শেহরিন আবেদের পছন্দ সব ধরণের খেলা। বিনোদন বলতে তিনি খেলার চ্যানেলগুলোই দেখেন।
বাংলাদেশ সময় গভীর রাতে লা লিগা বা প্রিমিয়ার লীগের খেলা মিস করেন না তিনি। আজ রাতেও রয়েছে খেলা কিন্তু খেলা দেখার চ্যানেল নেই।
শেহরিন আবেদ বলছেন বিষয়টা দুঃখজনক।
“লা লিগার ফ্যান আমি। কিন্তু অন্য খেলা গুলো দেখি, টপ ফাইভ লীগের খেলার খোঁজখবর রাখি। সেক্ষেত্রে আমাদের জন্য অনেক দুর্ভাগ্যজনক যে চ্যানেলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে”।
“ফেসবুকে ফুটবল ফ্যানদের আমাদের কয়েকটা গ্রুপ আছে। সেখানে অনেকে হতাশা প্রকাশ করছে। যারা আমরা খেলা দেখি সব রকম তাদের জন্য ব্যাপারটা সমস্যা হয়ে গেছে।”
বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনসহ অনুষ্ঠান প্রচার করে- এমন সব বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার ১রা অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে বন্ধ করে দিয়েছে কেবল অপারেটররা।
বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে সম্প্রচার করা যাবে না – বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এসব চ্যানেলের দেশীয় পরিবেশকদের।
বাংলাদেশে বিদেশি টিভি চ্যানেল সম্প্রচার সংক্রান্ত একটি পুরনো আইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে শুক্রবার থেকে দেশটিতে সব রকম বিদেশি টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়ার পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন দেশটির অনেক টিভি দর্শক।
আইনটিতে বলা আছে, যেসব বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়, সেসব চ্যানেল বাংলাদেশে প্রদর্শন করা যাবে না, এই নিয়ম কার্যকর করতে গিয়ে শুক্রবার বিবিসি-সিএনএনসহ সব আন্তর্জাতিক খবরের চ্যানেল, খেলার চ্যানেল এবং ভারতীয় বিনোদন চ্যানেলগুলোসহ সব বিদেশি চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দেয় কেবল অপারেটররা, যা এখন পর্যন্ত বন্ধই রয়েছে।
তিনি বলেন “সারাদিন কাজের পর আমরা এক ঘণ্টায় দুইটা নাটক দেখি। এটাই বিনোদন। আমাদের সামনে বিকল্প ভালো কিছু আনতে হবে। আমরা সেটা দেখবো। এখন কোন কিছু বন্ধ করে দেয়া সমাধান হতে পারে না”
বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশের আইনে রয়েছে বিদেশি বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না।
একই সঙ্গে বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেখানোর কারণে কয়েক হাজার কোটি টাকা বিদেশি চ্যানেলের কাছে যাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এদিকে চ্যানেল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই নিয়ে নানা মন্তব্য চলছে। অনেকে স্বাগত জানালেও, বাংলাদেশের চ্যানেলের অনুষ্ঠানের মান এবং বিষয়বস্তু যে তাদের বিনোদনের চাহিদা মেটাতে পারে না সেটাও উল্লেখ করছেন।
গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা বলছেন সরকার বিদেশী চ্যানেলে বিজ্ঞাপন ছাড়া অনুষ্ঠান বা ক্লিন ফিডের যে দাবি জানাচ্ছে সেটা পেতে হলে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউ-ল্যাবের শিক্ষক অধ্যাপক সুমন রহমান এর কারণ ব্যাখ্যা করছেন।
“বিজ্ঞাপনগুলো বিদেশি চ্যানেল না পেলে সেটা যে লোকাল টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে চলে আসবে বিষয়টা এত সহজ না। কারণ লোকাল টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিকে সেই পরিমাণ কেপেবল হতে হবে”।
তিনি বলেন “এতকাল বিদেশি চ্যানেলগুলো যে কন্টেন্ট বানিয়েছে সেই কন্টেন্ট বানাতে হবে তাদের। এটা বানানোর সক্ষমতা যখন তারা অর্জন করবে তখনি কেবল বিজ্ঞাপনগুলো সেখানে যাবে। দ্যাটস এ লং ওয়ে টু গো। এখানে অনেক গুলো যদি এবং কিন্তু আছে। ফলে এখনি চ্যানেলগুলো বন্ধ করে ফেলার ফলে রাতারাতি লাভবান হয়ে যাবো এটা ভাবার কোন কারণ নেই।”
এদিকে কেবল অপারেটরদের এসোসিয়েশন বলছে, সরকারের পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত চ্যানেলগুলো বন্ধ থাকবে।এসোসিয়েশনের নেতা আনোয়ার পারভেজ জানাচ্ছেন শুক্রবার মোবাইল কোর্ট অভিযান চালালেও আজ শনিবার কোথাও মোবাইল কোর্ট অভিযান চালাচ্ছে না বলে তিনি জানান।
বিবিসি বাংলা