ইটালির পুলিশের মতে, ওই চক্র বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করে চীনা অভিবাসীদের ইটালিতে পাচার করার আগে তাদের পাসপোর্ট নিয়ে নিতো এবং তাদের সঙ্গে ক্রীতদাসের মতো আচরণ করতো।
পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়, পাচারের আগে অভিবাসীদের ধনী এশীয় নাগরিক হিসেবে দেখিয়ে ভালো পোশাক ও লাগেজ দিয়ে সাজানো হতো। চীনা নাগরিক পরিচালিত ব্যয়বহুল গাড়িতে তোলা হতো। এমন ব্যক্তিদের গাড়িতে তোলা হতো যারা বছরের পর বছর ধরে ইটালিতে বসবাস করছেন এবং অনর্গল ইটালিয়ান ভাষায় কথা বলতে পারেন।
কিন্তু একবার ইউরোপে পৌঁছালে সেই অভিবাসীদের নির্দিষ্ট কর্মক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ করে রাখা হতো, মারাত্মকভাবে শোষণ করা হতো।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সীমান্তে রুটিন চেকের সময় একজন চীনা নাগরিককে ইটালি এবং স্লোভেনিয়া সীমান্তে থামানো হয়। তদন্তের পরে গাড়িতে চার জন অনথিভুক্ত চীনা নাগরিককে খুঁজে পায় পুলিশ। ওই ঘটনার পর তদন্তকারীদের সম্ভাব্য চক্র সম্পর্কে সতর্ক করা হয়।
তদন্তের পর অনিয়মিত পথে চীনা নাগরিকদের ধারাবাহিক পাচারে জড়িত একটি চক্রের অস্তিত্ব খুঁজে পায় ইটালি কর্তৃপক্ষ। এই চক্র সার্বিয়ায় ভিসামুক্ত প্রবেশের সুযোগ নিয়ে চীন থেকে বিভিন্ন ছোট দলে বিভক্ত অভিবাসীদের নিয়ে এসেছিল।
সার্বিয়া থেকে অভিবাসীদের দামী সাজসজ্জা এবং বিলাসবহুল গাড়িতে বসনিয়া, ক্রোয়েশিয়া এবং স্লোভেনিয়া হয়ে ইটালিতে পৌঁছে দিত।
ইটালিতে আনার পর পাচারকৃত অভিবাসীদের ভেনিসের কাছে একটি নিরাপদ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখান থেকে অভিবাসীদের ইটালি, ফ্রান্স এবং স্পেনের মতো দেশগুলোতে নেওয়া হতো।
ইটালি বা ফ্রান্স এবং স্পেনের মতো অন্যান্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে নেওয়ার আগে ভেনিসের ওই বাড়ি বা সেফ হোমে এক বা দুই দিন রাখা হতো।
পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাচারকারীরা সেফ হোমে অভিবাসীদের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে ফেলত। যাতে করে পাচারের পুরো অর্থ পরিশোধ না করা পর্যন্ত ভুক্তভোগীদের গুরুতর শোষণ করা যায়।
অভিবাসীদের অনেক সময় আটকে রক্ষা হতো। কোনো চিকিৎসা সহায়তা ছাড়াই রাখা হয়েছিল তাদের। তাদেরকে শুধু একটা বিছানা এবং অনির্দিষ্ট কাজ করার জন্য জায়গা ছাড়া কিছুই দেওয়া হতো না।
ইটালি পুলিশের প্রতিবেদনে একে আধুনিক ‘দাসত্ব’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
অভিযানের সময় পুলিশ পাচারকারী নেটওয়ার্কের নয়জন সন্দেহভাজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে এবং ৭৭ জন অনিয়মিত অভিবাসীকে শনাক্ত করে। যাদের মধ্যে বেশিরভাগ ১২ থেকে ১৫ বা ১৮ বছর বয়সি। এমন বেশকিছু অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসীকেও আটক করা হয়েছে।
গার্ডিয়ান