করোনা পরিস্থিতি আবার অবনতির দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় সরকার বিদেশফেরত যাত্রীদের জন্য কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করার নির্দেশনা দিয়েছে। বিদেশফেরত সব যাত্রীকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে- ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রজ্ঞাপন দিয়ে এমন ঘোষণা দেওয়ার পর প্রথমে অনেকটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়।
নিউইয়র্ক থেকে যারা দেশে ফেরত যাওয়ার জন্য টিকিট কিনেছেন তারা অনেকেই টিকিট ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নেন। কেউ কেউ যাওয়ার তারিখ পরিবর্তন করেন। এতে ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েন। নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপ থেকে যেসব যাত্রী বাংলাদেশে ফিরবেন, তাদের টিকা দেওয়া থাকলে কিংবা ফ্লাইটের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর সার্টিফিকেট থাকলেও সবাইকে হোটেলে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। হোটেল নিজে পছন্দ করা যাবে না, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হোটেলেই থাকতে হবে। হোটেলের খরচও বিদেশফেরত যাত্রীকেই বহন করতে হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশে পৌঁছা যাত্রীদের ক্ষেত্রে হোটেলে কোয়ারেন্টাইন করতে হবে না, তাদের নিজ বাসায় ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন করলেই চলবে। তবে তাদের সঙ্গে অবশ্যই পিসিআর টেস্টের রিপোর্ট থাকতে হবে। সেটি হতে হবে ফ্লাইট ছাড়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে। তা ছাড়া তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য সেল ফোন নম্বর দিতে হবে। প্রয়োজনে ওই সেল ফোন নম্বরও মনিটর করা হতে পারে। এটা নিশ্চিত করতে যে তিনি কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন কি না। তবে পিসিআর সনদ ছাড়া যেসব যাত্রী বাংলাদেশে যাবেন, তাদেরকে সরকার নির্ধারিত হোটেলে থাকতে হবে ১৪ দিন। বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করেই সরকার থেকে ব্যাপক সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
এদিকে বিদেশ থেকে যারাই দেশে ফিরবেন তাদেরকে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে- এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে অনেকটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে নিউইয়র্ক থেকে যারা ঢাকায় ফিরতে চাইছেন এবং টিকিট কিনেছেন তাদের অনেকেই দেশে যাওয়ার শিডিউল পরিবর্তন করেছেন। অনেকে আবার নিউইয়র্কের বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সিতে ফোন করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে ট্রাভেল এজেন্সির কর্মকর্তারাও পড়েন ঝামেলায়।
২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বিদেশফেরত যাত্রীদের বিষয়ে বলা হয়, ‘বিদেশ হতে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক (হোটেল নিজ খরচে) কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে।’
এ বিষয়ে বাংলা ট্রাভেলসের সিইও মোহম্মদ বি হোসেন (বেলাল) বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করার পর অনেকের মধ্যেই বিভ্রান্তি তৈরি হয়। অনেকেই আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন। তারা কেউ কেউ দেশে যাওয়ার শিডিউল পরিবর্তন করেন। আবার কেউ কেউ যাওয়া বাতিল করেন। রিফান্ড নেন। তিনি বলেন, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি যদিও পরে এ ব্যাপারে নির্দেশনাটি বিদেশফেরত যাত্রীদের জন্য স্পষ্ট করেছে। তার পরও মানুষের মধ্যে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে। আমরা যাত্রীদের বলছি, ইউরোপের যাত্রীদের জন্য ১৪ দিন বাধ্যতামূলক হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এটা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের জন্য নয়। তবে এটাও বলছি, করোনার টিকা নেওয়া থাকলেও পিসিআরের রিপোর্ট নিয়ে দেশে যেতে হবে।
এস্টোরিয়া ডিজিটাল ট্রাভেলসের কর্ণধার নজরুল ইসলাম বলেন, ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের ঘোষণায় অনেকেই আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং তারা টিকিট ফেরত দেন। এতে আমাদের ওপর চাপ তৈরি হয়। তিনি বলেন, আসলে কোনো বিষয়ে ঘোষণা এলে ব্যাখ্যাসহ দেওয়া দরকার। তা না হলে সমস্যা হয়। তিনি বলেন, আমরা যাত্রীদের বলছি, পিসিআরের রিপোর্ট নিয়ে দেশে গেলে হোটেলে কোয়ারেন্টাইন করতে হবে না। বাংলাদেশে ৩১ মার্চ বুধবার থেকেই নতুন নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে।
দেশে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে নতুন নির্দেশনা জারির আগে ইউরোপ-ফেরত যাত্রীদের জন্য সাত দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক ছিল। বাকিদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকলেই চলত। তবে পিসিআর সনদ সবার জন্য বাধ্যতামূলক ছিল।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের রোগী ধরা পড়ে। গত ২৯ মার্চ সোমবার পর্যন্ত ৬ লাখ ৮৯৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। সরকারি হিসাবে মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৯৪৯ জনের। দেশে গত বছরের নভেম্বরের পর থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমছিল। মার্চ থেকে আবার বাড়ছে।