1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
বিমান ভ্রমণের অদৃশ্য বাধা ‘নো ফ্লাই লিস্ট’
শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩৯ অপরাহ্ন

বিমান ভ্রমণের অদৃশ্য বাধা ‘নো ফ্লাই লিস্ট’

  • আপডেট সময় শনিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৫

আপনি কি রবার্ট ডাউনি জুনিয়র ও জ্যাক গ্যালিফিনাকিস অভিনীত কমেডি সিনেমা ‘ডিউ ডেট’ দেখেছেন? দেখে থাকলে হয়তো ‘নো ফ্লাই লিস্ট’ বা বিমান নিষিদ্ধ তালিকার ধারণাটির সঙ্গে আপনি পরিচিত। আর যদি না দেখে থাকেন, তবে জানিয়ে রাখি, সিনেমাটিতে ভুলবশত ‘বোমা’ বা ‘সন্ত্রাসী’র মতো শব্দ ব্যবহার করেছিল দুটি চরিত্র। আর এ ধরনের ‘ট্রিগার শব্দ’ ব্যবহার করার কারণে তাদের বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। অতঃপর তাদের দেশজুড়ে গাড়ি চালিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। সিনেমাটি হাস্যকর হলেও বাস্তবে ‘নো ফ্লাই লিস্ট’ বলে একটা বিষয় কিন্তু আছে। আর বাস্তবে তা মোটেও কোনো রসিকতার বিষয় নয়।

মূলত ‘নো ফ্লাই লিস্ট’ হলো একটি গোপনীয় সরকারি তালিকা, যেখানে এমন ব্যক্তিদের নাম থাকে, যাঁদের বাণিজ্যিক বিমানে ভ্রমণ করা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সহজ ভাষায়, এই তালিকায় যাঁর নাম থাকে, তিনি বিমান ভ্রমণের অধিকার হারান। মার্কিন নাগরিকদের কিছু অলঙ্ঘনীয় মানবিক অধিকার থাকলেও বিমানে ওড়ার অধিকার তার মধ্যে পড়ে না। আপনি যদি এমন কিছু করেন, যা ফেডারেল সরকার বা বিমান সংস্থাগুলো যথেষ্ট খারাপ বলে মনে করে, তবে ফ্লাইটে মাঝের সিটে বসার অধিকার হারাতে হতে পারে। নিরাপত্তার স্বার্থে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিশ্বের প্রায় সব বড় বিমান সংস্থারই তাদের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ ‘নো ফ্লাই’ বা ‘রিফিউজ টু ক্যারি’ তালিকা থাকে।

সরকারের গোপন তালিকা ফেডারেল ‘নো ফ্লাই লিস্ট’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হলো সেই দেশ, যেখানে নিরাপত্তার কারণে সবচেয়ে কড়া ও সুপরিচিত ‘নো ফ্লাই লিস্ট’ কার্যকর রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের অফিশিয়াল নো ফ্লাই লিস্ট হলো একটি ব্যক্তিগত তালিকা, যা এফবিআইয়ের একটি বিভাগ থ্রেট স্ক্রিনিং সেন্টার তৈরি করে এবং নিয়মিত হালনাগাদ করে। এই নো ফ্লাই লিস্ট আসলে আরও বৃহত্তর সন্ত্রাসী নজরদারি তালিকার একটি অংশ। এফবিআই জানিয়েছে, এ তালিকার প্রায় শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ হলো মার্কিন নাগরিক। বিশ্বের যেকোনো দেশের নাগরিক এ তালিকায় স্থান পেতে পারেন।

যিনি এ তালিকায় থাকেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসা বা যাওয়া বাণিজ্যিক বিমানে উড়তে পারবেন না। এমনকি তিনি বাণিজ্যিক বিমান ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দিয়েও উড়তে পারবেন না। তবে ধনী যাত্রীরা প্রায়ই প্রাইভেট জেট ব্যবহার করে এই নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যান। কারণ, এই জেটগুলো টিএসএর স্ক্রিনিং আওতাধীন নয়।

যা করলে ফেডারেল নো ফ্লাই লিস্টে নাম ওঠে

এ তালিকায় নাম ওঠার কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ বিমানের নিরাপত্তা হুমকি। বিমান, কোনো বিমান সংস্থা, যাত্রী বা বেসামরিক বিমান নিরাপত্তা-সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক বা দেশীয় সন্ত্রাসবাদের কাজ বলে বিবেচিত হতে পারে—এমন কোনো হুমকি থেকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য এ লিস্ট করা হয়। অন্যটি সন্ত্রাসবাদের হুমকি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা বিদেশে মার্কিন সরকারি স্থাপনা যেমন দূতাবাস, কনস্যুলেট, সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের কাজ করার হুমকি থেকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য।

উচ্ছৃঙ্খল আচরণই বিমান সংস্থার নো ফ্লাই লিস্টে নাম আসার প্রধান কারণ। ছবি: পেক্সেলস
উচ্ছৃঙ্খল আচরণই বিমান সংস্থার নো ফ্লাই লিস্টে নাম আসার প্রধান কারণ। ছবি: পেক্সেলস

কীভাবে জানবেন আপনি তালিকায় আছেন

ফেডারেল নো ফ্লাই লিস্টটি গোপনীয়। কারণ, এটি প্রকাশ্যে এলে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো এর সুবিধা নিতে পারে। সাধারণত, আপনি তালিকাভুক্ত হয়েছেন কি না, তা জানার একমাত্র উপায় হলো টিকিট কেনার পর বিমান সংস্থা থেকে বোর্ডিং নম্বর পাস না পাওয়া। যদি আপনি মার্কিন নাগরিক বা বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা হন, তাহলে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি থেকে একটি চিঠি পেতে পারেন। যদিও তাতে কেন আপনি তালিকাভুক্ত হয়েছেন, তা সব সময় ব্যাখ্যা করা হয় না। চিঠিতে আপিল করার একটি সুযোগ থাকে।

বিমান সংস্থাগুলোর নিজস্ব ‘নো ফ্লাই লিস্ট’

ফেডারেল তালিকার পাশাপাশি বিমান সংস্থাগুলোও তাদের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ তালিকা তৈরি করে। যাতে যাত্রীদের ভবিষ্যতে ওড়া থেকে নিষিদ্ধ করার অধিকার দেওয়া থাকে। ডেল্টার মতো বেশির ভাগ প্রধান বিমান সংস্থাই টিএসএ/হোমল্যান্ড সিকিউরিটি পরিচালিত তালিকা থেকে আলাদা একটি অভ্যন্তরীণ নো ফ্লাই লিস্ট বজায় রাখে। এই অভ্যন্তরীণ তালিকায় থাকা যাত্রীদের ‘উচ্ছৃঙ্খল যাত্রী’ হিসেবে গণ্য করা হয়। ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুসারে, ২০২৪ সালে ২ হাজার ১০২টি উচ্ছৃঙ্খল যাত্রীর রিপোর্ট নথিভুক্ত হয়েছে। তবে প্রতিদিন প্রায় ২৯ লাখ যাত্রী যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দর ব্যবহার করেন। আর এই উচ্ছৃঙ্খল যাত্রীর সংখ্যা ভ্রমণকারীর তুলনায় সামান্য। একটি বিমান সংস্থার নো ফ্লাই লিস্টে থাকা মানেই অন্য কোনো বিমান সংস্থার তালিকায় থাকা নয়, কারণ, তারা সাধারণত এ তথ্য আদান-প্রদান করে না।

উচ্ছৃঙ্খল আচরণই বিমান সংস্থার নো ফ্লাই লিস্টে নাম আসার প্রধান কারণ। এমন সহিংস আচরণ বা হুমকি দেওয়া, যা বিমানকর্মীদের তাঁদের কাজ করতে বাধা দেয় এবং অন্য যাত্রীদের নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে—এমন আচরণকেই উচ্ছৃঙ্খল আচরণ হিসেবে গণ্য করা হয়। গুরুতর ঘটনার ক্ষেত্রে বিমান সংস্থা আপনার আচরণ এফএএর কাছে রিপোর্ট করতে পারে, যারা প্রতি লঙ্ঘনের জন্য ৩৭ হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে। এমনকি এফএএ আপনার মামলা এফবিআইয়ের কাছেও পাঠাতে পারে। যার ফলে ফৌজদারি বিচার ও কারাদণ্ডও হতে পারে।

অতিরিক্ত স্ক্রিনিং মানেই নো ফ্লাই লিস্টে নাম আছে, এমন নয় । ছবি: পেক্সেলস
অতিরিক্ত স্ক্রিনিং মানেই নো ফ্লাই লিস্টে নাম আছে, এমন নয় । ছবি: পেক্সেলস

জানবেন যেভাবে: কিছু যাত্রী সঙ্গে সঙ্গে বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়ার পর কাগজপত্র পেতে পারেন। অন্যরা বিমান সংস্থা থেকে ই-মেইল পেতে পারেন।

অতিরিক্ত স্ক্রিনিং কি নিষেধাজ্ঞার লক্ষণ?

আপনার বোর্ডিং পাসে যদি এসএসএসএস অর্থাৎ সেকেন্ডারি সিকিউরিটি স্ক্রিনিং সিলেকশন দেখায় বা আপনার অতিরিক্ত স্ক্রিনিং করা হয়, এর মানে এই নয় যে আপনি কোনো নো ফ্লাই লিস্টে আছেন। ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির তথ্য অনুসারে, এই বিলম্ব প্রায়ই নজরদারি তালিকায় থাকা অন্য কোনো ব্যক্তির নামের সঙ্গে মিল থাকার কারণে ঘটে।

এমন হলে কী করতে পারেন

যদি আপনার সঙ্গে এমনটা ঘটে, সে ক্ষেত্রে আপনি রেড্রেস নম্বরের জন্য আপিল করতে পারেন। এটি হলো একটি সাত সংখ্যার কেস নম্বর, যা আপনি ফ্লাইট বুক করার সময় ইনপুট করতে পারেন। এই নম্বর ব্যবহার করে বিমান সংস্থা এবং টিএসএ দেখতে পারে যে আপনি আসলে নজরদারি তালিকায় নেই, কেবল নামের মিলের কারণে এই ভুল হয়েছে। ডিএইচএসের তথ্যমতে, রেড্রেসের জন্য আবেদনকারী ব্যক্তিদের ৯৮ শতাংশের সঙ্গে সন্ত্রাসী নজরদারি তালিকার কোনো সম্পর্ক নেই।

সূত্র: ট্রাভেল+লিজার

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com