শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৪ অপরাহ্ন

বৈধভাবে ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়ার ভিসা নিবেন যেভাবে

  • আপডেট সময় শনিবার, ৩ জুন, ২০২৩
Man Traveled Around Europe with Family for Cheap

বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষের মনেই একটা ইচ্ছা থাকে একবার ইউরোপে গিয়ে নিজের বা পরিবারের ভবিষ্যৎ বদলে দেওয়ার। আর হবেই না কেন? দেখা যায় ইউরোপ প্রবাসী পরিবারে একজন থাকলেও সেখানে স্বচ্ছলতা আসে অতি দ্রুত। অর্থনৈতিক এই সাপোর্ট একটা পরিবারকে কতো ভালো একটা পর্যায়ে নিয়ে যায় সে রূপ দেখা যায় বাংলাদেশের পুরান ঢাকা বা সিলেট অঞ্চলে। 

তো, সিলেট অঞ্চলের অনেকেই লন্ডনকে দ্বিতীয় সিলেট বলে থাকেন। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি, সেখানে আসলেই অনেক বেশি সিলেটি মানুষ দেখা যায়। সিলেটের এখনও অনেক স্বপ্নবিলাসী কিশোর-যুবকদের স্বপ্ন ইউরোপে গিয়ে তার পরিবারের হাল ধরা, কিংবা স্রেফ নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করা। কিন্তু সবাই কি জানে বর্তমানে ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশ থেকে যেতে কোন প্রক্রিয়াগুলোর মধ্য দিয়ে যাওয়া লাগে?

ইউরোপ। অনেকের কাছেই স্বপ্ন! ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়া, নিজের ভাগ্যবদলিয়ে নতুন সূচনা করা এগুলো কে না চায়? তবে এক্ষেত্রে অনেকেই সেটাকে অনেক বেশি জটিল মনে করে পিছু হটেন। তাদের জন্যই আইনিউজে দেওয়া হলো বৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার শুরু থেকে শেষপর্যন্ত প্রসেসিংয়ের নিয়মাবলী। ভূমিকা আর লম্বা না করে এবারে শুরু করা যাক!

আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও ডেনমার্ক ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য মোট ২৫টি দেশের জন্য নিচের ভিসার (ধরণগুলি) প্রযোজ্য।

ব্লু কার্ড

বেশিরভাগের যাওয়ার মাধ্যমটা হতে পারে এই ব্লু কার্ড। ইউরোপের এই ব্লু কার্ড পেতে পারেন আপনিও। তবে সেক্ষেত্রে জেনে নিন ব্লু কার্ড কাদের দেওয়া হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশ থেকে আসা উচ্চ শিক্ষিত, দক্ষ কর্মী অথবা গবেষকদের ব্লু কার্ড দেয়া হয়৷ এক্ষেত্রে নিচের শর্তগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে৷

  • আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন৷
  • আবেদনকারীকে কাজের চুক্তিপত্র অথবা কাজের প্রস্তাব থাকলে তার প্রমাণ দেখাতে হবে৷
  •  ব্লু কার্ড আবেদনকারীকে উচ্চ বেতনধারী হতে হবে৷ যেমন, ২০১৯ সালে জার্মানিতে এজন্য আবেদনকারীর বার্ষিক ন্যুনতম বেতনের শর্ত ছিল ৫৩,৬০০ ইউরো৷ তবে বিজ্ঞান, গণিতসহ কর্মীর অভাব রয়েছে এমন পেশার জন্য তা ৪১,৮০৮ ইউরো পর্যন্ত বিবেচিত৷
  • ডেনমার্ক ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব দেশেই ব্লু কার্ডের জন্য আবেদন করা যায়৷ নির্দিষ্ট দেশের অভিবাসন বিষয়ক কার্যালয়ে আবেদনটি জমা দিতে হবে৷
  • আবেদনকারী নিজে, তার চাকরিদাতা অথবা তার পক্ষ থেকে কোনো আইনি প্রতিষ্ঠানও আবেদন জমা দিতে পারবে৷

জার্মানিতে আবেদন ফি হিসেবে জমা দিতে হবে ১১০ ইউরো৷ তিন মাসের নবায়নের জন্য দিতে লাগবে ৬৫ ইউরো, এর বেশি হলে ৮০ ইউরো৷ কার্ড নতুন করে তুলতে চাইলে ৬০ ইউরো প্রদান করতে হবে৷

আইসিটি বা ইন্ট্রা-কর্পোরেট ট্রান্সফার্স

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশের কোনো ব্যক্তি যদি এমন কোনো সংস্থায় কাজের সুযোগ পান, যেটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে নথিভুক্ত, তারা এই বিভাগে ভিসার আবেদন করতে পারেন। এমন সংস্থাগুলি তাদের ইইউ-স্থিত অফিসে কর্মীদের বদলি করলে সেক্ষেত্রে কর্মীদের এই ভিসার দরকার পরে।

সেক্ষেত্রে নিচের শর্তগুলি পূরণ করতে হবে-

  • আবেদনকারী বা নিয়োগকারী সংস্থাকে প্রমাণ করতে হবে যে আবেদনকারীর নিজের দেশে ও ভিসাপ্রদানকারী দেশে সংস্থাটির অফিস রয়েছে।
  • আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হবে যে আবেদনের তিন থেকে বারো মাস আগ পর্যন্ত তিনি সেই সংস্থায় কর্মরত।
  • নিয়োগের চুক্তি দেখাতে হবে।
  • যে কাজের জন্য নিযুক্ত করা হচ্ছে, তার জন্য সকল শিক্ষাগত ও ব্যবহারিক যোগ্যতা আবেদনকারীর রয়েছে।
  • প্রয়োজনীয় পাসপোর্ট বা ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট আবেদনকারীর রয়েছে।
  • প্রমাণ করতে হবে যে, আবেদনকারীর স্বাস্থ্যবীমা রয়েছে বা ভবিষ্যতে থাকবে।

এছাড়াও, আবেদনকারীর নিয়োগের চুক্তিতে থাকতে হবে নিচের তথ্যগুলি-

  • বদলির সময়সীমা,
  • বদলির পর কর্মস্থানের ঠিকানা,
  • ম্যানেজার, বিশেষজ্ঞ বা প্রশিক্ষণরত কর্মী হিসাবে নিয়োগের সম্মতি,
  • বেতন ও অন্যান্য শর্তাবলী,
  • বদলির সময় শেষ হলে কর্মীর দেশে ফিরে যাবার বিষয়ে উল্লেখ।

এছাড়াও, আবেদনকারীকে ইউরোপে একটি বাসস্থান বা ঠিকানা দেখাতে হবে। তাছাড়া, বদলি হওয়া কর্মীর মাইনে অন্যান্য সমমানের কর্মীদের চেয়ে কম হতে পারবে না।

গবেষকদের জন্য ভিসা

তিন মাসের বেশি সময়ের জন্য যে ব্যক্তি কোনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বীকৃত গবেষণা সংস্থার সাথে গবেষণার চুক্তিতে যাবেন, তাদের জন্য রয়েছে এই বিভাগের ভিসাটি।

সেক্ষেত্রে প্রথমে, গবেষণা সংস্থার সাথে ‘হোস্টিং এগ্রিমেন্ট’ বা আমন্ত্রণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে হবে আবেদনকারীকে। এছাড়া আবেদনকারীকে দেখাতে হবে যে তার এই গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা, পর্যাপ্ত অর্থ ও স্বাস্থ্যবীমা রয়েছে।

এইসব শর্ত পূরণ করার পর ব্যক্তিকে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট ও হোস্টিং এগ্রিমেন্ট দেখাতে হবে। যদি গবেষণার সময়ের সব খরচ কোনো সংস্থা বহন করে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পৃষ্ঠপোষকতার কাগজও ভিসার আবেদনের সময় দেখাতে হবে।

এই ভিসায় থাকাকালীন কোনো ব্যক্তি তার পরিবারকেও সাথে নিয়ে আসতে পারেন এবং ভিসার মেয়াদ থাকাকালীন সেই ব্যক্তি একজন সাধারণ ইইউ নাগরিকের সকল শ্রম অধিকার যেমন সামাজিক নিরাপত্তা ও গণপরিবহন ব্যবহারে ছাড়ের মতো সুবিধা ভোগ করতে পারেন।

মৌসুমী কর্মী বা সিজনাল ওয়ার্কার ভিসা

ইইউবহির্ভূত রাষ্ট্রের রাগরিকরা যদি একটি বিশেষ মরসুম বা সময়ের জন্য কোনো ইইউ-স্থিত সংস্থায় কাজের সুযোগ পান, সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে এই ভিসাটি।

সেক্ষেত্রে নিচের নথিগুলি দেখাতে হবে-

  • কাজের চুক্তিপত্র যেখানে মৌসুমী কর্মী হিসাবে নিয়োগের কথা উল্লেখ আছে। এছাড়া, ঠিক কোন ধরনের কাজ করতে হবে, বেতন কত, প্রতি সপ্তাহ বা মাসে কত ঘণ্টার কাজ, ছুটির অধিকারসহ সব বিষয় স্পষ্ট করে লেখা থাকতে হবে সেখানে।
  • পাসপোর্ট বা হালনাগাদ ট্রাভেল ডকুমেন্ট।
  • স্বাস্থ্যবীমা।
  • কাজের মেয়াদ থাকাকালীন নির্দিষ্ট বাসস্থানের তথ্য।

বিভিন্ন দেশের নিয়মভেদে, এই ভিসা সাধারণত এক বছরে পাঁচ থেকে নয় মাসের কাজের জন্য দেওয়া হয়ে থাকে। এই ভিসায় নিজের পরিবারকে সাথে আনার অধিকার থাকেনা। শ্রম অধিকারের ক্ষেত্রে ঠিক কোনগুলি প্রযোজ্য, তাও বিশেষভাবে উল্লেখ করা থাকে। দেশের নিয়মভেদে, এই অধিকারগুলি আলাদা আলাদা।

শিক্ষার্থী বা স্টুডেন্ট ভিসা

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণদৈর্ঘ্যের বা ফুলটাইম কোর্সে অ্যাডমিশন বা ভর্তি হওয়া কোনো ব্যক্তি এই ভিসার জন্য আবেদন করবেন।

এই ভিসা আবেদন করতে প্রমাণ করতে হবে যে,

  • আবেদনকারী একটি কোর্সে অ্যাডমিশন পেয়েছেন, যা শেষ করলে তিনি কোনো নির্দিষ্ট সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমা বা ডিগ্রী লাভ করবেন,
  • পড়ালেখার মেয়াদের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ, যা দিয়ে আবেদনকারী থাকা-খাওয়া, পড়াশোনার পাশাপাশি দেশ থেকে আসা-যাওয়ার খরচও মেটাতে পারবে,
  • প্রমাণ করতে হবে যে, আবেদনকারী কোনোভাবেই ইউরোপের গণনিরাপত্তা, গণস্বাস্থ্য বা গণনীতির জন্য ঝুঁকি বয়ে আনবে না,
  • প্রমাণ করতে হবে যে, আবেদনকারী পড়াশোনার কোর্সের ভাষাটি জানেন,
  • প্রমাণ করতে হবে যে কোর্সটির প্রয়োজনীয় টিউশন ফি আবেদনকারী দিয়েছেন।

এছাড়া, নিচের নথিগুলি লাগবে-

  • পাসপোর্ট বা ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট
  • অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে বাবা-মা বা আইনি অভিভাবকের সম্মতি
  • স্বাস্থ্যবীমা
  • ভিসার আবেদনের ফি দেবার প্রমাণপত্র।

শিক্ষার্থীরা পার্টটাইম বা স্বল্পমেয়াদী কাজ করতে পারেন। এক্ষেত্রে, প্রতিটি ইইউ-রাষ্ট্র নিজেদের আলাদা আলাদা নিয়ম ঠিক করেছে, কিন্তু একজন শিক্ষার্থী সব ইইউ রাষ্ট্রেই সর্বনিম্ন (দশ ঘণ্টা) প্রতি সপ্তাহে কাজ করার সুযোগ পান।

কোনো কোনো দেশে এক বছর পড়াশোনা করার পর কাজের অনুমতি পাওয়া যায়, তার আগে নয়।

এই ভিসায় ইউরোপের কোনো দেশে এসে সেই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও যদি কেউ থেকে যান, তাহলে সেক্ষেত্রে তিনি অবৈধ হিসাবে গণ্য হবেন। এমন ক্ষেত্রে, সেই ব্যক্তিকে দেশ থেকে বের করে দেবার অধিকার রয়েছে ভিসাপ্রদানকারী দেশের।

অবৈতনিক প্রশিক্ষণ, এক্সচেঞ্জ স্কুল শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবী ভিসা

অবৈতনিক কাজের জন্য প্রশিক্ষণের চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তি, যার এই অবৈতনিক কাজের সময়ে জীবনযাপনের পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে, তারা এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।

অবৈতিনিক প্রশিক্ষণের জন্য আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হবে যে,

  • ইইউ-স্থিত কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সাথে তিনি চুক্তিবদ্ধ,
  • প্রশিক্ষণের সময়ের সকল খরচ বহন করতে তিনি সক্ষম। পাশাপাশি, যাওয়া-আসার সকল খরচও তিনি দিতে পারবেন,
  • এছাড়া, দেশভেদে প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজন হতে পারে ভাষাজ্ঞানও।

এক্সচেঞ্জ স্কুল শিক্ষার্থী বিভাগে ভিসার জন্য আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হবে যে,

  • মাধ্যমিক স্তরের কোনো শিক্ষাকেন্দ্রে পড়াশোনার জন্য আবেদন গৃহীত হয়েছে,
  • কোনো ইইউ সদস্য রাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী শিক্ষার্থী এক্সচেঞ্জ প্রকল্পে অংশগ্রহণ করছেন,
  • শিক্ষার্থীর সকল খরচ বহন করছে হোস্ট বা আমন্ত্রণকারী সংস্থা,
  • কোনো হোস্ট ফ্যামিলি বা পরিবারের সাথে থাকার অনুমতি,
  • হোস্ট রাষ্ট্রের বেঁধে দেওয়া বয়সসীমার মধ্যে রয়েছে আবেদনকারীর বয়স।

স্বেচ্ছাসেবী বিভাগে ভিসার জন্য আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হবে যে,

  • হোস্ট রাষ্ট্রের বেঁধে দেওয়া বয়সসীমার মধ্যে রয়েছে আবেদনকারীর বয়স,
  • যে সংস্থায় স্বেচ্ছাসেবার জন্য যেতে ইচ্ছুক তিনি, সেই সংস্থার সাথে চুক্তিবদ্ধ রয়েছেন। সেই চুক্তিতে থাকতে কাজের সময়, কাজের ধরন সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য থাকতে হবে।
  • এছাড়া, ভিসার মেয়াদের সকল খরচ বহন করতে পারেন তিনি, তাও দেখাতে হবে।
  • অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বাবা-মা বা আইনি অভিভাবকের অনুমতি দেখাতে হবে।
  • স্বাস্থ্যবীমা রয়েছে।
  • সংস্থার চিঠি যেখানে তারা আবেদনকারীর দায়িত্ব গ্রহণ করছে।

এই ভিসার ক্ষেত্রেও, ইউরোপের কোনো দেশে এসে সেই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও যদি কেউ থেকে যান, তাহলে তিনি অবৈধ হিসাবে গণ্য হবেন। এমন ক্ষেত্রে, সেই ব্যক্তিকে দেশ থেকে বের করে দেবার অধিকার রয়েছে ভিসাপ্রদানকারী দেশের।

সূত্র: InfoMigrants বাংলা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com