১। ১৫০০ সালে পর্তুগিজ অভিযাত্রী পেদ্রু আলভারেজ ব্রাজিলে এসে পৌঁছানোর পর থেকে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্রাজিল ছিলো একটি পর্তুগিজ উপনিবেশ। এরপর বিভিন্ন উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে ১৮২২ সালে ব্রাজিল পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। প্রাথমিক ভাগে এটি ব্রাজিলীয় সাম্রাজ্য হিসেবে সার্বভৌমত্ব অর্জন করলেও ১৮৮৯ সাল থেকে এটি একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে শাসিত হয়ে আসছে। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী ব্রাজিল একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র।
২। ৮৫ লাখ ১৫ হাজার ৭৬৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে মোট জনসংখ্যা প্রায় ২১ কোটি। জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ।
৩। ব্রাজিলের সরকারী ভাষা পর্তুগীজ। এটি দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র ও বিশ্বের সর্ববৃহৎ পর্তুগিজভাষী রাষ্ট্র। এছাড়াও দেশটিতে অসংখ্য স্থানীয় আদিবাসীয় ভাষা প্রচলিত আছে।
৪। দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৫ ভাগই ক্যাথলিক খ্রিস্টান। তবে অন্য ধর্মাবলম্বীর পাশাপাশি বেশ কিছু মুসলমানও রয়েছে এখানে। যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫-৬ শতাংশ।
৫। ব্রাসিলিয়া ব্রাজিলের অন্যতম বৃহত্তম নগরী ও জাতীয় রাজধানী। ব্রাসিলিয়া আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত শ্বেতবর্ণ ভবনে পূর্ণ একটি শহর। শহরটিকে ১৯৫৭ সালে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয় এবং ১৯৬০ সাল থেকে এটি ব্রাজিলের জাতীয় রাজধানী। মূল ব্রাসিলিয়া শহরে বর্তমানে ৩০ লক্ষেরও বেশি লোকের বাস। জনসংখ্যার বিচারে এটি ব্রাজিলের ৩য় বৃহত্তম মহানগরী। এটি একইসাথে বিশ্বের পর্তুগিজভাষী রাজধানী শহরগুলির মধ্যে বৃহত্তম।![](https://banglai-bissho.com/wp-content/uploads/2020/01/Brasilia_Congresso_Nacional_05_2007_221.jpg)
সাও পাওলো জনসংখ্যার বিচারে ব্রাজিলের বৃহত্তম শহর। একই সাথে এটি দক্ষিণ আমেরিকা ও দক্ষিণ গোলার্ধের বৃহত্তম শহর। শহরটি ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে সাও পাউলো প্রদেশে অবস্থিত। এটি ব্রাজিলের সবচেয়ে সম্পদশালী শহর। আশেপাশের শহরতলী নিয়ে গঠিত বৃহত্তর সাও পাউলো নগরীতে প্রায় ২ কোটি লোক বাস করেন।![](https://banglai-bissho.com/wp-content/uploads/2020/01/city-2278497_1920.jpg)
তবে এ দুইটি প্রধান শহরের বাইরেও ব্রাজিলের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হচ্ছে দেশটির পুরনো রাজধানী এবং সমুদ্র তীরবর্তী শহর রিও ডি জেনেইরো। এই শহরের মনোরম সৌন্দর্য, সমুদ্র সৈকত এবং শহরের বনভূমি ছাড়াও শহরের অন্য আকর্ষণ এর ঐতিহাসিক ভবনগুলো। এ শহরেই অবস্থিত যীশু খ্রিষ্টের বিখ্যাত সেই মূর্তি। কর্কভাদো পাহাড়ের চূড়ায় মূর্তিটি এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছে যেন যিশু তার দুহাত প্রসারিত করে পুরো শহরকে আলিঙ্গন করছেন। এই শহরেই ব্রাজিলের বিখ্যাত মারাকানা ফুটবল স্টেডিয়াম অবস্থিত।![](https://banglai-bissho.com/wp-content/uploads/2020/01/rio-de-janeiro-1963744_1920.jpg)
৬। ব্রাজিলের জলবায়ু সাধারণত উষ্ণ থাকে। অঞ্চলেরভেদে গড় তাপমাত্রা ১৫ থেকে ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকে।
৭। দেশটিতে একটি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। ১৮২৪ সালে ব্রাজিলের প্রথম সংবিধান পাশ হওয়ার পর থেকে দেশটিতে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সরকার ব্যবস্থা চলে আসছে, যা বর্তমানে কংগ্রেস নামে পরিচিত।
৮। আমাজান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নিরক্ষীয় বন, যা দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উত্তরভাগের ৯টি দেশে অবস্থিত। এর মধ্যে আমাজানের ৬০% রয়েছে ব্রাজিলে। হাজারও প্রজাতির জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ এই ইকোসিস্টেম অত্যন্ত শক্তিশালী, যা কিনা মিলিয়ন বছর ধরে টিকে আছে।
৯। ব্রাজিলে ঘন ও বেশ জটিল নদী ব্যবস্থা বিদ্যমান, যা বিশ্বের অন্যতম জটিল নদী ব্যবস্থা। ব্রাজিলের উল্লেখযোগ্য নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে আমাজন, যা বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী ও নিষ্কাশিত পানির পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় নদী।![](https://banglai-bissho.com/wp-content/uploads/2020/01/earth20130607-full.jpg)
১০। ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ১৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত ন্যাশনাল পার্ক। আমাজান বনের পাশে হওয়ায় ন্যাশনাল পার্কে রয়েছে হরেক প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণবৈচিত্র্য।
১১। ব্রাজিলে বিভিন্ন জাতির লোকের বসবাস। আদিবাসী আমেরিকান, পর্তুগিজ বসতিস্থাপক এবং আফ্রিকান দাসদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক ব্রাজিলের জাতিসত্তাকে দিয়েছে বহুমুখী রূপ। মিশ্র সংস্কৃতির দেশ হলেও তাঁরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও রীতিনীতি ধরে রেখেছে। এর মধ্যে কার্নিভাল হচ্ছে ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক উৎসব, যা ইস্টারের চল্লিশ দিন আগে অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পুরো দেশের কাজকর্ম প্রায় এক সপ্তাহের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এই কার্নিভাল মূলত ১৮৫০ সাল থেকে শুরু হয়। কার্নিভালের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে সাম্বা নাচ। এটি ব্রাজিলীয় গান ও নাচের একটি ধরণ, যা সারা বিশ্বে পরিচিত।![](https://banglai-bissho.com/wp-content/uploads/2020/01/party-1085831_1280.jpg)
১২। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ হিসেবে রাশিয়া, কানাডা, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই ব্রাজিলের অবস্থান। কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর এটি আমেরিকা মহাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। দেশটিতে মোট তিনটি টাইম জোন অবস্থিত।
১৩। দেশটির সঙ্গে অন্যান্য দেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। এই দেশের পাসপোর্টে ১১০টি দেশে বিনা ভিসায় ভ্রমণ করা যায়, যা পাসপোর্ট শক্তি সূচকে ১২তম স্থানে রয়েছে।
১৪। ব্রাজিলে বিসৃত ও বৈচিত্রময় পরিবহন ব্যবস্থা বিদ্যমান। জনপরিহন ও পণ্যপরিবহনে মূলত সড়ক পথই ব্যবহৃত হয়। দেশটির বিদ্যমান সড়ক পথের মোট দৈর্ঘ্য ১৯ লক্ষ ৯০ হাজার কিলোমিটার। সড়ক পথের সম্প্রসারণের দিকে বেশি নজর দেওয়ায় ১৯৪৫ সাল থেকে ধীরে ধীরে ব্রাজিলের রেলপরিবহন ব্যবস্থার পরিধি সংকুচিত হয়েছে। ব্রাজিলে প্রায় ২,৫০০ টি বিমানবন্দর ও বিমান অবতরণের স্থান রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সাও পাউলো শহরের কাছে অবস্থিত সাও পাউলো-গুয়ারুলহোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্রাজিলের সর্ববৃহৎ ও ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
১৫। ২০০৭ সালে জাতীয় ইন্ডিয়ান ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে ব্রাজিলে ৬৭টি ভিন্ন উপজাতীয় গোত্রের অবস্থান উল্লেখ করা হয়, যাদের সাথে কোনো রাষ্ট্রীয় যোগাযোগ নেই। ব্রাজিলেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অযোগাযোগকৃত মানুষের বাস করে বলে ধারণা করা হয়। এরা বেশিরভাগই আমাজন বনে বাস করে।![](https://banglai-bissho.com/wp-content/uploads/2020/01/amazon-indians-69589_1920.jpg)
১৬। ফুটবল খেলা ব্রাজিলের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দল ফিফা বিশ্ব র্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থানীয় দলগুলোর মধ্যে একটি। দলটি এ পর্যন্ত পাঁচবার বিশ্বকাপ জয়লাভ করেছে, যা একটি বিশ্বরেকর্ড।
১৭। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল ও বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ব্রাজিলের অর্থনীতি দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ, বাজার বিনিময়ের ভিত্তিতে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম ও ক্রয়ক্ষমতা সমতার ভিত্তিতে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম অর্থনীতি। ব্রাজিলের অর্থনীতি একটি মিশ্র অর্থনীতি। দেশটির যথেষ্ট পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, যা এর অর্থনীতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। ব্রাজিলের মূল রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে উড়োজাহাজ, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, গাড়ি, ইথানল, টেক্সটাইল, সয়াবিন এবং কর্নড বিফ।
১৮। ব্রাজিলের সরকারী মুদ্রা ব্রাজিলিয়ান রিয়াল। ১ ব্রাজিলীয়ান রিয়াল সমান প্রায় বাংলাদেশী ২০ টাকা ৭৩ পয়সা এবং ১৭.৩৫ ভারতীয় রুপী।
১৯। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় $১.৮৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় প্রায় $৮,৭৯৭ মার্কিন ডলার।
২০। ব্রাজিলের ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৫৫।