বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১৫ অপরাহ্ন
Uncategorized

বিদ্যুৎচালিত গাড়ি আপনার ভাবনার চাইতেও দ্রুত দখল করবে বিশ্ব বাজার

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৫ জুন, ২০২১

হয়তো আপনি এখনো নিজে বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ি চালাননি – হয়তো আপনার পাড়ার দু’একজনকে চালাতে দেখেছেন।

তাই যদি এমন বলা হয় যে – ইলেকট্রিক গাড়ির বাজার দখল করে নেবার আর খুব বেশি দিন বাকি নেই, তাহলে আপনার মনে হতে পারে, এটা একটু বেশি সাহসী ভবিষ্যদ্বাণী হয়ে গেল।

কিন্তু আসলে ব্যাপারটা বোধ হয় তা নয়।

আমরা আসলে মোটরিং এর ক্ষেত্রে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আমাদের চোখের সামনে ঘটতে দেখছি – যা ১৯১৩ সালে হেনরি ফোর্ডের প্রথম গাড়ি তৈরির প্রোডাকশন লাইন শুরুর পর আর ঘটেনি।

যারা বিশ্বব্যাপী মোটরগাড়ি শিল্পের গতিবিধির ওপর নজর রাখেন – সেই পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সেই সময় প্রায় এসে গেছে, যখন ইলেকট্রিক গাড়ির বিক্রি খুব দ্রুতগতিতে পেট্রোল আর ডিজেলচালিত গাড়ির বিক্রিকে ছাড়িয়ে যাবে।

অন্ততঃ মোটরগাড়ি নির্মাতারা তাই মনে করছেন।

যেমন জাগুয়ার কোম্পানি পরিকল্পনা করছে ২০২৫ সাল থেকে তারা শুধু বিদ্যুৎ-চালিত গাড়িই বিক্রি করবে।

ভলভো বলছে, তারা ২০৩০ সাল থেকে শুধু ইলেকট্রিক গাড়িই বিক্রি করবে, এবং সপ্তাহ দেড়েক আগে ব্রিটিশ স্পোর্টসকার নির্মাতা কোম্পানি লোটাস বলছে, তারাও তাই করবে ২০২৮ সাল থেকে।

জাগুয়ার বা লোটাসের মত দামী গাড়ি নির্মাতারাই যে শুধু এটা করতে যাচ্ছে তাই নয়।

জেনারেল মোটর্স বলছে, তারা ২০৩৫ সাল নাগাদ শুধুই ইলেকট্রিক গাড়ি বানাবে। ফোর্ড বলছে, তারা ইউরোপে যত গাড়ি বিক্রি করে, ২০৩০ সালের মধ্যে তার সবই হবে বিদ্যুৎ-চালিত।

ফোক্সওয়াগন বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের বিক্রীত গাড়ির ৭০ শতাংশই হবে ইলেকট্রিক।

এর সাথে ক্রমবর্ধমান পরিবেশ সচেতনতার একটা সম্পর্ক আছে। পৃথিবীর অনেক দেশের সরকারই লক্ষ্যমাত্রা স্থির করছে পেট্রোল ও ডিজেলচালিত গাড়ি নিষিদ্ধ করার। আর তাতে উৎসাহিত হচ্ছে বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ি তৈরির প্রক্রিয়া।

বলা যায়, ফসিলজাত জ্বালানি-চালিত গাড়ি ধীরে ধীরে উঠে যাওয়াটা এখন এক রকম অবধারিত। আর এটা ঘটছে প্রযুক্তিগত বিপ্লবের জন্যই ।

প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে যেতে পারে খুব দ্রুতগতিতে

ব্যপারটা বোঝা যায় ইন্টারনেটের দিকে তাকালে।

উনিশশো নব্বইয়ের দশকে বা ২০০০ সালের পর প্রথম দশকটিতে ইন্টারনেট যে অবস্থায় ছিল – বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার এখন মোটামুটি সেই রকম একটা জায়গাতেই আছে।

সেসময়টায় একটা কম্পিউটার আরেকটা কম্পিউটারের সাথে কথা বলছে এটা ছিল এক নতুন জিনিস। আর এ নিয়ে খুব চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল তখন।

জেফ বেজোস তখন আমাজন প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন। গুগল তখন অল্টাভিস্টা, আস্ক জিভস আর ইয়াহু’র থেকে বাজারের দখল নিয়ে নিচ্ছে।

কিছু কিছু কোম্পানির দাম তখন এমন স্তরে উঠছিল যে তা চোখ উল্টে যাবার মতই ।

যারা তখনও এর বাইরে রয়ে গেছেন, তাদের কাছে ব্যাপারটা আকর্ষণীয় মনে হলেও ছিল অপ্রাসঙ্গিক। তারা ভাবতেন, “আমাদের হাতে তো ফোন-ই রয়েছে। কম্পিউটার দিয়ে যোগাযোগের কি কোন দরকার আছে?”

২০০০ সালের পর প্রথম দশকে ইন্টারনেট যেখানে ছিল, বৈদ্যুতক গাড়ি এখন ঠিক সেরকম অবস্থায়

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,
২০০০ সালের পর প্রথম দশকে ইন্টারনেট যেখানে ছিল, বৈদ্যুতক গাড়ি এখন ঠিক সেরকম অবস্থায়

কিন্তু অন্য সব সফল প্রযুক্তির মতোই ইন্টারনেটের সারা পৃথিবীতে আধিপত্য বিস্তারও কোন সরলরৈখিক পথে ঘটেনি।

এটা বিকাশ আস্তে আস্তে হয়নি – যাতে পরবর্তী ধাপের জন্য তৈরি হতে পরিকল্পনা করতে পারি।

বরং ইন্টারনেটের বিকাশ হয়েছে বিস্ফোরকভাবে, একটা উদ্দাম ঝড়ের মতো। অনেক ব্যবসাকে ধ্বংস করে দিয়েছে ইন্টারনেট। আমরা এতদিন যেভাবে কাজ করতাম তা আমূল বদলে দিয়েছে।

এই যে পরিবর্তনের প্রক্রিয়া – একে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলেন ‘এস-কার্ভ’।

ইন্টারনেট এস-কার্ভ

এটা দেখতে আসলে ইংরেজি এস অক্ষরের মত, তবে একটু লম্বাটে ধরনের।

একটি আবিষ্কারের যাত্রা শুরু হয় ধীর গতিতে। প্রথম দিকে পাগলাটে ধরনের লোক ছাড়া কেউ এতে আগ্রহী হয়না।

বৈদ্যুতিক গাড়িও এখন আছে গ্রাফের এস আকৃতির রেখার একেবারে নিচের দিকে।

.এস-কার্ভ - নতুন পণ্যের বিক্রি কীভাবে বাড়ে
ছবির ক্যাপশান,
.এস-কার্ভ – নতুন পণ্যের বিক্রি কীভাবে বাড়ে

ইন্টারনেটের গ্রাফের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৬৯ সালের ২৯শে অক্টোবর, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে দশটায় লস এঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছিল কয়েকশ মাইল দূরের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি কম্পিউটারের ।

গবেষকরা একটি কম্পিউটারে লিখেছিলেন এল, ও, এবং জি। তারা লিখতে চেয়েছিলেন লগইন শব্দটা – তবে শেষ করতে পারেন নি – তার আগেই সিস্টেম ক্র্যাশ করে।

এক দশক পরেও মাত্র কয়েকশ’ কম্পিউটার একটি নেটওয়ার্কে যুক্ত করা সম্ভব হয়েছিল।

তবে পরিবর্তনের গতি তখন দ্রুততর হচ্ছিল।

উনিশশো নব্বইয়ের দশকে প্রযুক্তি-ভালোবাসেন এমন লোকেরা ব্যক্তিগত কম্পিউটার কিনতে শুরু করেছিলেন।

এর পর বাজার বাড়তে থাকায় কম্পিউটারের দাম কমতে লাগলো ক্রমশ, কম্পিউটারের কর্মক্ষমতারও বিপুল পরিমাণ উন্নতি হলো। এর ফলে আরো বেশি করে লোক ইন্টারনেটে যুক্ত হতে উৎসাহিত হলেন।

এখানে এস-কার্ভের রেখাটি ওপরের দিকে উঠতে শুরু করেছে, প্রবৃদ্ধি ঘটছে দ্রুতগতিতে। ১৯৯৫ সালের মধ্যে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন ১ কোটি ৬০ লাখের মত লোক।

কিন্তু ২০০১ সালের মধ্যে ইন্টারনেটে যুক্ত লোকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৫১ কোটি ৩০ লাখে।

ভিয়েনায় ১৮৭৫ সালে সিগফ্রিড মার্কাসের তৈরি প্রথম পেট্রোলচালিত গাড়ি

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,
ভিয়েনায় ১৮৭৫ সালে সিগফ্রিড মার্কাসের তৈরি প্রথম পেট্রোলচালিত গাড়ি

আর, এখন ইন্টারনেটে যুক্ত আছেন ৩০০ কোটিরও বেশি লোক।

এখানে এসে দেখা যাচ্ছে এস-কার্ভের রেখাটি আর উঠছে না, এখন এটা মাটির সাথে সমান্তরাল হয়ে যাচ্ছে।

এর অর্থ – প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাচ্ছে, যারা মানে হলো ইন্টারনেট চায় এরকম প্রায় সব লোকই এখন অনলাইন হয়ে গেছেন।

স্মার্টফোন, ফটোগ্রাফি, এমনকি এ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা গেছে। প্রথমে ধীরগতির সূচনা, তার পর হঠাৎ বিপুল বৃদ্ধি, তার পর বাজারের একটা পরিণত অবস্থা সৃষ্টি হয় – প্রবৃদ্ধির গতি হয়ে পড়ে ধীর।

মোটরগাড়িতে যে প্রযুক্তির ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয় তাকে বলে ইন্টারনাল কমবাশ্চন ইঞ্জিন। গত শতাব্দীর সূচনায় এই ইঞ্জিন যখন আবিষ্কৃত হয়েছিল তার জনপ্রিয়তা ও ব্যবহারও বেড়েছিল ঠিক এই এস-কার্ভের মত করেই। ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল বাষ্পীয় ইঞ্জিন এবং ছাপাখানার ক্ষেত্রেও – যেগুলো ছিল সে যুগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার।

ভিডিওর ক্যাপশান,দেশী ইলেক্ট্রিক ‘স্পোর্টস কার’

বলা চলে, বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রেও ঠিক একই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে।

বরং ইন্টারনেটের চাইতে এর ইতিহাস অনেক পুরোনো।

একেবারে প্রথম ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরি করেছিলেন স্কটিশ আবিষ্কারক রবার্ট এ্যান্ডারসন – ১৮৩০এর দশকে।

কিন্তু আসলে বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রযুক্তি অভাবনীয় উন্নত হয়েছে গত কয়েক বছরে। এতটাই যে, তা এখন প্রতিযোগিতামূলক দামে বিক্রি সম্ভব হচ্ছে।

বিবিসির মোটরিংবিষয়ক টিভি অনুষ্ঠান টপ গিয়ারের উপস্থাপক এবং পুরোনো গাড়ি বিক্রেতা কোয়েন্টিন উইলসন বৈদ্যুতিক গাড়ি চালাচ্ছেন আজ এক দশকেরও বেশি সময় হয়ে গেল।

১৮৯০এর দশকে লন্ডনের রাস্তায় সে যুগের ইলেকট্রিক মোটর ক্যাব

ছবির উৎস,HERITAGE IMAGES

ছবির ক্যাপশান,
১৮৯০এর দশকে লন্ডনের রাস্তায় সে যুগের ইলেকট্রিক মোটর ক্যাব

এখন থেকে ২০ বছর আগে জেনারেল মোটর্স একটি ইলেকট্রিক গাড়ি বানিয়েছিল যার নাম ইভিওয়ান। ১০০ কোটি ডলার খরচ করে তৈরি করা সেই ‘কুখ্যাত’ গাড়িটি বানানো হয়েছিল হাজারখানেক।

কিন্তু জিএম নিজেরাই মনে করেছিল – এ জিনিস চলবে না, এবং তারা হাতেগোণা কয়েকটি বাদে সেই প্রথম ইলেকট্রিক গাড়ির সবগুলোই ধ্বংস করে ফেলেছিল।

ইভিওয়ানের রেঞ্জ ছিল ভয়াবহ রকমের খারাপ – ঘন্টায় ৫০ মাইলের বেশি দ্রুতগতিতে তা চলতে পারতো না।

এই গাড়ির টেস্ট-ড্রাইভ অর্থাৎ পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়েছিলেন কোয়েন্টিন উইলসন।

মি. উইলসন বলেছেন, মাত্র ৫০ মাইল গতিতে চললেও তার মন জয় করেছিল এ গাড়ি। “আমার মনে আছে, আমি ভেবেছিলাম এটাই হচ্ছে ভবিষ্যতের গাড়ি।”

এক দশক পরে মি. উইলসনের প্রথম নিজস্ব ইলেকট্রিক গাড়িটি ছিল একটি সিথোয়েন সি-জিরো।

১৯৯৮ সালে জিএম-এর প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি ইভিওয়ান

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,
১৯৯৮ সালে জিএম-এর প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি ইভিওয়ান

তিনি সেই বৈদ্যুতিক গাড়িটি যখন টপ গিয়ার অনুষ্ঠানের আরেক উপস্থাপক জেরেমি ক্লার্কসনকে দেখিয়েছিলেন – তখন এটাকে সম্পূর্ণ বাতিল করে দিয়েছিলেন ক্লার্কসন। তার ভাবখানা ছিল এমন যে এটা কোন গাড়িই হয়নি।

উইলসন স্বীকার করেন, ওই গাড়িতে হিটার চালানো যেতো না কারণ তাহলে তার গতি কমে যেতো।

কিন্তু সময় বদলে গেছে

মি. উইলসনের সবশেষ বৈদ্যুতিক গাড়িটির হচ্ছে একটি টেসলা মডেল থ্রি।

এ গাড়ি কত দ্রুত চালানো যাবে তা নিয়ে আর ভাবতে হয়না।

একবার চার্জ করলে এ গাড়িটি প্রায় ৩০০ মাইল চলতে পারে। স্থির অবস্থা থেকে ঘন্টায় ৬০ মাইল গতিতে উঠতে এটি সময় নেয় মাত্র ৩.১ সেকেণ্ড।

“গাড়িটি খুবই আরামদায়ক, ভেতরে অনেক জায়গা, এটা চালাতেও খুব মজা। আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি আমি তার কখনো পেছন ফিরে তাকাবো না” – বলেন উইলসন।

ব্যাটারির প্রযুক্তিতে পরিবর্তন

বৈদ্যুতিক গাড়ির মোটর, একে পরিচালনাকারী কম্পিউটার, চার্জিং এর পদ্ধতি এবং গাড়ির ডিজাইন – সব ক্ষেত্রেই এখন এখন ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।

তবে এসব পরিবর্তন অনেকটাই সম্ভব হয়েছে গাড়ির ব্যাটারির প্রযুক্তিতে ঘটে যাওয়া উন্নতির ফলে।

টেসলার মডেল থ্রি - সবচেয়ে জনপ্রিয় ইলেকট্রিক গাড়ি

ছবির উৎস,TESLA

ছবির ক্যাপশান,
টেসলার মডেল থ্রি – সবচেয়ে জনপ্রিয় ইলেকট্রিক গাড়ি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরিবেশসম্মত জ্বালানি গবেষণা কেন্দ্র আরএমআই-এর মেডেলিন টাইসন বলছেন, এখন প্রতি কিলোওয়াট ব্যাটারি শক্তি উৎপাদনের খরচ হচ্ছে মাত্র ১০০ ডলার – যা একদশক আগেও ছিল ১০০০ ডলার।

এ পরিবর্তনের ফলেই আসলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম পেট্রোল বা ডিজেলচালিত গাড়ির চেয়ে সস্তা হতে শুরু করে।

কিন্তু মিজ টাইসন বলছেন, আপনি যদি সাধারণ গাড়ির তেল এবং সার্ভিসিংএর খরচ হিসেবে নেন তাহলে দেখা যায় – ইলেকট্রিক গাড়ি এখনই অপেক্ষাকৃত সস্তা হয়ে গেছে।

বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারির এনার্জি ডেন্সিটি – অর্থাৎ এতে কি পরিমাণ শক্তি মজুত রাখা যাবে – তা ক্রমাগত বাড়ছে এবং এসব ব্যাটারি ক্রমে আরো বেশি দীর্ঘস্থায়ীও হচ্ছে।

গত বছর চীনের একটি ব্যাটারি প্রস্তুতকারক কোম্পানি সি এ টিএলর এমন একটি ব্যাটারি তৈরি করেছে যা দিয়ে একটি গাড়ি দশ লক্ষ মাইল চলতে পারবে।

বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারির দমি ক্রমশ কমছে

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,
চীনে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারির একটি কারখানা

বিশেষ করে ট্যাক্সি ক্যাব কোম্পানিগুলো দ্রুতগতিতে ইলেকট্রিক গাড়ির দিকে ঝুঁকছে। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানে বহু গাড়ি রাখতে হয়, তারা অনেক বেশি মাইল চলে, এবং তারা জ্বালানির ক্ষেত্রে ইলেকট্রিক গাড়ি দিয়ে বিপুল পরিমাণ খরচ বাঁচাতে পারছে।

মিজ টাইসন বলছেন, বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম যেভাবে কমছে তাতে যে খুচরো ক্রেতারা মাত্র একটি-দুটি গাড়ির মালিক, তারাও খুব শিগগীরই এর দিকে ঝুঁকবেন।

কত দ্রুত এটা ঘটবে?

উত্তর হলো – খুব দ্রুত।র ১৯৯০এর দশকে ইন্টারনেট যেভাবে বেড়েছিল বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারও ঠিক একইভাবে বাড়ছে।

সারা বিশ্বে ২০২০ সালে ইলেকট্রিক গাড়ি বিক্রি হয়েছে ৩২ লাখ, শতকরা হিসেবে এই বৃদ্ধির পরিমাণ হচ্ছে ৪৩ শতাংশ- যদিও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সার্বিক ভাবেইএক পঞ্চমাংশ কমে গেছে।

পৃথিবীতে যে পরিমাণ গাড়ি বিক্রি হয় – এই সংখ্যা তার মাত্র পাঁচ শতাংশ। কিন্তু গ্রাফে দেখা যায় – এ সংখ্যা ইতোমধ্যেই এস-কার্ভের রেখার ওপরদিকে উঠতে থাকা অংশে পৌঁছে গেছে।

বিনিয়োগ ব্যাংক ইউবিএস এক পূর্বাভাসে বলছে, ২০২৫ সাল নাগাদ যত নতুন গাড়ি বিক্রি হবে তার ২০ শতাংশ হবে বৈদ্যুতিক গাড়ি।

২০৩০ সালে এ অনুপাত উঠে যাবে ৪০ শতাংশে। আর ২০৪০ সাল নাগাদ – ইউবিএসের হিসেব অনুযায়ী – যত নতুন গাড়ি বিক্রি হবে তার প্রায় সবই হবে বৈদ্যুতিক গাড়ি।

সারা বিশ্বেই বাড়ছে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি
ছবির ক্যাপশান,সারা বিশ্বেই বাড়ছে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি

গাড়ি নির্মাতারা বলেন, এর একটা কারণ হলো – যত বেশি ইলেকট্রিক গাড়ি বানানো হবে, ততই এটা ক্রমশ আরো উন্নত হবে, এবং ততই এটা আরো সস্তা হতে থাকবে।

এ কারণেই কম্পিউটার, রান্নাঘরের নানা সরঞ্জাম, আর পেট্রোল-ডিজেলচালিত গাড়ি এখন এত সুলভ হয়েছে।

ঠিক এটাই ঘটছে ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারির ক্ষেত্রেও। ব্যাটারি যতই উন্নত এবং সস্তা হচ্ছে, ইলেকট্রিক গাড়ির দামও ততই কমছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার সিঙ্গুলারিটি ইউনিভার্সিটির জ্বালানিও পরিবেশ বিভাগের প্রধান রামেজ ন্যাম বলছেন, আমরা এখন সেই স্তরের কাছাকাছি এসে গেছি, যখন বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির খরচ, পেট্রোল-ডিজেলচালিত গাড়ির তুলনায় প্রতিযোগিতামূলক হয়ে যাবে।

তিনি মনে করেন, এই বিন্দুতে পৌঁছে গেলেই ফসিল জ্বালানি-চালিত মোটরযানের খেলা শেষ হয়ে যাবে।

টেসলা গাড়ির নির্মাতা স্বঘোষিত ‘টেকনো-কিং’ ইলন মাস্কও তাই বিশ্বাস করেন।

ইলন মাস্ক গত মাসেই বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, টেসলা মডেল থ্রি এখন ‘প্রিমিয়াম সেডান’ শ্রেণীতে সর্বাধিক বিক্রীত গাড়িতে পরিণত হয়েছে। আর নতুন যে মডেল ওয়াই টেসলা বাজারে আসবে – তা হবে আরো সুলভ, এবং তা হবে যে কোন শ্রেণীর গাড়ির মধ্যে সর্বাধিকি বিক্রীত।

তার কথায়, “ক্রেতাদের মধ্যে ইলেকট্রিক গাড়ি সম্পর্কে যে ধারণা ছিল তাতে বিরাট পরিবর্তন হয়ে গেছে এবং আমাদের গাড়ির চাহিদা এখন সর্বোত্তম অবস্থায় আছে।”

তবে রাস্তা থেকে পেট্রোল-ডিজেলচালিত গাড়ি বিদায় করতে হলে বৈদ্যুতিক গাড়িকে আরো কিছু কাজ করতে হবে।

একটা হলো, সহজে এবং সস্তায় যে কোন জায়গায় গাড়ি চার্জ করার সুবিধা।

এর জন্য সময় এবং বিনিয়োগ দরকার হবে। সেটা অবশ্যই হয়ে যাবে, ঠিক যেভাবে এক শতাব্দী আগে পথে পথে গাড়িতে তেল ভরার পেট্রোলপাম্প গড়ে উঠেছিল।

এর পরও যদি বৈদ্যুতিক গাড়ির ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার মনে সন্দেহ থাকে – তাহলে বলবো, আপনি নিজেই একবার একটি ইলেকট্রিক গাড়ি পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়ে দেখুন না!

অনেক গাড়ি বিক্রেতাই এখন টেস্ট-ড্রাইভের সুযোগ দিচ্ছে।

হয়তো কুয়েন্টিন উইলসনের মত আপনিও উপলব্ধি করবেন -মোটরিংএর ভবিষ্যতের অংশ হতে ইচ্ছে হচ্ছে আপনারও।

ভিডিওর ক্যাপশান,স্বামীর চেয়েও বেশি আয় মোটর মেকানিক রাব্বি আপার

বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com