শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:৩২ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি: দায়িত্ব কার?

  • আপডেট সময় রবিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২১

বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি নিয়ে সরকার বা রাজনীতিবিদদের কতোটা ভাবনা-চিন্তা জানি না। সব সরকারের আমলেই দেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক সুনামের কথা বলা হয়ে থাকে। আমাদের যৌবনে সেনানায়ক এরশাদের আমলে টিভিতে একটা অনুষ্ঠান হতো। নাম ছিল ‘সম্পর্কের নয়া দিগন্ত’ টাইপের কিছু। তখন এতোগুলো চ্যানেল বা ডিজিটাল জানালার কিছুই ছিল না। বাধ্য হয়ে বিটিভির অনুষ্ঠান গিলতে হতো সবাইকে। সম্পর্কের সে নয়াদিগন্ত, যে আসলে একটা পাতিকুয়ো সেটা বুঝতে পারলেও, টুঁ শব্দ করার সুযোগ ছিল না কারো। মজার ব্যাপার এই এরশাদ আমলে রোমানিয়া দেশটির একনায়ক চসেস্কু ছিলেন এরশাদের চাইতেই বেহায়া। ওই লোক বাংলাদেশে এসেছিলেন কিংবা এরশাদ গিয়েছিলেন রোমানিয়া (এত বছর পর আর স্মৃতিতে পুরোটা নেই)। সে কী কাণ্ড! মনে হচ্ছিল দুনিয়ায় আর কোন দেশ নাই। উন্নয়নের সে অংশীদারিত্বের রসালো গল্প শেষ না হতেই, চসেস্কু ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল।  তার হাত রঞ্জিত ছিল শত শত বিদ্রোহীর রক্তে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর স্ত্রী এলেনাসহ তাকে দেওয়া হয়েছিল মৃত্যুদণ্ড। পরদিনই পাল্টে গেল বাংলাদেশের সরকার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার ভাষা।

এই কাহিনী জিয়াউর রহমানের আমলেও দেখা গেছে। অতিরিক্ত যাত্রী বহর নিয়ে জার্মাানি সফরের সময় সে দেশের সরকারের উষ্মা প্রকাশ চেপে যাওয়া দেশি মিডিয়া অপমানের কথা বলেনি। খালেদা জিয়ার আমলেও আমরা জেনেছিলাম মধ্যপ্রাচ্য, পাকিস্তান এবং চীন তাদের এমনই দোস্ত যে, খালেদা জিয়ার কিছু হলে তারা বসে থাকবে না। তারা এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলেও অবাক হবার কিছু নাই। কিন্তু তেমন কিছুই দেখলাম না।

আওয়ামী লীগের আমলে ব্যতিক্রম নাই। এটা স্বীকার করতেই হবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কারণে দেশের ইমেজ আজ অনেক উঁচুতে। সাথে আছে আমাদের অর্থনৈতিক প্রগতি, ক্রিকেটসহ বেশকিছু বিষয়।  আমাদের প্রবাসী জনগোষ্ঠীর মেধা আর শ্রমের কথাও উল্লেখ করতে হয়। সাকিব আল হাসানকে চেনেন না এমন ক্রিকেটপ্রেমী বিরল। ২০১৯ সালে আমি যখন দেশে যাই ক্রিকেট পাগল এক ভারতীয় যুবক সহকর্মী যাকে আমি পছন্দ করি, তার আব্দার ছিলো রীতিমতো বিস্ময়ের। সে আমার কাছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জার্সি চেয়েছিল। আনন্দের সাথে সেটা নিয়ে আসি আমি। ভাবছিলাম যে ভারতের নাক উঁচু ক্রিকেট আর কিছু ক্রিকেটার বিশ্বাসই করতে চান না, আমরা বাঘের মতো; অথচ তাদেরই এক যুবক চাইছে বাংলাদেশের জার্সি। এই মনোভাব পাকিস্তানিদের কারো কারো বেলায়ও আছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া পাকিস্তানের মানুষ বুঝে গেছে মাঠে জেতালেও, ইমরান খান দেশ শাসনে জেতাতে পারছেন না ।

আমার একটা প্রশ্ন হলো, যেসব ফোলানো-ফাঁপানো গল্প বর্তমান সরকারি দলের কেউ কেউ বলেন, তার প্রতি মানুষের আস্থা বা বিশ্বাস কি আসলেই ততোটা আছে? থাকলে তারা খবরের সময় সরকারি চ্যানেল থেকে সরে যান কেন? কেন তারা সরকারি চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলো দেখেন না? আবারো বলছি, শেখ হাসিনার ইমেজ বা তার কারণে দেশের যে ভাবমূর্তি, তার কথা আলাদা। বলছি, গড়পরতা কাহিনীগুলোর কথা। এসব প্রচার বা হালকা তোষামোদী মূলত একধরনের সুবিধা নেওয়ার পথ খোলা রাখা। এরা যদি সত্যি যা বলেন, তা নিজেরাও বিশ্বাস করতেন বা করেন, তাহলে আজকের বাংলাদেশের যাবতীয় উন্নয়ন নিয়ে কটূক্তি করা, দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে শেখ হাসিনাকে অপমান করার জন্য ইউটিউবের মাধ্যমে মাতম করা শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতেন। শুধু তাই না, আসলে এ ধরনের অপশক্তি তখন মাথাচাড়া দেওয়ারই সুযোগ পেত না। গত কিছুদিন থেকে দেখছি, বলা উচিৎ বছর ধরে দেখছি-  সোশাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটে শেখ হাসিনার উন্নয়ন তো বটেই, পঁচাত্তরের ট্র্যাজেডি, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি নিয়ে চলছে এক অদ্ভুত নেগেটিভ খেলাধুলা।

এগুলোর পেছনে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ কাজ করে। কী এদের উদ্দেশ্য, কী তাদের চাওয়া বা কোথায় টাকা পয়সার জোগান সে কাহিনী সরকারি দলের অনেকেরই অজানা নয়। কিন্তু বন্ধ করে দেওয়ার কোন উদ্যোগ নাই। আমি সমালোচনা বা আলোচনার বিরুদ্ধে কিছু বলছি না। বরং সঠিক, যোগ্য, ন্যায্য সমালোচনা জরুরী। এককেন্দ্রিক কোনওকিছুই বেশি সময় টেকে না। আরও বিপদের বিষয় এই অচলায়তন একদিন এমনভাবে ভেঙে পড়ে, তখন সাধারণ মানুষও বিপদ এড়াতে পারেন না। ফলে অবরুদ্ধতার নিরসন, স্তাবকতার অবসান জরুরী। কিন্তু

সোশাল মিডিয়া বা ইউটিউবে অপপ্রচার চালানো যে শক্তির কথা বলছি তারা ভিন্ন মেরুর লোক। এরা এখনো লালন করে পাকিস্তানি ভাবধারা। এদের মনে মৌলবাদ, বাইরে আধুনিকতা। অবাক হবার মতো বিষয় যেটা এগুলোর সমর্থক এবং মদদদাতা হিসেবে তথাকথিত প্রগতির সার্টিফিকেটধারীরাও রয়েছেন। তারা আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনার কোন কিছুই মানতে চায় না। এদের মনস্তত্ব অদভুত। গাইবে রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের গান, শুনবে জয় গোস্বামীর কবিতা, পড়বে আধুনিক সাহিত্য- আর মনে মনে সমর্থন করবে এসব উল্টাপাল্টা ভিত্তিহীন ইউটিউব গুজব। মুখরোচক মনে হলেও এগুলোর পরতে পরতে দেশ বিরোধিতা।

আমাদের আপত্তিটা সেখানে। সরকারের বিরোধিতা কেন হবে না? কেন সমালোচনা হবে না তাদের কাজের? তাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়াই তো আসলে দরকারি। এটাও ঠিক তারা কথা শোনেন না। শোনার সময়ও নাই তাদের। আত্মতুষ্ট দলীয় লোকজন দেশের মানুষের মুখ বন্ধ রাখতে পারলেও, দেশের বাইরে চলছে প্রচণ্ড বিরোধিতা, প্রপাগান্ডা। এটা অশনিসংকেত। যারা ভাবছেন, এদের কথাবার্তা পাগলের প্রলাপ তারা ভুল করছেন। হয় তাদের দুর্বলতা নয়তো তাদের আদর্শিক সংকটের কারণে তারা এর ভয়াবহতা বুঝতে পারছেন না। সাথে আছে সুযোগ-সুবিধা আর তেলের সাগরে ডুবে থাকা। এসব কিছু ছাপিয়ে চোখ রাখলে বোঝা সম্ভব বিদেশে বাংলাদেশের শেকড় ও অস্তিত্ব নিয়ে খেলছে একদল। নিরাপদ বিদেশি মাটিতে ধীরে ধীরে একাট্টা হচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিরা। কিভাবে এসব নষ্ট প্রক্রিয়া জনপ্রিয় হয়, সেটা বোঝার পরও চোখ বন্ধ করে থাকা আত্মহত্যার সামিল।

এসব তথাকথিত সেলিব্রেটিরা পঁচাত্তরের ট্র্যাজেডির পটভূমি বোঝে না। ইতিহাস জানে না। একের পর এক মনগড়া কথা আর ভুলভাল ইতিহাস বানিয়ে বলে আর লাইকে লাইকে ভরে ওঠে তাদের আনন্দ জগত। এমন একটা অবস্থা, কোনওভাবে শেখ হাসিনা, ভারত আর পঁচাত্তর- এ তিন বিষয়ে বানোয়াট গল্প বা গুজব ছড়ালেই হিট। এগুলো একদিনে হয়নি। সরকার ও মুক্তিযুদ্ধের শক্তি নামে পরিচিতদের নিষ্ক্রিয়তা আর তাদের সুবিধাভোগী চরিত্রের কারণে নির্জীব হয়ে পড়া উদ্যোগ এ জন্য দায়ী। যাদের হাতে ক্ষমতা রয়েছে, যাদের প্রতি কথায় কোটি কোটি হাজার কোটির গল্প- তারা এসব বন্ধের কৌশল জানলেও ভাবছে- আরে দূর আমার  কী কচু হবে?

যখন হবে তখন সামলানোর সময় পাবেন না। আমরা ভাবছি আমাদের জন্মভূমি, ইতিহাস আর মানুষের কথা। যা তার স্বাধীনতার ঊষালগ্ন থেকে প্রতি পদে এসব ছদ্মবেশী দালালদের দ্বারা নিগৃহীত। আজ আবারো বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি কিংবা ইমেজ যখন প্রশ্নের সম্মুখীন,  তখন অহেতুক আত্মসন্তুষ্টি আর স্তাবকতা মূল্যহীন । দরকারী কাজ করে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের সম্মান বজায় রাখা, সমুন্নত রাখাই এখন কাজের কাজ।

সিডনি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com