বাড়ির কাছে ‘সুইজারল্যান্ড’

উঁচু উঁচু পাহাড়। তার চূড়ায় পেজাতুলা মেঘ। শান্ত চারপাশ। পাহাড়ের বুকে চিরে বয়ে ঝরছে ঝরনাধারা। পাদদেশে আঁকাবাঁকা সড়ক। এমন রূপে মোহিত না হয়ে উপায় কী! ভাবছেন এ হয়তো সুইজারল্যান্ড। ঠিকই ভেবেছেন সুইজারল্যান্ড তবে ইউরোপের নয় ভারতের।  হ্যাঁ বলছিলাম মেঘালয়ের কথা।

এক স্বর্গীয় আনন্দ যেন টিকরে পড়ে মেঘালয়ে। বাংলাদেশ থেকে এতো কাছে, কম খরচে ও সহজে, অল্প সময়ে যখন প্রকৃতির এমন নির্মল হাতছানি পাচ্ছেন তবে দেরি কেন ভ্রমণে? ঘুরে আসুন সিলেটের সীমান্ত হয়ে মেঘালয়ে।

মেঘালয় ভ্রমণে কী কী দরকার

সাধারণত বাংলাদেশ থেকে যেকোনো দেশে যেতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন পাসপোর্ট এবং সে দেশের ভিসা। এই দুটোই মৌলিক। পাসপোর্ট থাকলে বিভিন্ন  নিয়ম মেনে ভারতের ভ্রমণ ভিসা সংগ্রহ করে নিতে হবে। এরপর ডলার এন্ডোর্স করে বা মুদ্রা সংগ্রহ করে নিলেন। মেঘালয় যেহেতু শীতাঞ্চল, পাহাড়বেষ্টিত, তাই পোশাক নিতে হবে সে বিবেচনা করেই। ব্যাকপ্যাক-ব্যাগেজ যতো হালকা নেওয়া যায় উত্তম। ভালো ক্যামেরা কিংবা মুঠোফোনে ভালো ক্যামেরা থাকলে ভালো। ফোনের চার্জের জন্য সাথে নিতে হবে পাওয়ারব্যাংক। সবকিছু প্রস্তুত করে যাত্রার জন্য বেরিয়ে পড়ুন।

ঢাকা থেকে কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে দুদিকে মেঘালয়ে যাওয়া যায়। প্রথমটা হলো ঢাকা থেকে শেরপুর। সেখান নাকুগাঁও সীমান্ত পেরিয়ে তুরা হয়ে মেঘালয়ে। এটা অবশ্য দীর্ঘ পথ।সবচেয়ে সহজ পথ হলো ঢাকা থেকে সিলেট সীমান্ত পার হয়ে মেঘালয়ে যাওয়া।সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়ে মেঘালয় রাজ্যে প্রবেশ করাটা সবচেয়ে সহজ উপায়। প্রথমে বাস বা ট্রেনে সিলেট যেতে পারেন। সিলেট শহর থেকে বাসে বা সিএনজি অটোরিকশায় করে যেতে হবে তামাবিল সীমান্ত চেকপোস্ট। সেখান থেকে বর্ডার চেকিংয়ের পর সীমান্ত পার হলেই মেঘালয়। ওপার থেকে ছোট যেকোনো পরিবহন নিয়ে চরে যেতে পারেন রাজধানী শিলংয়ের দিকে। কিংবা থেকে যেতে পারেন চেরাপুঞ্জি। আবার ঢাকা থেকে সরাসরি বাসও চালু হয়েছে ২০১৮ সালে। ঢাকা থেকে বাসটি সিলেট হয়ে মেঘালয়ের রাজধানী শিলং হয়ে  আসামের রাজধানী গৌহাটি যায়। প্রতি বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় কমলাপুর বিআরটিসি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল থেকে বাসটি ছেড়ে যায়। শুক্রবার সকাল ১১টায় পৌঁছায় শিলং পুলিশ বাজার।

থাকার ব্যবস্থা কেমন

মেঘালয় সত্যিকার অর্থে দুর্দান্ত একটি রাজ্য। এখানে পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশ নয়। পাওয়া যায় ইউরোপীয় আমেজ অনেকটাই। থাকার রয়েছে দারুণ সব ব্যবস্থা।রাজধানী শিলংয়ের বড়বাজার ও পুলিশবাজারে  পর্যটকদের থাকার সুব্যবস্থা য়েছে। কম খরচে ভালো আবাসন বলা চলে। পুলিশবাজার থেকে মেঘালয়ে ভ্রমণের প্রায় সব দর্শনীয় স্থান কাছাকাছি বলে অধিকাংশ পর্যটক এখানকার হোটেলে উঠেন। এখানকার হোটেল কক্ষগুলো দিনপ্রতি  ৭০০ থেকে ১০ হাজার রুপির মধ্যে পাওয়া যায়। হোটেল ছাড়াও পারিবারিক রিসপোর্টও আছে মেঘালয়ে। আগে থেকে একটু খোঁজ খবর নিলে তা সহজেই পেয়ে যাবেন।

কী খাবেন

খাবারের ক্ষেত্রে শিলং বেশ ভালো বলা যায়। বাঙালিয়ানা সব খাবারই মেলে।মাছ, মাংস, লুচিসহ নানা দেশীয় খাবার-দাবার পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে ইন্ডিয়ান ও চায়নিজ খাবার পাওয়া যায়। এখানে ঘুরতে এসে পর্যটকেরা খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী কিছু খাবার, আনারস ও নানা ফল পছন্দ করে থাকেন।

কোথায় ঘুরবেন

মেঘালয়ে ভ্রমণের দর্শনীয় স্থানের অভাব নেই। যেদিকে চোখ যায় নয়নাভিরাম দৃশ্য আর দৃশ্য। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়েছে মেঘালয়কে। তবে এর মধ্যে বিশেষ কিছু জায়গায় ঘুরে আসতে পারেন মেঘালয়ের। এর মধ্যে ঝরনার মধ্যে রয়েছে উমক্রেম ফলস, টাইগার ফলস, বরহিল ফলস, যেটি পান্থুমাই ঝরনা নামে পরিচিত। এগুলোতে কোনো প্রবেশ ফি নেই। নোহওেটে লিভিং রুট ব্রিজ, এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম মাওলিংলং ভিলেজ, চেরাপুঞ্জির বিভিন্ন স্থান যেমন উচ্চতর ঝরনা, রাম কৃষ্ণ মিশন আশ্রম এবং স্কুল, মাসমাই কেভ, নোহকালিকাই ফলস যেটি এশিয়ার ২য় বৃহৎ ঝরনা, সেভেন সিস্টার্স ফলস, ইকো পার্ক, ওয়াহকাবা ফলস প্রভৃতি দর্শনীয় জায়গায় ঘুরে এলে প্রশান্তিতে ভরে যাবে মন।

স্পটগুলোতে কিসে করে ঘুরবেন

সাধারণত পুলিশবাজার মোড় থেকেই সকল দর্শনীয় জায়গায় যাওয়ার গাড়ি পাওয়া যায়।লোকাল যেমন আছে তেমনি প্রাইভেট গাড়িও আছে। আছে  মেঘালয় টুরিজম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের পরিবহন ব্যবস্থা। এখান থেকে প্রতিদিন বাসে করে কম খরচে পর্যটকদের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরিয়ে দেখানো হয়। তবে এর জন্য আপনাকে আগে থেকে টিকেট কেটে রাখতে হবে। সবকিছু দেখেশোনে, যাচাই করে নিতে হবে। মেঘালয়ের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণের জন্য টুরিস্ট গাইড রাখতে পারলে দ্রুত ঘুরতে সহজ হবে। গাইডরা নির্বিঘ্নে ঘুরিয়ে দেখাবেন আপনাকে। তো আর দেরি কেন বেরিয়ে পড়ুন মেঘেদের রাজ্যে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: