মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২১ পূর্বাহ্ন

বিমানের ভিআইপি ফ্লাইটের ক্রুরা বহাল তবিয়তে

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশ বিমানের সুবিধাভোগী ও ভিআইপি ফ্লাইটগুলোতে ডিউটি করা প্রভাবশালী ও দাপুটে ক্রুরা বহাল তবিয়তে আছেন। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ-সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মন্ত্রীদের ফ্লাইটগুলোতে ঘুরেফিরে ২৫-৩০ জন কেবিন ও ককফিট ক্রুকে ফ্লাইট দেওয়া হয়েছে। নানা তদবির ও চেষ্টা করেও অন্যরা এসব ফ্লাইটের ধারেকাছেও যেতে পারেননি। ভিভিআইপি ফ্লাইটে মানা হতো না রোস্টার শিডিউল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, যুবলীগ সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ, সাবেক মন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসসহ প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিদের ফ্লাইটে তাদের পছন্দের কেবিন ও ককপিট ক্রু ছাড়া অন্য কাউকে ডিউটি দেওয়া হতো না। ঘুরেফিরে কয়েকজন কেবিন ক্রু আর ককপিট ক্রু এসব ফ্লাইট উপভোগ করতেন দাপটের সঙ্গে।

জানা গেছে, ফ্লাইটে গিয়ে এসব ক্রু ভিআইপির সঙ্গে ছবি তুলতেন, সেলফি তুলতেন। তারপর সেগুলো দেখিয়ে বিমানজুড়ে সৃষ্টি করতেন এক ধরনের ত্রাসের রাজত্ব। এছাড়া বদলি, পদোন্নতি, বিদেশে লোভনীয় স্টেশনে পোস্টিংসহ নানা অনিয়ম করতেন। শুধু তাই নয়, কতিপয় অসাধু ক্রু চালাতেন সোনা চোরাচালান। এক্ষেত্রে পুরো ফ্লাইটই একরকম কিনে ফেলতেন চোরাকারবারি গডফাদাররা। তারপর ওই ফ্লাইটের ডিউটি দেওয়া হতো তাদেরই পছন্দের কেবিন ক্রু ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

শুধু কেবিন ক্রুই নয়, ককপিট ক্রু অর্থাৎ পাইলট, ফাস্ট অফিসার ও প্রকৌশল বিভাগেরও কতিপয় প্রকৌশলীও নিয়েছেন এই সুযোগ। বিমানে এসব ক্রু-প্রকৌশলীদের কখনো বলা হতো ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক, কখনো বলা হতো ওরা নানক-শেখর-তাপসের লোক। কেবিন ক্রু বিভাগে শেখ হাসিনার লোকদের নেতৃত্বে ছিলেন ফিরোজ মিয়া আবীর ও সাধারণ সম্পাদক লোটাস। ভিভিআইপি ফ্লাইটে কারা যাবেন তার তালিকা হতো এদের হাত দিয়ে। আবীর-লোটাসের নিদের্শে ৫ আগস্ট শেখ কামালের ৭৫তম জন্মবার্ষিকী পালন করতে বাধ্য হয়েছিলেন বিমানের তিন শতাধিক কেবিন ক্রু। ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা যখন সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন তখন আবীরের নেতৃত্বে বিমানে ধুমধাম করে পালন করা হয় শেখ কামালের জন্মদিন। বলাকা ভবনের লবিতে শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। শুধু তাই নয়, তার নির্দেশে ফ্লাইট রেখে কেবিন ক্রুদের প্রতিবছর ১৫ আগস্ট পালন করতে হতো। কিন্তু এত কিছুর পরও ছাত্র-জনতার গণরোষে শেখ হাসিনা পালানোর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেদিন ফ্রান্স থেকে দেশে ফিরছিলেন সেদিন এরাই ফের ভোল পালটে বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিমানের এসব সুবিধাভোগী ও ভিআইপি ফ্লাইটগুলোতে ডিউটি করা প্রভাবশালী ও দাপুটে ক্রুদের তালিকা করা হচ্ছে। এরপর নেওয়া হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।

জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে লন্ডন, আমেরিকা, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, সৌদি আরব, আবুধাবি, ফিনল্যান্ড, চীন, ভারতসহ প্রায় ৪০টির বেশি দেশ ভ্রমণ করেন। সব ফ্লাইটই ছিল বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে। বিমানের এই ফ্লাইটগুলোকে বলা হতো ভিভিআইপি ফ্লাইট। এসব ফ্লাইটে ভ্রমণ করতে হলে সরকারের সব গোয়েন্দা সংস্থার ক্লিয়ারেন্স থাকতে হয়। কিন্তু এই ভিআইপিরা এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সব ধরনের ক্লিয়ারেন্স থাকলেও উল্লিখিত ক্রু ছাড়া অন্য কেউ যেতে পারতেন না। বিমানের ডিউটি রোস্টার সূত্রে জানা গেছে, এসব ফ্লাইটে সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করেছেন সাবেক ক্রু চিফ পার্সার রঞ্জু, জুনিয়র পার্সার সিনহা, (জুনিয়র পার্সার) তাইফ, জুনিয়র পার্সার আযিজ, জুনিয়র পার্সার মরিয়ম, ফ্লাইট স্টুয়ার্ডেস সাবিহা ও জুনিয়র পার্সার পুষ্পিতা। মোট কথা এরা ছিলেন, প্রতিটি ভিভিআইপি ফ্লাইটের নিয়মিত ও অবিচ্ছেদ্য ক্রু। তাদের প্রভাবে বিমানের অরগানাইজেশন সেট আপ এ শিডিউলিং বিভাগে কোনো পদ না থাকা সত্ত্বেও জেপি তাইফ এবং জেপি ফারুক কেবিন ক্রু হয়েও পুরো শিডিউলিংয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। কেউ কেউ পছন্দের ক্রুদের মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শিডিউল দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com