ফিনল্যান্ড :
ছবি : দা জাকার্তা পোস্ট
নারীদের একাকী ভ্রমণ করার জন্য ইউরোপের অন্যতম নিরাপদ দেশ ফিনল্যান্ড। ইউরোপের বাল্টিক সাগরের উপকূলে অবস্থিত এই দেশ প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য আদর্শ গন্তব্য। কেবল নরওয়েকে ই নয় ফিনল্যান্ডকেও বলা হয় ‘মধ্যরাতের সূর্যের দেশ’। এদেশের মেরু অঞ্চলে মে থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রায় সবসময় দিন থাকে। ফিনল্যান্ডের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা সুমেরুবৃত্তের উত্তরে অবস্থিত। ঘন সবুজ অরণ্যের পাশাপাশি প্রচুর হ্রদ রয়েছে এখানে। দক্ষিন-পশ্চিম উপকূলে হাজার হাজার ক্ষুদ্র ও পাথুরে দ্বীপ আছে। এছাড়া প্রাচীরঘেরা প্রাসাদ ও অত্যাধুনিক দালান কোঠার গভীর মিতালি দেখা যায় ফিনল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে। ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টের জরিপ অনুযায়ী, ফিনল্যান্ড টানা দ্বিতীয়বারের মত পৃথিবীর সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ও বাসযোগ্য দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ও নিরাপদ গন্তব্য হিসেবে ফিনল্যান্ড এখন নারী পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে অবস্থান করছে। আইসল্যান্ড :
ছবি : নিউমার্কেট হলিডেজ
আইসল্যান্ড পৃথিবীর সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় মানুষের দেশ হিসেবে পরিচিত। দেশটি উত্তর আটলান্টিক এবং আর্কটিক সাগরের মধ্যে অবস্থিত ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। আইসল্যান্ডের ১১ শতাংশ এলাকা বরফ দ্বারা আচ্ছাদিত। পুরো দেশের এক চতুর্থাংশ জায়গাজুড়ে আছে আগ্নেয়গিরি, যার বেশিরভাগ এখনও সক্রিয়। আছে হিমবাহের বরফ গলে তৈরি জলপ্রপাত, সমতল ভূমি, উষ্ণপ্রসবণ/হট স্প্রিং। পাশাপাশি কঠিন হিমবাহ ও জলজ্যান্ত আগ্নেয়গিরির অবস্থান আইসল্যান্ডকে বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছে পর্যটকদের কাছে। অক্টোবরের শুরু থেকে মার্চের শেষ সময়ের মধ্যে এখানে দেখা মিলবে আকাশজুড়ে নর্দার্ন লাইটস বা মেরুজ্যোতির অপরূপ দৃশ্য। পুরো আইসল্যান্ড দেশটি নানারকম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। তাই রোমাঞ্চপ্রিয় নারী পর্যটকদের জন্য এটি স্বর্গস্বরূপ ভ্রমণ গন্তব্য। আইসল্যান্ডের রাজধানী রেকজাভিকে গেলে দেখা মিলবে রেস্তোরাঁ, হোটেলের। আইসল্যান্ডবাসীদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা খুব কম। ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুযায়ী, আইসল্যান্ড পৃথিবীর তৃতীয় সুখী দেশ। তাই নারী ভ্রমণকারীরা নিঃসঙ্কোচে ঘুরে আসতে পারেন এই অসম্ভব সুন্দর দেশ থেকে।
কানাডা :
ছবি : আমেরিকান গেস্ট
উত্তর আমেরিকার অন্যতম সুখী-সমৃদ্ধ দেশ কানাডা। এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যে ভরপুর এই দেশটি ভ্রমনপিপাসুদের জন্য অন্যতম স্বর্গীয় স্থান। আকাশচুম্বী পাহাড়-পর্বত থেকে শুরু করে সাগর-মহাসাগর, গাছ-গাছালি, জলপ্রপাত কি নেই এই অপরূপ দেশে! সবমিলিয়ে যেন অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় নায়াগ্রা জলপ্রপাতের অবস্থান কানাডায়। এই জলপ্রপাত দেখতে প্রতিবছর কানাডায় কয়েক মিলিয়ন পর্যটক আসে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশপাশি সাংস্কৃতিক দিক দিয়েও বৈচিত্র্যময় দেশ কানাডা। কানাডার সবচেয়ে পুরনো শহরগুলোর মধ্যে ‘কুইবেক’ অন্যতম। এখানে ১৭ শতকের দৃষ্টিনন্দন ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো মুহূর্তেই ভ্রমণকারীদের নিয়ে যায় অন্য এক জগতে। এছাড়া কানাডার মন্ট্রিল, ওন্টারিও, ভ্যানকুভারসহ অন্যান্য শহরগুলোর রয়েছে আলাদা আলাদা বৈচিত্র্য। তাই কানাডা পর্যটকদের জন্য এক দারুণ গন্তব্য হয়ে উঠেছে। কানাডার নাগরিকরা বেশ অতিথিপরায়ণ ও বন্ধুসুলভ। আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে কানাডা নারী ভ্রমণকারীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ দেশ হিসেবে পরিচিত। তাই নারী পর্যটকরা নির্ভয়ে বেরিয়ে আসতে পারেন কানাডার যেকোনো শহরে।
বেলজিয়াম :
ছবি : প্লাটফর্ম আফ্রিকা
বেলজিয়াম উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের অন্যতম শান্তিপ্রিয় ও নিরাপদ দেশ। একা ভ্রমণকারী নারীরা নির্ভয়ে বেলজিয়াম ভ্রমণে যেতে পারেন। অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা, দুর্দান্ত অবকাঠামো সহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রের দেখা পাওয়া যায় এখানে। বেলজিয়ামের মধ্যে ব্রাসেলস, ব্রূজ, ঘেন্ট, অন্টারপন শহরগুলো বেশ বিখ্যাত। একেকটা শহর দেখতে একেক রকম সুন্দর। ইউরোপীয় সংস্কৃতির দারুণ এক মেলবন্ধন দেখা যায় রাজধানী ব্রাসেলসে। এখানে রয়েছে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের গ্র্যান্ড প্যালেস, সাথেই রয়েছে টাউনহল। গ্র্যান্ড প্লেসে সারা বছর পর্যটকদের ভীর লেগেই থাকে। আনুমানিক দশম শতক থেকে শুরু হওয়া দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যমণ্ডিত অসাধারণ স্থাপত্যসমূহের সৌন্দর্য এখানে উপভোগ করা যায়। এছাড়া বিখ্যাত ওয়াটারলু দেখতে বিশ্বের মানুষজন সবসময় এখানে বেড়াতে আসেন। বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্যে ভরপুর বেলজিয়াম যে স্বাধীনচেতা ও আমোদপ্রিয় মানুষের দেশ তা এদেশের স্থাপত্যশৈলীতেই প্রকাশ পায়। নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা নেই এখানে। বেলজিয়াম আন্তর্জাতিক মহিলা ট্রাভেল সেন্টারের তালিকায় দশম স্থানে রয়েছে। তাই নারীদের একাকী ভ্রমণের জন্য এই দেশটি বেশ নিরাপদ।
নিউজিল্যান্ড :
ছবি : হোটেল ম্যাগাজিন
দক্ষিন-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের ওশেনিয়া অঞ্চলে অবস্থিত একটি দ্বীপরাষ্ট্র নিউজিল্যান্ড। চারদিকে সাগর দ্বারা বেষ্টিত এই দেশটিতে অসংখ্য ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে। নিউজিল্যান্ড প্রধান দুটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। উত্তর দ্বীপে দেখা যায় হ্রদ, সমুদ্র সৈকত এবং সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। আবার দক্ষিণ দ্বীপে বরফ শীতল পানি, হিমবাহ, খোলা সমুদ্রের দেখা মিলবে। বৈচিত্র্যময় এই প্রকৃতি যেন অপার্থিব সৌন্দর্যের আধার। ঘন বন, সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, বরফ সব কিছুর দেখা মেলে এখানে। রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার খোঁজে তাই পর্যটকরা বেরিয়ে পড়েন নিউজিল্যান্ডের উদ্দেশ্যে। অপূর্ব সব সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, বনের প্রাকৃতিক দৃশ্য মানুষের অবসরকে করতে পারে বর্ণিল ও প্রশান্তিময়। এছাড়া নিউজিল্যান্ডের বড় শহর অকল্যান্ডে অবস্থিত স্কাই টাওয়ার থেকে চমৎকার সব দৃশ্য উপভোগ করা যায়। ইন্সটিটিউট ফর ইকোনমিক্স অ্যান্ড পিসের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ড বিশ্বের চতুর্থ নিরাপদ দেশ হিসেবে বিবেচিত। তাই অ্যাডভেঞ্চার ও প্রকৃতিপ্রেমী নারী ভ্রমণকারীদের জন্য নিউজিল্যান্ড আদর্শ গন্তব্য।
সুইজারল্যান্ড :
ছবি : লনলি প্ল্যানেট
ইউরোপের কেন্দ্রে অবস্থিত ছোট একটি দেশ সুইজারল্যান্ড। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত দেশটি যেন শিল্পীর রঙ তুলিতে আঁকা কোনো ছবি। আল্পস পর্বতের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, চমৎকার ছবির মত সাজানো গ্রাম, অপূর্ব সুন্দর সবুজ ভ্যালি এখানে অ্যাডভেঞ্চারের পাশপাশি চোখজুড়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। পাহাড়-পর্বত, প্রশস্ত হ্রদ, অ্যালপাইন বনাঞ্চল সুইজারল্যান্ডকে অনন্য এক রুপে ভূষিত করেছে। এছাড়াও এখানে আছে হাইকিং, স্কিইং, প্যারাগ্লাইডিং, স্লেজ গাড়িতে চড়ার সুবিধা। তাই রোমাঞ্চপ্রিয় নারী পর্যটকরা অ্যাডভেঞ্চারের টানে ছুটে আসে সুইজারল্যান্ডে। গ্লোবাল পিস ইনডেক্স অনুযায়ী, বিশ্বের ষষ্ট শান্তিপ্রিয় দেশ সুইজারল্যান্ড। তাই নারীরা কোনো সংশয় ছাড়া একাই বেরিয়ে পড়তে পারেন ইউরোপের অন্যতম নিরাপদ এই দেশে।