্মহীন অভিবাসী কর্মীদের সঙ্গে বেকার কর্মীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। কেউ কেউ কোনোরকম দিন পার করছেন। এরপরই স্বাস্থ্যখাতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন করে বিদেশি কর্মীদের যুক্তরাজ্যে না এনে, বরং দেশটিতে অবস্থানরত কর্মীদের কাজ দিতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

গত ২৭ নভেম্বর যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠান শ্রম শোষণ ও শ্রম অধিকার লঙ্ঘনে জড়িত তাদের বিদেশি কর্মী নিয়োগের অনুমতি বাতিল করা হবে। অভিযোগ প্রমাণের ভিত্তিতে এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত হতে পারে।

যুক্তরাজ্যে অভিবাসী কর্মী নিয়োগকারী অন্তত ১৭৭টি সামাজিক পরিচর্যা ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বা কেয়ার ফার্মের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও শ্রম শোষণের অভিযোগ উঠার পর এমন সিদ্ধান্ত নেয় লেবার পার্টির সরকার।

দেশটির অভিবাসন ও নাগরিকত্ব বিষয়ক মন্ত্রী সীমা মালহোত্রা তখন বলেছিলেন, শ্রম শোষণ অগ্রহণযোগ্য। গত মাসে স্বাস্থ্য ও পরিচর্যাখাতে কর্মী ভিসায় যুক্তরাজ্যে আসা তিন হাজারেরও বেশি মানুষের ওপর একটি জরিপ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ব্রিটেনে আসার সঙ্গে সঙ্গে কাজ পাওয়ার আশায় অনেক অভিবাসী নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ দিয়েছেন। তারপরও কোনো কাজ পাননি।

জরিপে দেখা যায়, অনেক অভিবাসী চাপাচাপি, গাদাগাদি করে এক ঘরে বাস করছেন এবং ন্যূনতম মজুরির চেয়েও কম আয় করছেন তারা। ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিদেশি পরিচর্যাকর্মী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত অভিবাসী কর্মীদের নিয়োগে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এতে যারা দেশটিতে কাজের আশায় এসে কোনোরকম জীবন যাপন করছেন, তাদের অবস্থার উন্নতি হবে।

ব্রিটিশ অভিবাসনমন্ত্রী সীমা মালহোত্রা বলেন, ‘‘যারা যুক্তরাজ্যে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পরিচর্যায় এসেছেন, তাদের নির্যাতন ও শোষণমুক্ত থাকা উচিত।’’

ইংল্যান্ডের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পরিচর্যাকর্মী অভিবাসী। তাদের অনেকেই নাইজেরিয়া, জিম্বাবুয়ে, ভারত এবং ফিলিপাইনের মতো দেশ থেকে এসেছেন। ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছেড়ে আসার পর হাজার হাজার শূন্যপদ পূরণ এবং বয়স্ক নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে অভিবাসী পরিচর্যাকর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হয়।

দাতব্য সংস্থা এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলো বলছে, ব্রেক্সিট-পরবর্তী ব্যবস্থায় ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোকে স্পনসরের মাধ্যমে কর্মীদের ভিসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে অনেক অসাধু নিয়োগকর্তা অভিবাসী কর্মীদের নির্যাতন, শোষণের পাশাপাশি নির্বাসনের হুমকিও দিয়ে থাকে।

ইনফো মাইগ্রেন্টস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com