শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:২৪ অপরাহ্ন
Uncategorized

বিশ্বের এই পাঁচটি পবিত্র পাহাড়ে নাকি স্বয়ং ঈশ্বর বাস করেন

  • আপডেট সময় রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

সেই প্রাচীন যুগের কথা, ফিতে দিয়ে পাহাড় পর্বতের উচ্চতা মাপা হয়নি। নদী সমুদ্রের জলে স্কেল ফেলে উচ্চতা দেখা হয়নি। এমনকি পাহাড়, পর্বত, সমুদ্র, নদী, মরুভূমি, হ্রদ, জলপ্রপাতের নামও রাখা হয়নি। যার যা ইচ্ছে সেই নামেই ডাকতেন। মানে প্রকৃতিদেবীর সৃষ্টির উপরে তখনও মানুষের খবরদারি শুরু হয়নি সেই সময় থেকেই মানুষের বিশ্বাস ছিল যে দেবতারা কোনও উঁচু জায়গায় বসবাস করেন। আর বিশ্বের উঁচু জায়গা বলতে তো পাহাড় পর্বত। পাহাড়ে বর্ষার মেঘ ধাক্কা খেয়ে বৃষ্টি নামাতো। সেই বৃষ্টির জলেই ফসল ফলত।

তাই মানুষের বিশ্বাস ছিল যে ঈশ্বরই বুঝি পাহাড় থেকে তাদের আগলে রাখছেন। দুটি খাওয়ার জোগাড় করে দিচ্ছেন। এভাবেই কেমন করে জানি লোকমুখে বিশ্বাস হতে শুরু করল প্রাকৃতিক নানা ক্রিয়াকলাপ হল ঈশ্বরের কাজ এবং সেই ঈশ্বর বাস করেন উঁচু উঁচু পর্বতে। তাই সেসব দুর্গম জায়গাতে গিয়ে ঈশ্বরকে পাওয়ার আশায় তপস্যা করেন প্রাচীন মুনি ঋষিরা।

কৈলাস পর্বত, চিন

চিন অধিকৃত তিব্বতে অবস্থিত কৈলাস পর্বত হিন্দুদের অতি পবিত্র স্থান। এই পর্বতেই নাকি নন্দী, ভৃঙ্গী, ভূত, প্রেত, গাঁজা কলকে নিয়ে ভোলেবাবা বাস করেন স্বপরিবারে। মা পার্বতীর সঙ্গে এখানেই তাঁর নিত্য অশান্তি চলে। মোট কথা দেবাদিদেব মহাদেবের বাসস্থান এই কৈলাস পর্বত। শুধু হিন্দুরাই নন, কৈলাস পর্বত বৌদ্ধ, জৈন এবং বন ধর্মাবলম্বী মানুষদেরও অতি পবিত্র তীর্থস্থান। তিব্বতের হিমালয় পর্বতমালার অংশ এটি। সিন্ধু, শতদ্রু, ব্রহ্মপুত্র প্রভৃতি নদের উৎস স্থান এই কৈলাস। কৈলাস পর্বতের কাছেই তিব্বতের মানস সরোবর এবং রাক্ষসতাল অবস্থিত। বরফে ঢাকা কৈলাসকে দেখে মনে হয় যেন স্ফটিকের তৈরি। তাই সংস্কৃত কেলাস বা স্ফটিক থেকে কৈলাস শব্দের সৃষ্টি হয়েছে। কেলাস অর্থাৎ ক্রিস্টাল (Crystal)। তিব্বতি ভাষায় এর নাম গাঙ্গো রিনপোচে। তিব্বতে বৌদ্ধ গুরু পদ্মসম্ভবাকে বলা হয় রিনপোচে। তাঁর থেকেই নামকরণ হয়েছে কৈলাস পর্বতের। অর্থ হল বরফের তৈরি দামি রত্ন। ২২ হাজার ফিট উচ্চতার এই পর্বতকে প্রাচীন কাল থেকেই পৃথিবীর স্তম্ভ বলে মনে করা হয়। যা ধরে রেখেছে পৃথিবীর ভর। তিব্বত কিংবদন্তি অনুযায়ী‚ গুরু মিলারেপাই শুধু পা রাখতে পেরেছিলেন কৈলাস-শীর্ষে। ফিরে এসে তিনি এই পর্বত জয় করতে নিষেধ করেছিলেন সকলকে। তাঁর কথা অনুযায়ী কৈলাস পর্বতের আবহাওয়ায় এমন কিছু আছে যাতে নাকি মানুষের চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ দ্রুত ফুটে ওঠে।

নন্দাদেবী পর্বতমালা, ভারত

ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্বতমালা নন্দদেবী। এর উচ্চতা ৭৮১৬ মিটার। এটি উত্তরাখণ্ডের গাড়োয়াল হিমালয়ের একটি অংশ। এই পর্বতশৃঙ্গ হিন্দুদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র স্থান। ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের বিশ্বাস ঈশ্বর নন্দা দেবী এই শৃঙ্গে বসবাস করেন। সেখান থেকেই ভক্তদের উদ্দেশ্যে নিজের কৃপা বর্ষণ করেন। দেবীর আশীর্বাদে মানুষের জীবনে সুখ, শান্তি, কল্যাণ, সৌভাগ্য ইত্যাদি বিরাজ করে। অবশ্য় শুধু পবিত্রতার জন্যই নয় নন্দা দেবী পর্বতমালার আরেকটি বিখ্যাত স্থান হল এখানকার অভয়ারণ্যটি। পবিত্রতার মতোই দৃঢ় এখানকার পরিবেশ। ১৯৮৮ সালে নন্দাদেবী জাতীয় উদ্যানকে হেরিটেজ বলে ঘোষণা করে ইউনেসকো। এখানে পর্বতারোহণ গাড়োয়াল হিমালয়ের অন্যতম জনপ্রিয় অ্যাডভেঞ্চার।

মাউন্ট ফুজি, জাপান

জাপানের মাউন্ট ফুজি উচ্চতম পর্বতের মধ্যে না পড়লেও জাপানিদের কাছে এটি সবচেয়ে পবিত্র তীর্থস্থান। মূল বৌদ্ধ এবং শিনতৌ ধর্মের মানুষদের কাছে বরফে মোড়া এই পর্বত পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। তবে শুধু তীর্থক্ষেত্রই নয় ফুজি একটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। শিনতৌ ধর্ম অনুযায়ী আগুনের দেবী দাইচিনি নাওরাই এই ফুজি আগ্নেয়গিরিতেই বাস করেন। শানতৌদের মতে এই আগ্নেয়গিরিটি আধ্যাত্মিকভাবে অত্যন্ত পবিত্র। জাপানি বৌদ্ধদের মতে এই পর্বতটি এই বিশ্ব ছেড়ে অন্য বিশ্বে যাওয়ার প্রধান দরজা। গ্রীষ্মকালে এই পর্বতে ভিড় জমান হাজার হাজার তীর্থযাত্রী এবং পর্যটক।

মাউন্ট অগুং, বালি

ইন্দোনেশিয়ার নাগরিকদের কাছে মাউন্ট অগুং অত্যন্ত পবিত্র পর্বত। এটি দেশের রাজধানী বালিতে অবস্থিত। পর্বতের উচ্চতা ১০৩০৮ ফিট। এদেশের বাসিন্দাদের বিশ্বাস অগুং পর্বত মহাবিশ্বের কেন্দ্রীয় অক্ষ। বালির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্দির, পুর বেসকিহ, অগুং-এর ঢালে অবস্থিত। মন্দিরটি প্রায় তিন হাজার ফিট উপরে অবস্থিত। ফুজির মতো অগুং-ও একটি জীবন্ত আগ্নেগিরি। এর থেকে অগ্নুৎপাতের সতর্কতা দিয়ে রেখেছেন ভূতত্ববিদরা।

মাউন্ট সিনাই, মিশর

মিশরের অন্যতম পবিত্র পর্বত হল সিনাই। এর উচ্চতা ২২৮৫ মিটার। এটি মিশরের সিনাই উপদ্বীপের সেন্ট ক্যাথেরিন শহরে আবস্থিত। বেদুইনদের কাছে এটি হোরেব পর্বত, মুসা পর্বত হিসেবেও পরিচিত ছিল। সিনাই পর্বতের ধর্মীয় তাৎপর্য নিয়ে নানা বিশ্বাস রয়েছে। ইসলাম ধর্মগ্রন্থ কোরাণে সিনাই পর্বতের কথা উল্লেখ আছে। ধর্মীয় বিশ্বাস এই পর্বতের উপর অবস্থানকালেই মোজেসের সঙ্গে ঈশ্বরের কথা হয়। এবং এখানে মোজেস তাঁর ১০ জন শিষ্যকে দীক্ষা দেন। আরবের বেদুইন এবং খ্রিস্টানদেরও কাছেও এটি একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান। হাজার হাজার বছর ধরে এই পর্যতে তীর্থ করতে আসেন ধর্মপ্রাণ মানুষরা।

এই সময় 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com