ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব থেকে কৌশলে টাকা তুলে নিচ্ছে প্রতারক চক্র। গত কয়েক সপ্তাহে অনেক শিক্ষার্থী প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
ভুক্তভোগী অন্তত ৭–৮ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন প্রথম আলোর এ প্রতিবেদক। তাঁরা বলেন, প্রতারক চক্রের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তা বা শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিয়ে জানায় বোর্ড বৃত্তির টাকা আটকে গেছে। তারা শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য ও ওটিপি চায়। এরপর ওই হিসাব থেকে তারা টাকা তুলে নেয়। এভাবে অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকও প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নূরী জান্নাত বলেন, ‘আমার বাবার কাছে কল দিয়ে বলা হয়েছিল যে আমি বোর্ড বৃত্তি পেয়েছি। ওই প্রতারক আমার নাম, বিভাগ, এমনকি ইন্টার্নশিপ সম্পর্কেও জানত। এত তথ্য জানার কারণে আমার বাবা সন্দেহ করেননি। বাবা ওটিপি নম্বর দেওয়ার পরপরই টাকা কেটে নেওয়া হয়। তখন বাবা বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন।’
কৃষি অনুষদের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাকে কল দিয়ে এক ব্যক্তি প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন। ওই ব্যক্তি আমার একাডেমিক ও ব্যক্তিগত তথ্য জানান। তাঁকে সন্দেহ করার কোনো সুযোগ ছিল না। এরপর তিনি বৃত্তির টাকার সমস্যা সমাধানে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অন্য একটি নম্বর চান। ওটিপি নম্বর দেওয়ার পরপরই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উধাও হয়ে যায়। এত তথ্য তাঁরা জানল কীভাবে, সেটা আমার মাথায় আসছে না।’
আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘এক ব্যক্তি আমার মায়ের কাছে কল দিয়ে জানান, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। আমি বোর্ড বৃত্তি পেয়েছি এবং অ্যাকাউন্টে কিছু সমস্যা আছে। এ কারণে তিনি অভিভাবকের কাছে কল করেছেন। মা প্রথমে তাঁকে বিশ্বাস করেছিলেন। তবে ওটিপি নম্বর চাওয়ার সময় সন্দেহ করেন এবং পরে কল কেটে দেন।’
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একটি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক জানান, প্রতারণা মূলত ঘটে অনলাইন ব্যাংকিং পদ্ধতির মাধ্যমে। হ্যাকাররা সাধারণত একটি ভুয়া করপোরেট বা অন্য কোনো সিস্টেম তৈরি করে। তারা ভুক্তভোগীর মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে আবেদন করে। এর ফলে সিস্টেম অনুযায়ী ভুক্তভোগীর কাছে একটি পিন বা এককালীন পাসওয়ার্ড (ওটিপি) চাওয়া হয়। ভুক্তভোগী সেই পিন বা ওটিপি প্রদান করলে সঙ্গে সঙ্গেই টাকা কেটে নেওয়া হয়। এটি একধরনের প্রতারণার কৌশল।
ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা আরেকটি প্রতারণার কৌশল জানান। তিনি বলেন, হ্যাকাররা ভুক্তভোগীর অ্যাকাউন্টে প্রবেশের জন্য বিভিন্ন ফাঁকফোকর (লুপ) খুঁজে বের করে। তারা ‘পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন’ বা এ ধরনের সেবার মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারের আবেদন করে এবং সেই পিনটি ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সংগ্রহ করে। এরপর তারা অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে টাকা তুলে নেয়।
বোর্ড বৃত্তির টাকা বা এ-সংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কখনো কাউকে মুঠোফোনে কল করে না। শিক্ষার্থীদের সব অনলাইন গ্রুপে এই প্রতারণা সম্পর্কে সতর্ক বার্তা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
আবদুল আলীম, প্রক্টর, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আবদুল আলীম বলেন, ‘বোর্ড বৃত্তির টাকা বা এ-সংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কখনো কাউকে মুঠোফোনে কল করে না। যদি কোনো সমস্যা থাকে, তা লিখিত নোটিশের মাধ্যমে জানানো হয়। শিক্ষার্থীদের সব অনলাইন গ্রুপে এই প্রতারণা সম্পর্কে সতর্ক বার্তা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।’
শিক্ষার্থীদের তথ্য কীভাবে ফাঁস হচ্ছে, জানতে চাইলে আবদুল আলীম বলেন, ‘প্রতারক চক্র বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহ করে। এমনকি আমার কাছেও আর্থিক সাহায্য চেয়ে কল করেছিল। যেখানে আমার পারিবারিক সব তথ্য জানিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখার দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিয়ে আলোচনা করব, যাতে শিক্ষার্থীদের তথ্য সুরক্ষার বিষয়ে আরও জোর দেওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের তথ্য ফাঁস রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’