শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:০১ অপরাহ্ন

ব্রিটিশ রাজার কাজ কী

  • আপডেট সময় সোমবার, ৮ মে, ২০২৩

বর্ণাঢ্য অভিষেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শপথ নিয়েছেন ব্রিটেনের নতুন রাজা তৃতীয় চার্লস। গতকাল শনিবার ব্রিটেনের ৪০তম রাজা হিসেবে তিনি শপথ নেন। এ সময় তাঁকে রাজমুকুট পরিয়ে দেওয়া হয়। প্রশ্ন উঠতে পারে­– গণতান্ত্রিক যুক্তরাজ্যে মন্ত্রিসভা আছে, সরকারপ্রধানও আছেন, তাহলে রাজার কাজ কী? বিবিসির বিশ্লেষণে এ বিষয়ে বিস্তারিত উঠে এসেছে।

ব্রিটেনে রাজা কার্যত রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। তবে তাঁর ক্ষমতা প্রতীকী এবং আনুষ্ঠানিক। তিনি রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকেন। প্রতিদিন ব্রিটিশ সরকারের কাজের রিপোর্ট তাঁর কাছে লাল রঙের একটি চামড়ার বাক্সে করে পাঠানো হয়। এর মধ্যে থাকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বৈঠকের আগে সে সম্পর্কে ব্রিফিং, অথবা কাগজপত্র, যাতে রাজা স্বাক্ষর করেন। সাধারণত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সপ্তাহে প্রতি বুধবার বাকিংহাম প্রাসাদে গিয়ে রাজার সঙ্গে দেখা করে সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে রাজাকে অবহিত করেন। এসব বৈঠক একান্ত ব্যক্তিগত এবং সেখানে যেসব কথাবার্তা হয়, সেগুলোর আনুষ্ঠানিক কোনো রেকর্ড রাখা হয় না।

সাধারণ নির্বাচনে যে দল জয়ী হয়, তার প্রধানকে সরকার গঠনের জন্য বাকিংহাম প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সাধারণ নির্বাচনের আগে রাজা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের বিলুপ্তি ঘোষণা করেন। এ ছাড়া এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রাজা সংসদীয় বছর শুরু করেন। এ অনুষ্ঠানকে বলা হয়, স্টেট ওপেনিং। হাউস অব লর্ডসের সিংহাসনে বসে রাজা ভাষণ দেন, যাতে সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।

এর বাইরেও অনেক গুরুদায়িত্ব রয়েছে ব্রিটিশ রাজার। যখনই পার্লামেন্টে কোনো বিল পাস হয়, সেটিকে আইনে পরিণত করতে রাজাকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করতে হয়। এ ছাড়া প্রতি বছরের নভেম্বরে রাজা বার্ষিক স্মরণ বা রিমেমব্রান্স অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। এটি অনুষ্ঠিত হয় লন্ডনের সেনোটাফ বা জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভে। বিভিন্ন দেশ থেকে রাষ্ট্রপ্রধানরা যুক্তরাজ্য সফরে যাওয়ার আগে রাজা তাঁদের আমন্ত্রণ জানান। এ ছাড়া ব্রিটেনে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সঙ্গেও তিনি নিয়মিত সাক্ষাৎ করে থাকেন।

রাজা তৃতীয় চার্লস তাঁর প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে জার্মানি গিয়েছিলেন, যেখানে তিনি পার্লামেন্টে ভাষণ দেন। তিনিই প্রথম ব্রিটিশ রাজা, যিনি জার্মান পার্লামেন্টে ভাষণ দিলেন। ব্রিটিশ রাজা কমনওয়েলথেরও প্রধান। ৫৬টি স্বাধীন দেশ নিয়ে এটি গঠিত। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর জনসংখ্যা প্রায় ২৫০ কোটি। ব্রিটেনের রাজা এ কমনওয়েলথ দেশগুলোর মধ্যে ১৪টি রাষ্ট্রের প্রধান।

রাজা তৃতীয় চার্লসের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কুইন কনসর্ট ক্যামিলা তাঁকে সহযোগিতা করেন। এ ছাড়া রাজপরিবারের সঙ্গে যে ৯০টি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক আছে, সেগুলোকেও তিনি সমর্থন দিয়ে থাকেন। এসব দাতব্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা এবং ধর্ষণ কিংবা যৌন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের সাহায্য ও সহযোগিতা করা ইত্যাদি।

কোথায় থাকেন :  রাজা তৃতীয় চার্লস এবং কুইন কনসর্ট ক্যামিলা বাকিংহাম প্রাসাদে থাকেন। এর আগে তাঁরা লন্ডনের ক্ল্যারেন্স হাউস এবং প্লস্টারশায়ারের হাইগ্রোভে সময় ভাগাভাগি করে থাকতেন। রাজপরিবারের অন্য বাসভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে– উইন্ডসর ক্যাসল, নরফোকের স্যানড্রিংহাম, এডিনবরায় প্যালেস অব হলিরুড হাউস এবং অ্যাবার্ডিনশায়ারের ব্যালমোরাল ক্যাসল। প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস ২০২২ সালের আগস্টে পশ্চিম লন্ডনের কেনসিংটন প্যালেস ছেড়ে উইন্ডসর এস্টেটের অ্যাডেলেইড কটেজে চলে যান।

রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানে শতাধিক দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, বিশিষ্ট ব্যক্তি অংশ নিয়েছেন। বেশ জাঁকজমকভাবে ঐতিহ্যবাহী এ অনুষ্ঠান হয়েছে। সর্বশেষ ১৯৫৩ সালে রাজা চার্লসের মা রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেক অনুষ্ঠান হয়। বলা হচ্ছে, সে সময় আরও বেশি জাঁকজমকভাবে অনুষ্ঠান পালন করা হয়েছিল। হাজার বছর ধরে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতেই রাজপরিবারের অভিষেক অনুষ্ঠান হয়ে আসছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com