নেপালের কাঠমান্ডুভিত্তিক ট্যুর অপারেটর ‘সোশ্যাল ট্যুরস’-এর প্রতিষ্ঠাতা রাজ গ্যাওয়ালি। প্রায় ২০ বছরের ক্যারিয়ারে এই প্রথম ভিন্ন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাঁকে। সম্প্রতি আমেরিকান এক পর্যটক নেপাল ভ্রমণ পুরোপুরি নিশ্চিত করেও তা বাতিল করে দেন। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় বিদেশ ভ্রমণ তাঁর জন্য নিরাপদ না-ও হতে পারে বলে রাজ গ্যাওয়ালিকে জানিয়েছেন সেই পর্যটক।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর অনেক আমেরিকান এখন বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে উদ্বিগ্ন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নতুন শুল্কনীতি আর বিরূপ আচরণের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে এখন অনীহা দেখাচ্ছেন আন্তর্জাতিক পর্যটকেরা।
ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ ও ব্লগার সিয়েরা ম্যালোন বলেছেন, ‘ট্রাম্পের এর আগের মেয়াদে বিদেশে ঘুরতে বিব্রত হতাম। কিন্তু এবার সত্যিই ভয় কাজ করছে। এখন মনে হচ্ছে, আমেরিকান হিসেবে বিশ্ব আমাদের আলাদা করে দেখছে।’
একটি ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, সাতটি প্রধান ইউরোপীয় দেশে আমেরিকার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব ৬ থেকে ২৮ পয়েন্ট পর্যন্ত কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি, ইউক্রেন ইস্যুতে ভূমিকা এবং কানাডা ও গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকির মতো বিভিন্ন ঘটনা ইউরোপসহ বিশ্বজুড়ে আমেরিকানদের প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণপ্রেমী স্কুল প্রশাসক লিসা ভ্যান্ডারভিন বলেছেন, ‘বিদেশে গেলে এখন মনে হয়, একজন মার্কিন নাগরিক হিসেবে সবাই আমাকে বাঁকা চোখে দেখছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সব নাগরিক ট্রাম্পের সমর্থক নন। ভ্রমণকারীরা চাইছেন, বিশ্ববাসী যেন বুঝতে পারে, আমেরিকানদের মধ্যেও ভিন্নমত আছে এবং তারাও বিশ্বশান্তির পক্ষে। ‘ট্যুরিজম কেয়ার্স’-এর জেসিকা ফ্লোরেন্স জানিয়েছেন, সহমর্মিতা থাকলে অনেক নেতিবাচক বিষয় দূর হয়ে যেতে পারে। অনেকে হয়তো আমেরিকানদের দেখলে এখন রেগে যাবে। জেসিকা বলেন, ‘কিন্তু আমি মনে করি, আমাদের আচরণে যদি সহমর্মিতা থাকে, তাহলে বিশ্ববাসীর কাছে মার্কিন নাগরিকদের ভাবমূর্তি ইতিবাচক হতে পারে।’
একদিকে যেমন মার্কিনরা বিদেশে ভ্রমণ নিয়ে আশঙ্কায় আছেন, অন্যদিকে তাঁদের দেশ ভ্রমণেও তৈরি হয়েছে অনীহা। বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা কমছে যুক্তরাষ্ট্রে। ‘ট্যুরিজম ইকোনমিকস’-এর তথ্য অনুযায়ী,
এ বছর ৫ দশমিক ১ শতাংশ পর্যটক কমবে দেশটিতে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি হবে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার।
প্রায় প্রতিটি দেশের জন্য ভ্রমণ আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। কিন্তু কোনো দেশ যদি ভ্রমণের বিষয়ে সহযোগিতামূলক না হয়, তাহলে তার ফল দিন দিন নেতিবাচক হতে থাকে। পর্যটকেরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি দেশটির জন্য ভবিষ্যতে খারাপ কিছুই বয়ে আনতে পারে। আর দেশটির নাগরিকেরা আরও অনিরাপদ বোধ করবেন।
সূত্র: সিএনএন