বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যা প্রায় ৮০০ কোটি। আমাদের দেশে সেই সংখ্যা বাংলাদেশে জনশুমারি ও গৃহগণনার ২০২২-এর ভিত্তিতে চলতি বছরের ১ জানুয়ারির তথ্যে, ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার। যেখানে নারী ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৯০ হাজার এবং পুরুষ ৮ কোটি ৪২ লাখ। এই বাড়তে থাকা জনসংখ্যার প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যেই পালন শুরু হয়েছিল বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস।
১৯৯০ সালের ১১ জুলাই প্রথমবারের মতো ৯০ টি দেশে পালিত হয় এই দিবসটি। এরই ধারাবাহিকতায় পরিবার পরিকল্পনা, লিঙ্গসমতা, দারিদ্র্য, মাতৃস্বাস্থ্য এবং মানবাধিকারের মতো জনসংখ্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে প্রতিবছর বাংলাদেশে ও পালন করা হয় এই দিবসটি। তবে জানেন কি? বিশ্বের এমনও কিছু দেশ আছে যেগুলোর মোট জনসংখ্যা আমাদের একেকটি মহল্লার জনসংখ্যার চেয়েও কম।
বিশ্বের এমন দেশ আছে যেখানে বাস করেন মাত্র ৩০ জন, যা অনেক যৌথ পরিবারের সদস্য সংখ্যার চেয়েও কম। আবার এমন অনেক দেশ আছে যেখানে ১ লাখেরও কম জনগণ বাস করেন। চলুন এমন কয়েকটি দেশ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক যেগুলোর জনসংখ্যা অনেক কম-
বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশের নাম সিল্যান্ড। এই দেশের মোট জনসংখ্যা ৩০-এর কম। ইংল্যান্ডের নিকটবর্তী নর্থ সি-তে রয়েছে এই দ্বীপরাষ্ট্র। সমুদ্রের মাঝে ক্ষুদ্র এই দেশটির আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৪২ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান সেনার হাত থেকে রক্ষা পেতে এই গুপ্ত এবং ক্ষুদ্র তটে আশ্রয় নিত বিপক্ষ শিবিরের সেনা। এরপর ১৯৬৭ সালে পূর্ব ব্রিটিশ সেনা অধ্যক্ষ রয় বেটস এই সিল্যান্ড কিনে নেন। এটিকে পূর্ণাঙ্গ দেশের তকমা দেওয়া হয়। দেশটির নাম রাখা হয় সিল্যান্ড। মাইক্রো নেশন বলা হয়ে থাকে এই সিল্যান্ড দেশটিকে। এর আয়তন ৫৫০ স্কোয়ার মিটার। এই দেশে যেতে আপনার ভিসাও নিতে হবে।
ভ্যাটিকান সিটির জনসংখ্যা ২০২৪ সালের জাতিসংঘের হিসেবে ৭৬৪ জন। জনসংখ্যা ও আয়তন দুই দিক থেকেই ভ্যাটিকান সিটি পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট স্বীকৃত রাষ্ট্র। ইতালির রোমের মধ্যে অবস্থিত দেশটির আয়তন ০.৪৪ বর্গ কিলোমিটার। ১৯২৯ সালে যখন ভ্যাটিকান সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়, একই সময় ইতালিতে রোমান ক্যাথলিক ধর্মকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়। পোপের বাসস্থান এবং পবিত্র তীর্থস্থান হওয়ার পাশাপাশি, সিস্টিন চ্যাপেল, সেন্ট পিটারস স্কয়ার এবং সেন্ট পিটারস ব্যাসিলিকা এখানকার দ্রষ্টব্য স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ভ্যাটিকান সিটির নিজস্ব সংবিধান, ডাকব্যবস্থা, সীলমোহর, পতাকা এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতীক বিদ্যমান। ভ্যাটিকানের নিজস্ব সেনাবাহিনীও আছে, যার নাম সুইস গার্ড; এর সদস্যসংখ্যা প্রায় ১০০।
জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুসারে টুভালুর জনসংখ্যা ১১ হাজার ৪৭৮ জন। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের নয়টি প্রবাল অ্যাটোল নিয়ে গঠিত হয়েছে দেশটি। নয়টি দ্বীপ মিলিয়ে দেশটির আয়তন ২৬ বর্গ কিলোমিটারের মতো। টুভালু পূর্বে এলিস দ্বীপপুঞ্জ নামে পরিচিত ছিল। এটি ব্রিটিশ গিলবার্ট ও এলিস দ্বীপপুঞ্জ উপনিবেশের অংশ ছিল। ১৯৭৫ সালে এটি গিলবার্ট দ্বীপপুঞ্জ (বর্তমান কিরিবাস) থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং ১৯৭৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। টুভালু কমনওয়েলথ অভ নেশনসের সদস্য। ফুনাফুতি অ্যাটলটি টুভালুর রাজধানী।
জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য বলছে নউরুর জনসংখ্যা ১২ হাজার ৮৮৪ জন। মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণে অবস্থিত দেশটি পড়েছে ওশেনিয়ায়। ছোট বড় দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই দেশকে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দ্বীপ রাষ্ট্রও বলা হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিশ্বের এমন একটি দেশ যার কোনো রাজধানী নেই। মাত্র ২১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দেশটি জাপান থেকে স্বাধীনতা পায় ১৯৬৮ সালে। এত অল্প জনসংখ্যা সত্ত্বেও এখানকার মানুষের মধ্যে দক্ষতার অভাব নেই। কম জনসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও এই দেশটি কমনওয়েলথ এবং অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণ করে আসছে। এই দেশের সরকারি মুদ্রা অস্ট্রেলিয়ান ডলার এবং এই অঞ্চলের অধিবাসীদের বলা হয় নাউরুয়ান।
জনসংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীর চতুর্থ ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র পালাউ। জনসংঘের দেওয়া তথ্য অনুসারে দেশটির জনসংখ্যা কেবল ১৮ হাজার ৫৮ জন। ছোট্ট দেশটিতে প্রথম বসতি স্থাপিত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ সালে। ছোট-বড় ৩৪০টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত পালাউ পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম দেশগুলোর একটি। আয়তন ৪৫৯ বর্গ কিলোমিটার হওয়ায় দেশটিতে জনসংখ্যার ঘনত্ব কম। ১৯৯৪ সালে স্বাধীনতা পাওয়া দেশটি ৩৪০টি দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে। এখানকার মানুষ কথা বলেন পালাউ আর ইংরেজিতে। রাজধানী এনগেরুলমুদ। নিজস্ব স্বকীয়তা আর সংস্কৃতির কারণে বিশ্বের ভ্রমণকারীদের কাছে পালাউয়ের আলাদা একটি অবস্থান রয়েছে।
সূত্র: ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস