বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি কে তা নিয়ে অহরহই আলোচনা হয়। সম্পদশালীদের তালিকায় পুরুষদের নাম যেমন রয়েছে, তেমনই নারীরাও পিছিয়ে নেই। আমেরিকান বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বস ২০২৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী নারীর একটি তালিকা করেছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই তালিকায় কে কে আছেন এবং কিভাবে এই বিপুল সম্পদের মালিক হলেন তারা।
১. ফ্রাঁসোয়াস বেতনক্যুঁ মেয়ার
সম্পদের পরিমাণ- ৭৯ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার
ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী, ফরাসি বিলিয়নিয়ার ফ্রাঁসোয়াস বেতনক্যুঁ মেয়ার এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী। ১৯৫৩ সালের ১০ জুলাই ফ্রান্সের নিউলি-সার-সেইনে জন্মগ্রহণ করেন মেয়ার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিউটি ও প্রসাধনী ব্র্যান্ড ল’রিয়াল এর উত্তরাধিকারী, প্রয়াত ব্যবসায়ী লিলিয়ান বেতনক্যুঁর একমাত্র মেয়ে ফ্রাসোয়াস বেতনক্যুঁ।
২০১৭ সালে মায়ের মৃত্যুর পর বেতনক্যুঁ ল’রিয়াল ব্র্যান্ডে তার মায়ের ৩৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক হন, যার মূল্য প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলার! এছাড়াও, তিনি মানবসেবামূলক সংগঠন বেতনক্যুঁ শ্যুলার ফাউন্ডেশন-এর সভাপতি। বৈজ্ঞানিক গবেষণা,মানবিক সাহায্য এবং সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক ঐতিহ্য রক্ষার মতো নানা কাজের সঙ্গে জড়িত এ সংগঠন। এর বাইরে একাধিক বইও প্রকাশিত হয়েছে বেতনক্যু মেয়ারের। বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায়ও ১০ নম্বরে রয়েছেন এই নারী।
২. জুলিয়া কোক অ্যান্ড ফ্যামিলি
সম্পদের পরিমাণ- ৫৯ বিলিয়ন ডলার
আমেরিকান বিলিয়নিয়ার বিজনেসওম্যান ও মানবহিতৈষী জুলিয়া কোকের জন্ম ১৯৬২ সালে আইওয়াতে। তিনি মাল্টিন্যাশনাল কনগ্লোমারেট কোক ইন্ডাস্ট্রিজের সহ-স্বত্বাধিকারী, শিল্পপতি ও মানবহিতৈষী ডেভিড কোকের স্ত্রী।
২০১৯ সালে স্বামী মারা যাওয়ার পর জুলিয়া তার বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হন এবং বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারীদের একজন হয়ে ওঠেন। এছাড়াও, নিউইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত মেমোরিয়াল স্লোয়ান কেটারিং ক্যান্সার সেন্টারের ডেভিড এইচ কোক সেন্টার ফর ক্যান্সার কেয়ার-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারওম্যান। জুলিয়া কোক শিক্ষা, সংস্কৃতি, মেডিক্যাল রিসার্চ ইত্যাদি মানসেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত।
৩. এলিস ওয়ালটন
সম্পদের পরিমাণ- ৫৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার
ওয়ালমার্ট এর প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ওয়ালটনের মেয়ে এবং তার সম্পদের উত্তরাধিকারী এলিস ওয়ালটনের জন্য ১৯৪৯ সালের ৭ অক্টোবর আরকানসাসের নিউপোর্টে। কলেজ থেকে পাশ করে বেরোনোর পর বহু বছর তিনি ইকুইটি অ্যানালিস্ট ও মানি ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন। এরপরে শেষ পর্যন্ত শিল্প সংগ্রহের দিকে ঝুঁকেছেন। আরকানসাসের বেন্টনভিলেতে ক্রিস্টাল ব্রিজেস মিউজিয়াম অব আমেরিকান আর্ট- এর প্রতিষ্ঠাতা তিনি।
৪. জ্যাকুলিন মার্স
সম্পদের পরিমাণ- ৩৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার
চকোলেট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান মার্স- এর প্রতিষ্ঠাতা ফ্রাংক সি. মার্স এর নাতনি জ্যাকুলিন মার্স এই মুহূর্তে বিশ্বের চতুর্থ ধনী নারী। বহু বছর ধরে তিনি মার্স কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে কাজ করেছেন এবং সেই সঙ্গে কোম্পানির মার্কেটিং ও প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্টের কাজের বিভিন্ন দিকও দেখাশোনা করতেন তিনি। এর বাইরেও জ্যাকুলিন একজন দক্ষ অশ্বারোহী এবং বহু বছর ধরেই তিনি ঘোড়ার প্রজনন ও ঘোড়দৌড়ের সাথে যুক্ত আছেন।
জ্যাকুলিন মার্স তার জনহিতকর কাজের জন্য সুপরিচিত- বিশেষ করে প্রাণী কল্যাণ ও পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তার অবদান চোখে পড়ার মতো। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড ও স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল জু-সহ বেশকিছু সংস্থাকে তিনি নানাভাবে সাহায্য করে চলেছেন।
৫. মিরিয়াম অ্যাডেলসন অ্যান্ড ফ্যামিলি
সম্পদের পরিমাণ- ৩৫ বিলিয়ন ডলার
আমেরিকান চিকিৎসক ও মানবসেবী মিরিয়াম অ্যাডেলসনের জন্ম ১৯৪৫ সালে ইসরায়েলের তেল আবিবে এবং বেড়ে ওঠা হাইফাতে। বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী শেলডন অ্যাডেলসনকে বিয়ে করেছিলেন মিরিয়াম। তার স্বামী ২০২১ সালে মারা যান।
প্রয়াত স্বামীর প্রতিষ্ঠিত অ্যাডেলসন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তারা দুজনেই নানা মানবহিতৈষী কাজে যুক্ত ছিলেন। মেডিক্যাল গবেষণা এবং শিক্ষামূলক নানা কাজে অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন তারা।
৬. জিনা রাইনহার্ট
সম্পদের পরিমাণ- ২৯ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার
জিনা রাইনহার্টও একজন ব্যবসায়ী এবং বেসরকারি মাইনিং কোম্পানি হ্যানকক প্রসপেক্টিং এর চেয়ারম্যান। তার জন্ম ১৯৫৪ সালে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার পার্থে। বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে মাইনিং কোম্পানির মালিক হওয়ার পর ধীরে ধীরে এটিকে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মাইনিং কোম্পানিতে পরিণত করেছেন তিনি। এছাড়াও, অস্ট্রেলিয়ায় কৃষি এবং মিডিয়া খাতেও বড় শেয়ার রয়েছে তার।
৭. সুসান ক্লাটেন
সম্পদের পরিমাণ- ২৭ বিলিয়ন ডলার
জার্মান ব্যবসায়ী ও উত্তরাধিকারী সুসান ক্লাটেনের জন্ম ১৯৬২ সালে জার্মানির হমবুর্গে। বিশ্বখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিএমডব্লিউতে শেয়ার ছিল সুসানের বাবা হার্বার্টের। বাবার থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে সেই শেয়ারের মালিক হয়েছেন সুসান। এরপর থেকে ফার্মাসিউটিক্যাল, কেমিক্যাল এবং নবায়নযোগ্য শক্তিসহ নানা শিল্প খাতে বিনিয়োগ করে চলেছেন এই বিলিয়নিয়ার। অন্য অনেক বিলিয়নিয়ারদের মতো সুসানও তার এসকে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শিক্ষা, বিজ্ঞান ও পরিবেশ সংরক্ষণের মতো জনহিতকর কাজের সঙ্গে যুক্ত।
৮. ম্যাকেঞ্জি স্কট
সম্পদের পরিমাণ- ২৫ বিলিয়ন ডলার
বিলিয়নিয়ার জগতে ম্যাকেঞ্জি স্কট অনেক পুরনো নাম। প্রায়ই জনকল্যাণমূলক নানা কাজের মাধ্যমে খবরের শিরোনামে উঠে আসেন ম্যাকেঞ্জি স্কট। আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও আরেক বিলিয়নিয়ার জেফ বেজোসের প্রাক্তন স্ত্রী ম্যাকেঞ্জি স্কট নারী অধিকার ও জাতিগত সমতা নিয়ে কাজ করার জন্য বিশেষ পরিচিত। মানবকল্যাণমূলক কাজে ইতোমধ্যেই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দান করেছেন ম্যাকেঞ্জি। ‘দ্য টেস্টিং অব লুথার অলব্রাইট’ এবং ‘ট্র্যাপস’ নামে দুটি বইও লিখেছেন তিনি।
৯. আইরিস ফন্টবোনা
সম্পদের পরিমাণ- ২২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার
চিলিয়ান বিজনেসওম্যান আইরিস ফন্টবোনা বিয়ে করেছিলেন বিশিষ্ট চিলিয়ান ব্যবসায়ী আন্দ্রোনিকো লুকসিচ আবারোয়াকে। আবারোয়া মাইনিং, ব্যাংকিং, ম্যানুফ্যাকচারিং এবং পানীয়ের ব্যবসায়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছিলেন। ২০০৫ সালে তিনি ক্যান্সারে মারা যান। চিলিয়ান মাইনিং কোম্পানি আন্তোফাগাস্তা পিএলসি’তে শেয়ার রয়েছে ফন্টবোনার।
তার তিন সন্তানের একজন, জ্য পল আন্তোফাগাস্তার চেয়ারম্যান। ফন্টবোনার নেতৃত্বে কোম্পানিটি তাদের কার্যক্রম প্রসারিত করে চলেছে এবং বিশ্বের বৃহত্তম তামা মাইনিং কোম্পানিগুলির মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে। ফন্টবোনাও জনহিতকর কাজের সাথে জড়িত। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং দারিদ্র্য বিমোচনসহ নানা জনকল্যাণমূলক কাজে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ দান করেছেন ফন্টবোনা।
১০. অ্যাবিগাইল জনসন
সম্পদের পরিমাণ- ২১ দশমিক ৬ বিলিয়ন
২০১৪ সাল থেকে ফিডেলিটি ইনভেস্টমেন্টস এর সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন অ্যাবিগাইল জনসন। তার দাদা দ্বিতীয় এডওয়ার্ড জনসন বোস্টনভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অ্যাবিগাইল এ প্রতিষ্ঠানটির ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক।
জনসন বিভিন্ন জনহিতকর এবং নাগরিক সংস্থার সাথেও জড়িত। তিনি তার নেতৃত্বদান এবং ফাইন্যান্সিয়াল ইন্ডাস্ট্রিতে অবদানের জন্য নানা স্বীকৃতি পেয়েছেন। ফোর্বসের প্রকাশিত বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায়ও তার নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সূত্র: গালফ নিউজ