সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:১১ পূর্বাহ্ন

বিশ্বের সমুদ্র-বরফের পরিমাণ ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্তরে

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের সমুদ্রের বরফ বর্তমানে ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে বলে স্যাটেলাইট তথ্য থেকে জানা গেছে। খবর বিবিসির।

সমুদ্র আচ্ছাদিত বরফ সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে পৃথিবীকে ঠাণ্ডা রাখতে সহায়তা করে। তবে, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে এই উজ্জ্বল স্তর হ্রাস পাওয়ায় নিচের অন্ধকার সমুদ্র আরও বেশি তাপ শোষণ করছে, যা পৃথিবীর উষ্ণতা আরও বাড়িয়ে তুলছে।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দিনে আর্কটিক ও অ্যান্টার্কটিকার সম্মিলিত সমুদ্র-বরফের পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৫৭৬ কোটি বর্গকিলোমিটার, যা ২০২৩ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির আগের সর্বনিম্ন রেকর্ড ১ দশমিক ৫৯৩ কোটি বর্গকিলোমিটারকে ছাড়িয়ে গেছে।

আর্কটিক সমুদ্রের বরফ দীর্ঘদিন ধরেই উষ্ণায়নের কারণে কমছে। ১৯৮০-এর দশকে গ্রীষ্মের শেষে বরফের পরিমাণ যেখানে গড়ে ৭০ লাখ বর্গকিলোমিটার ছিল, ২০১০-এর দশকে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪৫ লাখ বর্গকিলোমিটারে।

অন্যদিকে, ২০১৫ সালের আগ পর্যন্ত অ্যান্টার্কটিকার সমুদ্র-বরফ তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিক নিম্ন স্তরের রেকর্ড গড়েছে। গবেষকরা মনে করছেন, এটি অস্থায়ী পরিবর্তন নয়, বরং একটি স্থায়ী প্রবণতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডাটা সেন্টারের (এনএসআইডিসি) গবেষক ওয়াল্টার মেয়ার বলেন, ‘প্রতিবছর নতুন তথ্য বলছে, এটি সাময়িক পরিবর্তন নয়, বরং স্থায়ী একটি নতুন বাস্তবতা, যেমনটি আমরা আর্কটিকে দেখেছি। অ্যান্টার্কটিকার বরফ কমার হার এখন নতুন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে।’

অ্যান্টার্কটিকার বরফ সাধারণত পাতলা এবং সহজেই স্থান পরিবর্তন করে, কারণ এটি চারপাশে মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। তাই, উষ্ণ বাতাস ও গরম পানির প্রভাব বরফ গলানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অ্যান্টার্কটিকার আইস-শেলফ বা বরফপাতের ক্ষেত্রেও এবার উচ্চ তাপমাত্রার কারণে চরম গলন দেখা গেছে। ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের গবেষক টম ব্রেসগার্ডেল বলেন, ‘ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বায়ুমণ্ডলীয় পরিস্থিতি ছিল এমন যে, এটি আইস-শেলফের উপরিভাগে ব্যাপক গলনের কারণ হয়েছে। এর পাশাপাশি, মহাসাগরের ক্রমাগত উষ্ণতা বৃদ্ধিও এই পরিস্থিতির পটভূমি তৈরি করেছে।’

আর্কটিক অঞ্চলে শীতকালীন তাপমাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা সেখানে বরফ বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে। ২০২৫ সালের শুরুতে আর্কটিকের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল, যা গবেষকদের উদ্বিগ্ন করেছে।

বিজ্ঞানীরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন, বর্তমান হারে বরফ গলা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে অন্তত একবার গ্রীষ্মকালে আর্কটিক পুরোপুরি বরফশূন্য হয়ে যেতে পারে।

বরফ কমার ফলে স্থানীয় বন্যপ্রাণী যেমন মেরুভালুক ও পেঙ্গুইনের আবাসস্থল হুমকির মুখে পড়বে। পাশাপাশি, এটি বৈশ্বিক জলবায়ুর ওপরও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

সমুদ্র-বরফ পৃথিবীর প্রাকৃতিক শীতলীকরণ প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে এই শীতলীকরণ ক্ষমতা প্রায় ১৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফি সেন্টারের অধ্যাপক সাইমন জোসি বলেন, অ্যান্টার্কটিকায় সমুদ্র-বরফ কমে গেলে এটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আমাদের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষাকে দুর্বল করে দেয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বরফ কমে গেলে বৈশ্বিক সমুদ্রস্রোত ব্যবস্থার ওপরও প্রভাব পড়তে পারে, যা বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া ও জলবায়ুর ভারসাম্য নষ্ট করবে। বিশেষত, ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের মতো অঞ্চলে এটি শীতল আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com