একটা দেশের সৌন্দর্য বলতে ওই দেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য থেকে শুরু করে সংস্কৃতি, স্থাপত্য, খাবার—সবকিছুই বোঝায়। একেক দেশ একেক কারণে সমৃদ্ধ। আর এই সমৃদ্ধির ওপর নির্ভর করেই কয়েকটি দেশের নাম উঠে এসেছে তালিকায় সবার ওপরে।
ইতালি
ইতালিকে বলা হয় শিল্প, ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি। ইতালির ভেনিস, প্রাচীন রোম, আমালফি উপকূল, কোমো ও গার্দার চমৎকার লেক ইতালির সৌন্দর্যকে আরও মোহনীয় করে তুলেছে। পুরো ইতালিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে চার্চ, ক্রস রোড, গ্রাম, পেইন্টিং, স্ট্যাচু, কোর্টইয়ার্ড, মিউজিয়াম। চমৎকার এই দেশ খাবারেও ভীষণ সমৃদ্ধ। বিখ্যাত ইতালিয়ান ডিশ পিৎজার উদ্ভাবন হয়েছিল ইতালির ন্যাপলে। এই দেশের আরও একটি জনপ্রিয় খাবার পাস্তা।
নিউজিল্যান্ড
শ্বাসরুদ্ধকর সৌন্দর্য দিয়ে ঘেরা যেন পুরো নিউজিল্যান্ড। চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্য দিয়ে ছবির মতো সাজানো এই দেশ। উপসাগরীয় দ্বীপ, মিলফোর্ড সাউন্ড, অকল্যান্ড সেতু, ওয়েইহেকে দ্বীপ, ক্রাইস্টচার্চ, কুইন্সটাউন দ্বীপ, ফ্রাঞ্জ জোসেফ গ্লাসিয়ের নামের বরফ দ্বীপ, ঐতিহাসিক প্রাণকেন্দ্র ওয়েলিংটনসহ নানা অপরূপ সৌন্দর্য দিয়ে দেশটি ঘেরা। মাউরি সংস্কৃতি দেশটিকে আরও দিয়েছে সাংস্কৃতিক ভিন্নতা। বিখ্যাত ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ সিনেমা ট্রিলজির মাত্র একটি দৃশ্য ছাড়া আর সব দৃশ্য ধারণ করা হয়েছিল নিউজিল্যান্ডে। তাই একে হোম অব লর্ড অব দ্য রিংসও বলা হয়।
সুইজারল্যান্ড
সুইজারল্যান্ড এমন এক দেশ, যেখানে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য, মনভোলানো শহর আর অপরূপ সৌন্দর্যের কোনো কমতি নেই। চমৎকার পাহাড় থেকে শুরু করে লেক আর ছবির মতো সুন্দর গ্রাম দেশটিকে করে তুলেছে অনন্য। সেই সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের সংস্কৃতি কখনোই পর্যটকদের স্মৃতি ভুলতে দেয় না। দেশটি খুব বেশি বড় নয়। এরপরও এখানে ১ হাজার ৮০০-এর বেশি রেললাইন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিখ্যাত হচ্ছে সেরমাট থেকে সেন্ট মরিৎসগামী গ্ল্যাসিয়ার এক্সপ্রেস। এটি বিশ্বের অন্যতম সুন্দর রেলপথ। ২০০৮ থেকে এটি ইউনেসকোর বিশ্বঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। হাইকারদের জন্য দেশটি স্বর্গ হিসেবে পরিচিত। জুরিখ ও জেনেভার মতো শহরও আধুনিকতার মিশেলে ঐতিহাসিক নিদর্শন ধরে রেখেছে। সুইজারল্যান্ডে ১ হাজার ৩০০-এর বেশি টানেল রয়েছে যেগুলো দিয়ে ডেনমার্ক থেকে সিসিলি পর্যন্ত যাতায়াত করা যায়। গটহার্ড বেস টানেল ৫৭ কিলোমিটার লম্বা এবং বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ রেলওয়ে টানেল। প্রকৃতিপ্রেমী ও পর্যটকদের জন্য দেশটি হয়ে উঠেছে সৌন্দর্যের স্বর্গ।
জাপান
প্রাচীন সংস্কৃতি আর আধুনিকতা—দুইয়ে মিলে জাপান হয়ে উঠেছে পর্যটকদের কাছে অপূর্ব এক নিদর্শন। কিয়োটোর মন্দির থেকে শুরু করে নারার ঐতিহাসিক সড়ক, হাকুনের ন্যাচারাল হট স্প্রিং—সব মিলিয়ে জাপান অসাধারণ দৃশ্যের জন্ম দেয়। বসন্তের চেরি ব্লসম ছাড়া যেন জাপানের সৌন্দর্য অসম্পূর্ণ। বন আর প্রকৃতির জন্য জাপানের সুখ্যাতি আলাদা। দেশটিতে ৬২টি বন রয়েছে। প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে বা মেডিটেশনের জন্য যেকোনো সময় বনে চলে যাওয়া যায়। হাজার বছরের পুরোনো বাগান আজও যত্নে আছে দেশটিতে। এগুলো বরং আরও আধুনিক করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে সারা বছর নানা উৎসবের আয়োজন করা হয় দেশটিতে। অ্যানিমেশনের জন্য বিখ্যাত জাপান। দেশটির ক্যাফেটেরিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় জনপ্রিয় অ্যানিমেশনের চরিত্রগুলো দেখা যায়।
কানাডা
কানাডার সুবিস্তৃত বনভূমি থেকে শুরু করে বিস্তৃত প্রাকৃতিক দৃশ্য আউটডোর অ্যাডভেঞ্চারকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। পাহাড় ও সমুদ্রের মাঝখানে অবস্থিত ভ্যানকুভার শহর, ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার হুইসলার ও ভিক্টোরিয়া, ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ চার্ম কিউবেক সিটি, পুরোনোকে নতুন করে তুলে ধরা কিউবেকের মনট্রিল সিটি, পাহাড় দিয়ে ঘেরা আলবার্টার বানফ শহর, উঁচু উঁচু দালানকোঠাসমৃদ্ধ কানাডার সবচেয়ে বড় শহর টরন্টো—সব মিলিয়ে দেশটিকে করে তুলেছে পৃথিবীর স্বর্গ। ভ্রমণপিপাসুরা অন্তত একবার হলেও দেশটিতে ঘুরে আসতে চান।