বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন

বিশ্বের সবচেয়ে ব্যতিক্রমী, অস্বাভাবিক আকৃতির জাতীয় পতাকার গাণিতিক রহস্য

  • আপডেট সময় রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

পতাকার অর্থ নিয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। কেউ বলেন এটি নেপালের আকাশের চিরস্থায়ী সূর্য এবং চাঁদকে প্রতিনিধিত্ব করে। আবার কেউ মনে করেন, এটি হিমালয়ের উচ্চতা, বৌদ্ধ-হিন্দু ঐতিহ্য এবং এশিয়ান গর্বের প্রতীক। কেউ কেউ একে আধুনিক রাষ্ট্র গঠন ও রাজনৈতিক কৌশলের প্রতিফলন হিসেবেও দেখেন।

কখনও কি ভেবেছেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশের জাতীয় পতাকা আয়তাকার কিংবা কয়েকটি বর্গাকার হলেও, নেপালের পতাকা কেন ত্রিভুজাকৃতির?

নেপালই একমাত্র দেশ, যার জাতীয় পতাকা দুটি ত্রিভুজের সমন্বয়ে তৈরি। এই অনন্য পতাকা তার আকার ও প্রতীক দিয়ে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।

পতাকার অর্থ নিয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। কেউ বলেন এটি নেপালের আকাশের চিরস্থায়ী সূর্য এবং চাঁদকে প্রতিনিধিত্ব করে। আবার কেউ মনে করেন, এটি হিমালয়ের উচ্চতা, বৌদ্ধ-হিন্দু ঐতিহ্য এবং এশিয়ান গর্বের প্রতীক। কেউ কেউ একে আধুনিক রাষ্ট্র গঠন ও রাজনৈতিক কৌশলের প্রতিফলন হিসেবেও দেখেন।

নেপালের পতাকা তার ব্যতিক্রমী আকৃতির কারণে সহজেই চোখে পড়ে। এটি দুটি ডানদিকে নির্দেশ করা সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের সমন্বয়ে তৈরি, যেখানে লাল রঙের পটভূমি রয়েছে এবং নীল সীমানা দিয়ে সাজানো। পতাকার উপরের অংশে একটি চাঁদের আকৃতি এবং নিচের অংশে একটি সূর্যের প্রতীক সাদা রঙে অঙ্কিত।

ম্যাসাচুসেটসের কলেজ অফ দ্য হোলি ক্রস-এর ইতিহাসবিদ এবং নেপালীয় বংশোদ্ভূত সঞ্জোগ রুপাখেতি বলেন, ‘এই বিশেষ আকৃতি, একক এবং দ্বৈত ত্রিভুজ পতাকা, শুধু নেপালের জন্যই নয়। এটি দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারতীয় উপমহাদেশের দীর্ঘ এবং গভীর ঐতিহ্যের অংশ।’

রুপাখেতি আরও বলেন, স্কুলে পড়াকালে শেখানো হতো যে সূর্য এবং চাঁদ চিরন্তনতা এবং ত্রিভুজ নেপালের বিখ্যাত হিমালয়ের প্রতীক। তবে, একজন ইতিহাসবিদ হিসেবে তার মতে, এটি বরং প্রাচীন এবং বিখ্যাত রাজবংশগুলোর প্রতীক হতে পারে, যেগুলো অঞ্চলটির শাসকশ্রেণির বংশপরিচয় তুলে ধরে।

অনেকেই মনে করেন, পতাকার লাল রং নেপালের জাতীয় ফুল রডোডেনড্রনকে প্রতিনিধিত্ব করে, আবার কেউ কেউ একে যুদ্ধ এবং সাহসিকতার প্রতীক হিসেবে দেখেন।

তবে রুপাখেতি উল্লেখ করেন, এমনকি নেপালের ইতিহাসবিদরাও পতাকার সম্পূর্ণ ইতিহাস সম্পর্কে নিশ্চিত নন।

নেপালের পতাকার প্রথম চিত্রটি আসে ১৮০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে, যখন ব্রিটিশ ডাক্তার ও শিল্পী হেনরি অ্যামব্রোস ওল্ডফিল্ড নেপালে ছিলেন। ইংরেজ লেখক পার্সিভাল ল্যান্ডন তার ১৯২৮ সালের বই ‘নেপাল’-এ একটি দ্বৈত পেনন পতাকার কথা উল্লেখ করেছেন।

ল্যান্ডনের ছবিটি সাদা-কালো ছিল, তবে তিনি একটি ফুটনোটে বলেছেন, পতাকার সীমানা নীল নয়, বরং সবুজ ছিল।

নেপালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আগে, ১৯৯০ এবং ২০০৮ সালে, সাধারণ মানুষকে পতাকা প্রদর্শন করতে দেওয়া হত না।

‘জাতীয় পতাকা শুধু সরকারি ভবনে উড়ানো যেত,’ বলেন সঞ্জোগ রুপাখেতি। ‘এটি ছিল কঠোর নিয়মে বাঁধা, শুধু আকার এবং আকৃতির জন্য নয়, বরং কখন, কীভাবে এবং কারা পতাকা প্রদর্শন করতে পারবে তাও ছিল নির্দিষ্ট। তবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর এটি বদলাতে শুরু করে এবং এখন এটি সব জায়গায় দেখা যায়’।

নেপালের পতাকা আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। নর্থ আমেরিকান ভেক্সিলোজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক টেড কে জানিয়েছেন, পতাকার আকৃতি ও ইতিহাস পতাকা বিশেষজ্ঞদের কাছে আলোচনার বিষয়।

১৯৬২ সালে, নেপালের রাজা মহেন্দ্র একটি মানসম্মত পতাকা তৈরির লক্ষ্যে এর আকার ও আকৃতি নিয়ে সুনির্দিষ্ট গণিতবিষয়ক নির্দেশাবলি প্রণয়নের জন্য একজন গণিতবিদকে নিযুক্ত করেন। এই নিয়মাবলি নেপালের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী, পতাকায় সূর্যের অবশ্যই ১২টি রশ্মি থাকতে হবে, সূর্য ও চাঁদের রং সাদা হতে হবে এবং কিনারার রং হতে হবে গাঢ় নীল।

অলিম্পিকের নিয়ম অনুযায়ী, সব পতাকা ২ গুণ ৩ অনুপাতের হতে হয়। নেপালের অপ্রচলিত পতাকা এই নিয়মে সামঞ্জস্য করা কঠিন। আগে কিছু অলিম্পিক আয়োজক নেপালের পতাকাকে একটি সাদা আয়তক্ষেত্রাকার ব্যাকগ্রাউন্ডে স্থাপন করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি নেপালের পতাকার আসল আকৃতিকে সম্মান জানিয়ে এটি অপরিবর্তিত রাখার অনুমতি দিয়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com